রাজনীতির নামে অপরাজনীতি প্রতিহত করা হবে : পরিকল্পনামন্ত্রী
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ভয় দেখিয়ে রাজনীতির নামে অপরাজনীতি প্রতিহত করা হবে। ভারত বিরোধিতা, মেকি ধর্মপ্রিয়তা অনেক দেখেছি। এসব আর চলবে না। আমরা ধর্মও করব, কর্মও করব।
বৃহস্পতিবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গৃহীত স্কিম’ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ২০ বছর পেছানো হয়েছিল রাষ্ট্রকে। না হয় ১৯৯০ সালেই এসব বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হতো।
তিনি বলেন, যতো শিগগির সম্ভব প্রধানমন্ত্রীকে ভার্চুয়ালি যুক্ত করে এই উড়াল সড়কের কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এই সড়কের নামকরণ হবে ‘শেখ হাসিনা উড়াল সড়ক’। এটি বাস্তবায়ন হলে হাওরাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের দুঃখ শেষ হবে। সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা-ময়মনসিংহের সড়ক যোগাযোগ হবে। রাজধানীর সঙ্গে হাওরবাসীর দূরত্ব কমে যাবে।
বিজ্ঞাপন
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জলাভূমি ও হাওর-বাওর এলাকায় সড়ক করা, সুরক্ষা করা অনেক কঠিন কাজ। সুনামগঞ্জ- নেত্রকোনা যোগাযোগে ‘জলাভূমি এলাকায় শেখ হাসিনা মডেল সড়ক’ হবে। জীববৈচিত্রের সুরক্ষা করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। মায়ের বুক পেরিয়ে যাওয়া যেমন কঠিন, হাওরের বুক ছিঁড়ে প্রকল্প নিয়ে যাওয়াও কঠিন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে- সকল বিভাগকে সমন্বয় করে এই প্রকল্পের কাজ করতে হবে। একটি হিজল খরচও যেন কাটা না হয়। মাছ চলাচলে যেন কোনো বাধা না হয়। একটি পানকৌড়ি যেন উড়তে, বসতে বাধাপ্রাপ্ত না হয়। প্রকল্পের দুই দিকে জাতির জনকের প্রতিকৃতি থাকবে।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভার শুরুতেই প্রকল্প পরিচালক গোলাম মওলা প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
পরে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান হোসাইন, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখ্ত, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল, জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ, ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুকন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সফর উদ্দিন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি রবিউল লেইস রোকেস, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম শামীম, সাংবাদিক আইনুল ইসলাম বাবলু, পঙ্কজ দে, খলিল রহমান, জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অমল কর, ধর্শপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বিলকিস, সাংবাদিক শামস শামীম, বিন্দু তালুকদার, হিমাদ্রী শেখর ভদ্র, ইউপি চেয়ারম্যান সঞ্জয় রায় চৌধুরী, ফরহাদ আহমদ প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) ‘হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’ অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং সেতু বিভাগকে সমন্বয় করতে একনেক সভায় নির্দেশনা দিয়েছেন। ২০২৫ সালের জুনে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। চলতি বছরে প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু হবে।
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা এবং নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলাজুড়ে এ প্রকল্পের কাজ হবে। উড়াল সড়ক শুরু হবে জামালগঞ্জের সাচনা এলাকা থেকে। এরপর উপজেলার কাজীরগাঁও হয়ে ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী, ধর্মপাশা বাজার, ধর্মপাশার আলোকদিয়া হয়ে বারহাট্টা উপজেলার গোপালপুরে সড়কে গিয়ে যুক্ত হবে। এটিই প্রকল্পের মূল সড়ক, যার দৈর্ঘ্য হবে ২৮ কিলোমিটার।
এই ২৮ কিলোমিটারের মধ্যে উড়ালসড়ক হবে ১০ দশমিক ৮১ কিলোমিটার। এ সড়কের বাকিটুকু হবে সব মৌসুমে যাতায়াতের সড়ক। উড়ালসড়ক যাবে গ্রামের পাশ দিয়ে। সড়কের প্রস্থ হবে ৩০ মিটার। দৃষ্টিনন্দন সড়কের বিভিন্ন স্থানে পর্যটকদের জন্য সাতটি দোতলা টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে এক কিলোমিটার পরপর সড়কের পাশেই পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানো এবং যানবাহন রাখার বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। যেখানে সম্ভব সড়কের দুই পাশে হিজল ও করচগাছ লাগানো হবে। হাওরে প্রাণ-প্রকৃতির বিষয়টি মাথায় রেখে উন্নত বিশ্বের আদলে থাকবে শব্দ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা।
মূল সড়ক ছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় সব মৌসুমে যাতায়াতের সুবিধাসহ উপজেলা পর্যায়ে সড়ক হবে ৯৭ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার, ইউনিয়ন পর্যায়ে সড়ক হবে ২০ দশমিক ২৭ কিলোমিটার, উপজেলায় সড়ক (ডুবন্ত) ১৬ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার, ইউনিয়ন ও গ্রামপর্যায়ে সড়ক (ডুবন্ত) হবে ২২ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার। ডুবন্ত বা সাবমার্সিবল সড়কে মানুষ ও যানবাহন চলাচল করবে শুকনা মৌসুমে। বর্ষায় এসব সড়ক থাকবে পানির নিচে। এ ছাড়া ৫৭টি সেতু ও ১১৮টি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। যার মোট দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৬৮৮ কিলোমিটার। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সুরমা নদীর জামালগঞ্জ-সাচনা বাজার এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। এ উড়াল সড়ক হলে সুনামগঞ্জের মানুষ নেত্রকোনা হয়ে সাড়ে চার ঘণ্টায় ঢাকায় যেতে পারবে।
সাইদুর রহমান আসাদ/আরএআর