বসন্ত বরণে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে ব্যতিক্রমী আয়োজন
গাছভর্তি পাকা বরই, তার সঙ্গে কাঁঠাল কুঁড়ি ফেটে বেরিয়ে আসা মুছি। পালানের খেতের কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা এনে ঢেঁকিতে বা বাঁশের চোঙ্গায় ছেঁচে ভর্তা খাওয়ার সেই ছোটবেলা এখন শুধুই স্মৃতি। যারা গ্রামে বড় হয়েছেন, বছরের এই সময়টার গল্প করতে করতে অনেকেই ফিরে যান সেই স্মৃতিতে। বরই পেড়ে দলবেঁধে ভর্তা বানিয়ে সবাই মিলে মজা করে খাওয়া ছিল তখন ভালো লাগার একটি কাজ।
ছোটবেলার সেই সময়টা কিছুক্ষণের জন্য ফিরে পেতে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে আয়োজন করা হয় ব্যতিক্রমী এক উৎসবের। ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় যার নাম দেওয়া হয় ‘বরই ছেনা উৎসব’। শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বসন্তকে বরণ করে নিতে কবি ও সংগঠক শামীম আশরাফের উদ্যোগে ব্রহ্মপুত্র পাড়ের ছোট্ট দুটি বরই গাছকে মঞ্চ বানিয়ে আয়োজন করা হয় ব্যতিক্রমী এ উৎসবের।
বিজ্ঞাপন
শিল্পী, সাহিত্যিক, সামাজকর্মী ও সাংবাদিকসহ নানাজনের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে রোদ ঝলমলে দুপুর। সঙ্গে বসন্তের মিষ্টি রোদ আর নদের পাড়ের ঝিরিঝিরি মৃদু বাতাস ছড়ায় অন্যরকম ভালোলাগার পরশ। বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণিপেশার মানুষ ছকেবাঁধা জীবন ছেড়ে অল্প সময়ের জন্য উপভোগ করতে আসেন হারিয়ে যাওয়া সেই শৈশবের আনন্দ।
এরই মধ্যে এক দিকে চলে বসন্ত দিনের কথা, কবিতা এবং সংগীত পরিবেশন। অন্যদিকে চলে অতিথিদের নিয়ে আসা বড়ই, তেঁতুল, কলা, আম, ধনেপাতা দিয়ে জিভে জল আনা বরই ভর্তা খাওয়ার ধুম।
বিজ্ঞাপন
এতে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ছোটবেলায় গাছ থেকে বরই পেড়ে বন্ধুদের নিয়ে ভর্তা করে খাওয়া হতো। সেই অনুভূতিটা আজকে আবারও ফিরে এলো। বসন্ত বরণে এই ভাবনাটা অসাধারণ একটি ভাবনা। যারা বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা করেন সকলেরই প্রয়োজন এই ধরনের ঐতিহ্যকে বড় করে তুলে ধরা।
আয়োজক কবি শামীম আশরাফ বলেন, এটি আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যের একটি প্রবাহ। এই প্রবাহটি বিচ্ছিন্নতার দিকে যাচ্ছে। বরই ভর্তার সঙ্গে বসন্তের যে আবহ, সেটিকে কেন্দ্র করে কিছু প্রাণ একত্রিত করার জন্যই এই আয়োজন। আমরা চেয়েছি আমাদের সংস্কৃতি টিকে থাকুক, গ্রামের সেই ঐতিহ্য টিকে থাকুক।
এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন কবি শামসুল ফয়েজ, কবি ফরিদ আহমদ দুলাল, সংস্কৃতিকর্মী শাহ সাইফুল আলম পান্নু, আনন্দমোহন কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুজাহিদুল হক প্রবাল, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের সহকারী অধ্যাপক মফিজুন নূর খোকা, সমাজকর্মী রফিকুল ইসলাম রতন, কবি শরৎ সেলিম, কবি সালমা বেগ, শিল্পী ঐশী তাজিন আফরিন, সংস্কৃতিকর্মী জিএম সুমন, কবি সানোয়ার রাসেল, কবি নাহিন শিল্পী, সমাজকর্মী আনিছুর রহমান, ক্লিনআপ বাংলাদেশের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান ফয়সাল, কবি অনন্য সাঈদ, অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম মামুন, সংগীত শিল্পী ফেরদৌস, কবি রবিন বরকত উল্লাহ, কবি আশিক রহমান, সংগীত শিল্পী হীরক সিঙ্গার, সঙ্গীত শিল্পী আল আমিন, কবি বিল্লাল মাহমুদ মানিক, কবি আলমাস হোসাইন সাজা, সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আকন্দ, সমাজকর্মী শানু মুক্তা, কথাশিল্পী সাদিয়া জামান, সংস্কৃতিকর্মী নূর-এ জান্নাত জুঁই, কথাশিল্পী রাফিয়া খন্দকার প্রমুখ।
উবায়দুল হক/আরএআর