রংপুর বিভাগজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে রংপুর জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজন। গতদিনের তুলনায় বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত কমেছে ২১ শতাংশ।

এর আগের দিন শুক্রবার শনাক্তের হার ছিল ৪৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। সে দিন বিভাগের আট জেলায় ৯৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্ত হয় ৪৩৮ জন। বৃহস্পতিবার শনাক্তের হার ছিল ৪৫ শতাংশ। ওই দিন ৮৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৭৮ জন শনাক্ত হয়। বুধবার ৮০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্ত হয়েছিল ৩৫৯ জন।

শনিবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের আট জেলার ৫৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুরে ৬৮, রংপুরের ২৯, নীলফামারীর ১৪, গাইবান্ধার ১৪, ঠাকুরগাঁওয়ে ৮, লালমনিরহাটের ৪ ও পঞ্চগড়ের ১ জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন।

বিভাগের ৮ জেলার মধ্যে গাইবান্ধায় করোনা শনাক্তের হার ৭৩ দশমিক ৬৮, দিনাজপুরে ৩৮ দশমিক ৮৬, পঞ্চগড়ে ৩৩ দশমিক ৩৩, রংপুরে ২৩ দশমিক ৭১, লালমনিরহাটে ২১ দশমিক ০৫, নীলফামারীতে ১৫ দশমিক ৯০, ঠাকুরগাঁওয়ে ৮ দশমিক ২৫ ও কুড়িগ্রামে শূন্য।

গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১৫ জন। বর্তমানে বিভাগে করোনা আক্রান্ত গুরুত্বর ৫৫ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সংকটাপন্ন ১৪ রোগীকে আইসিইউ-তে রাখা হয়েছে। বাকিদের বাসায় রেখে চিকিৎসা চলছে। পুরো বিভাগজুড়ে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ রয়েছেন ৩ হাজার ৭২৭ জন রোগী।

পরিচালক আরও জানান, রংপুর বিভাগে করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে দিনাজপুরে। এ জেলায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত ১৫ হাজার ৭৬১ এবং ৩৩৩ জন মারা গেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বিভাগীয় জেলা রংপুরে। এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ২৫৬-তে।

এ ছাড়া জেলা হিসেবে সবচেয়ে কম ৬৩ জন মারা গেছে গাইবান্ধায়। এ জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৮৩ জনের। ঠাকুরগাঁওয়ে মৃত্যু ২৫৬ ও শনাক্ত ৮ হাজার ২৮, নীলফামারীতে মৃত্যু ৮৯ ও শনাক্ত ৪ হাজার ৭৪৮, পঞ্চগড়ে মৃত্যু ৮১ ও শনাক্ত ৩ হাজার ৯৮৩, কুড়িগ্রামে মৃত্যু ৬৯ ও শনাক্ত ৪ হাজার ৭৩২ এবং লালমনিরহাট জেলায় মৃত্যু ৬৯ ও আক্রান্ত ২ হাজার ৮৯৮ জন।

তিনি জানান, ২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত বিভাগে মোট ৩ লাখ ১৭ হাজার ১২১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৮ হাজার ৪৮৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আট জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ২৫৫ জনের। এখন পর্যন্ত বিভাগে সুস্থ হয়েছেন ৫৪ হাজার ৭৬২ জন।

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে রংপুর বিভাগের দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট জেলাকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বা রেড জোন বলা হয়েছে। এ ছাড়া ইয়েলো জোন বা মধ্যম ঝুঁকিতে রয়েছে রংপুর, কুড়িগ্রাম ও ঠাকুরগাঁও জেলা। দিন দিন করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে ভারতের কোলঘেঁষা এই বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অধিদফতর।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, গণটিকাসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষকে টিকার আওতায় আনার ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার আগের চেয়ে কমে আসছে। বর্তমানে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন এবং করোনার ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতিতে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। তবে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে জনগণকে সচেতন করতে মুখে মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে মাস্ক সরবরাহ করা অব্যাহত আছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই