চল্লিশোর্ধ্ব আব্দুল লতিফ পেশায় রিকশাচালক। জন্মের ১০ বছর পর হঠাৎ তার বাঁ হাত ফুলতে শুরু করে। দিন দিন তা বাড়তে থাকে। প্রথম দিকে কিছুই বুঝতে পারেননি। পরে জানতে পারেন, তিনি ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগে আক্রান্ত। পাঁচ বছর আগে একবার অস্ত্রোপচার করলেও তা সেরে ওঠেনি। এর মধ্যে কেটে যায় ৩০ বছর। তার বাঁ হাতটি ফুলে ওজন হয় ৩০ কেজি।

দীর্ঘ সময় ধরে অসহ্য যন্ত্রণা সইলেও সম্প্রতি উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন আব্দুল লতিফ। কিন্তু ওষুধসহ আনুষঙ্গিক খরচ বহনের সামর্থ্য না থাকায় চিন্তায় ভেঙে পড়েন রিকশাচালক লতিফের পরিবার। এ অবস্থায় যাবতীয় ব্যয় বহনের আশ্বাস দেন চিকিৎসক।

অবশেষে বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে তার সফল অস্ত্রোপচার হয়। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আনোয়ার হোসেনের তত্ত্বাবধানে একদল চিকিৎসক তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন। এতে ৩০ বছর পর ফাইলেরিয়া আক্রান্ত আব্দুল লতিফের বাঁ হাত হলো ভারমুক্ত।

আব্দুল লতিফ রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর আবাসন এলাকার হবিবর রহমানের ছেলে।

অস্ত্রোপচার শুরুর আগে আব্দুল লতিফ জানান, ছোটবেলায় তার বাঁ হাতে এ রোগ দেখা দেয়। প্রথম দিকে কিছু বুঝতে না পেরে স্থানীয় পল্লিচিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতেন। এভাবে দিন, মাস, বছর যায়, কিন্তু উপশম হয় না। বাড়তে থাকে হাতের পরিধি ও রোগের প্রতিক্রিয়া।

অভাবের সংসার। তাই বেছে নেন রিকশা চালানোর পেশা। একসময় তিনি বিয়ে করেন। বছর পাঁচেক আগে একবার অস্ত্রোপচার করালেও তা সেরে ওঠেনি। উল্টো আরও ফুলে বড় হতে শুরু করে। রিকশা চালাতে তার ভীষণ কষ্ট হয়। অসহ্য যন্ত্রণা সইতে না পেরে বন্ধ করে দেন রিকশা চালানো। তারপর কর্মহীন হয়ে বাড়িতে কাটান পাঁচ বছর।

সম্প্রতি উন্নত চিকিৎসার আশায় রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি হন। চিকিৎসকরা তাকে অস্ত্রোপচারের জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু ওষুধসহ আনুষঙ্গিক খরচ বহনের সামর্থ্য না থাকায় চিন্তায় ভেঙে পড়েন আব্দুল লতিফ। এ অবস্থায় যাবতীয় ব্যয় বহনের কথা জানান সেখানকার চিকিৎসকরা।

লতিফের স্ত্রী বিলকিস বেগম বলেন, হাতোত টাকা না থাকলে চিকিৎসা করামো কেমন করি। হামার অভাব-অনটনের সংসার। ঠিকমতো তিন বেলা খাবার জোটে না। ওই তকনে অপারেশন করার চিন্তা ভাবনা মাথাত কাজ করে নাই। গ্রামোত মানুষের বাড়িত কাজকাম করি ও ধারদেনা করি কোনোমতো সংসার চালাওছি। ডাক্তার স্যাররা বিনা টাকাতে অপারেশন করি দেছে, নাইলে মানুষটাক এই হাতফোলা (ফাইলেরিয়া) রোগের চিন্তাতে মরি গেল হয়।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আনোয়ার হোসেন জানান, অনেকটা অবহেলার কারণে রোগটি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় তার বাঁ হাতটি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের সহযোগিতায় লতিফের সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার চিকিৎসকরা বহন করেছেন। আশা করি লতিফ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাবেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএ