ভোলার লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়ন ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নাসিদা বেগম। ১০ বছর আগে দিনমজুর স্বামী ফজলু খাঁর মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে অভাব-অনটনের মধ্যে জীবন কাটে তার। এ সময় কারও কোনো সহযোগিতা ও কাজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ভিক্ষাবৃত্তি।

অভাব-অনটনের সময় স্থানীয় চেয়ারম্যান-সদস্যদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা না পাওয়ার ক্ষোভ থেকে এবার তিনি নিজেই নেমেছেন ভোটযুদ্ধে। সপ্তম ধাপে উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার পদে ‘তালগাছ’ প্রতীকে লড়বেন তিনি। গতবারও তিনি ইউপি সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হন।

নাসিদা বেগম মেম্বার প্রার্থী হওয়ায় তাকে ভিন্ন চোখে দেখছেন কেউ কেউ। একজন ভিক্ষুক হয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় পুরো এলাকায় যেন তাকে নিয়েই আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।

জানা যায়, নাসিদা বেগমের দুই ছেলে স্থানীয়ভাবে দিনমজুরের কাজ করেন আর মেয়েরা ঢাকায় অন্যের বাড়িতে কাজ করছেন। নাসিদা তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তার নিজের ৮ শতাংশ জমির মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের একটি ঘর রয়েছে। যেখানে এক ছেলেকে নিয়ে থাকেন নাসিদা। স্থানীয় বাড়ি ও বাজারে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি জনপ্রতিনিধি হয়ে গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে থাকতে চান। এ জন্যই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। বিজয়ী হলে এলাকার উন্নয়নে স্বচ্ছভাবে কাজ করতে চান নাসিদা।

এলাকাবাসী জানান, আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি সপ্তম ধাপে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকা যেন ভোট উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রার্থীরা ছুটছেন জনগণের কাছে। পিছিয়ে নেই নাসিদা বেগমও। পেশায় ভিক্ষুক হলেও দ্বিতীয়বারের মতো বদরপুর ইউনিয়নে সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ, উঠান বৈঠক আর প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এলাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ভোট চাইছেন তার 'তালগাছ' প্রতীকে।

২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার খোরশেদ বলেন, ভিক্ষুক হয়েও গরিবদের সেবা করতে মেম্বার প্রার্থী হয়েছেন নাসিদা। এলাকায় তার জয়ের পক্ষে সাধারণ মানুষ ব্যাপক প্রচারণা করে যাচ্ছেন। তার পক্ষে কেউ পোস্টার কেউ ব্যানার কেউ কেউ লিফলেট ছাপিয়ে নিজেরাই প্রচার করছেন।

১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার শাজাহান বলেন, নির্বাচনে প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু জয়ের পর আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। নাসিদা বেগমের নিজের কিছু না থাকার পরও দ্বিতীয় বারের মতো গরিব অসহায়দের পাশে থাকার জন্য নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। তিনি কথা দিয়েছেন, নির্বাচনে জয়ী হলে ইউনিয়নের ভিক্ষুকদের উন্নয়নে কাজ করবেন।

নাসিদা বেগম বলেন, সরকার আমাগো গরিবগো লইগা সাহায্য-সহযোগিতা পাঠায়, ইউনিয়নের মেম্বার-চেয়ারম্যানরা সব বেচে-কিনে খায়। আমার অসহায় সময় কেউ কোনো সহযোগিতা করে নাই। তাগো লগে ক্ষেপ (জিদ) কইরা আমি নির্বাচনে দাড়াইছি। জনগণ আমার সাথে আছে। এখন আল্লায় যদি আমার দিকে মুখ তুইলা চায়, তাইলে আমার জয় হইব। নির্বাচনে আমার জয় হলে এলাকার গরিব মানুষের সেবা করব। সকল সাহায্য-সহযোগিতা গরিব অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করমু। তাদের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়ামু, এলাকার উন্নয়ন করমু।

উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা আমির খসরু গাজী বলেন, সপ্তম ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বদরপুর ইউনিয়নে সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ড থেকে নাসিদার সঙ্গে লড়ছেন আরও ৬ প্রার্থী। অন্য প্রার্থীদের মতো তিনিও প্রচারণা চালাচ্ছেন। সব প্রার্থীকেই আমরা সমানভাবে দেখছি। নির্বাচন নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ নেই। আশা করি  সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি সুস্থ ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হবে।

ইমতিয়াজুর রহমান/এনএ