‘আমার সব লইয়া গেছেরে বাবা, আমার কেউ নাইরে’
‘আমার টাকা-পয়সা সব লইয়া গেছে বাবা, আমরা গরিব মানুষ। আমার মাইয়াডার ইজ্জত শ্যাষ, আমার কেউ নাইরে বাবা, আমার সব লইয়া গেছেরে বাবা। আমার যা জিনিস, টাকা-পয়সাডি একটু উদ্ধার কইরা দেরে বাবা।’
বুধবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এভাবেই নিজের সর্বস্ব হারিয়ে অশ্রু ভেজা চোখে কথাগুলো বলছিলেন বৃদ্ধা রাবেয়া বিবি (৫০)।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, ভোলা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাবেয়া বিবি। তিনি মেয়ে উম্মে কুলসুম ও দুই বছর বয়সের নাতনিকে নিয়ে ঢাকার গাবতলী বেড়িবাঁধ এলাকায় থাকেন। মেয়ে উম্মে কুলসুম ও তিনি স্থানীয় এক গার্মেন্টসসে চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। রাবেয়া বিবির আরেক মেয়ে থাকেন সৌদি আরবে। বাড়িতে জমি কিনেছেন ঘর তোলার জন্য। প্রবাসী মেয়ের পাঠানো টাকা ও নিজের জমানো টাকা নিয়ে তিনি গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার সদরঘাট থেকে তাসরিফ লঞ্চে ভোলার ইলিশার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাত ১২টায় ইলিশা লঞ্চঘাটে পৌঁছান তারা। ঘাট থেকে একটি ব্যটারিচালিত অটোরিকশায় ১৫০ ভাড়ায় নিজ বাড়ির পথে রওনা দেন। ইলিশা ঘাট থেকে কিছুদূর আসার পরে ব্যারিস্টার কাচারি নামক স্থানে এক দল দুর্বৃত্তের কবলে পড়েন তারা।
বৃদ্ধা রাবেয়া বিবি বলেন, দুই মোটরসাইকেলে আসা ছয় ব্যক্তি আমাদের অটোরিকশার গতিরোধ করে চালকের গলায় ছুরি ধরে মারধর করে। একপর্যায়ে দুইজন জোর করে আমার মেয়েকে পাশের বাগানে মধ্যে নিয়ে যায়। বাকিরা আমাদের ব্যাগ হাতিয়ে নেয়। ভ্যাগে বড় মেয়ের পাঠানো ৪০ হাজার টাকা ও ছোট মেয়ে কুলসুম ও আমার জমানো ৩০ হাজার টাকা ছিল। মেয়ের গলার চেইন ও কানের দুল, আমার হাতের বালা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আমরা চিৎকার করলে স্থানীয়রা চলে আসেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
উম্মে কুলসুম বলেন, মাঝ রাস্তায় আমাদের অটোরিকশার গতিরোধ করে আমাকে জোর করের পাশের বাগানে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে। একপর্যায়ে আমার কানের দুল ও গলার চেইন নিয়ে নেয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হই।
এ ঘটনায় থানায় অভিযোগের বিষয়ে তিনি জানান, গতকাল রাতে ঘটনার পরপরই ইলিশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে বিষয়টি জানালে তারা কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে ভোলা সদর থানায় অভিযোগের পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শে রাতেই ভোলা সদর মডেল থানার ডিউটি অফিসার বরাবর বিষয়টি জানানো হয়। পুলিশ তাদের চিকিৎসার জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং বিষয়টি তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠায়। এ ঘটনায় ভোলা সদর মডেল থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে।
তবে ভোলা সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত হোসেন জানান, এ বিষয়ে থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইমতিয়াজুর রহমান/আরএআর