মাঘের শেষ দিক থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমগাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই মুকুলের মিষ্টি গন্ধে সুবাসিত হবে প্রকৃতি। এ সময় মুকুলের যত্ন না নিলে আমের ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব নয়। তাইতো আমের মুকুল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার চাষিরা।

কৃষি বিভাগ বলছে, সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত জেলার প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। কয়েকদিনের মধ্যেই শতভাগ গাছে মুকুল দেখা দেবে। মুকুল যাতে ঝরে না পড়ে ও পোকার আক্রমণ না হয় সেদিকেই নজর দিচ্ছে কৃষকরা। গাছে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ ও আমবিজ্ঞানীরা। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ গাছেই বের হয়েছে মুকুল। এদিকে কুয়াশার কারণে মুকুলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন আম চাষিরা। তারা বলছেন, কুয়াশায় আমের মুকুল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, আমের মুকুল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কম। কারণ এখনও সব গাছে মুকুল আসেনি। আর পুরোদমে মুকুল আসার সময় শীত কেটে যাবে।

গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের বেলাল বাজার এলাকার আমচাষি জাক্কারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৭ বিঘা জমিতে আমা বাগান কেনা আছে। গাছগুলোর বেশিরভাগেই মুকুল ফুটেছে। সব গাছেই কীটনাশক দিচ্ছি। যাতে পোকার আক্রমণ না হয়। কারণ এই মুহূর্তে পোকার আক্রমণ হলে সব মুকুল শেষ হয়ে যাবে। 

শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা এলাকার আম ব্যবসায়ী জিয়ারুল ইসলাম জানান, এবার তিনটা বাগান কিনেছি। শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাগানে ভালো মুকুল এসেছে। আশা করছি, এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে মুকুল আসবে। গাছে গোধ হরমন জাতীয় কীটনাশক দেওয়া হয়েছে, যাতে মুকুলগুলো নষ্ট না হয়।

সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের চাঁপাই-মহেশপুর গ্রামের আমচাষি আপন রেজা বলেন, কিছু আম গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। এখন গাছের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। বাগানের আগাছা পরিষ্কারসহ পোকা দমনে স্প্রে করা হচ্ছে কীটনাশক। এতে পোকা যেমন দূর হবে, তেমনি গাছে দেখা দেবে স্বাস্থ্যকর মুকুল। এতে করে ফলন ভালো হবে।

আমচাষি তোহরুল ইসলাম বলেন, অধিক মুনাফার আশায় মৌসুমের আগেই বাগানের যত্ন নেওয়া শুরু করা হয়েছে। এখন ২.৫ ইসি ফিডল্যাম, সালফার শাহেন ও ইমিডাক্লোপ্রিড ইমিসাফি ওষুধ স্প্রে করছি। এতে গাছে বেশি মুকুল আসার সম্ভাবনা থাকে। আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলনও ভালো হবে।

শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল খান শামিম বলেন, এই সময়ে আমের মুকুলের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। মুকুল আসার এই সময়ে সাধারণত কুয়াশা ও পোকার আক্রমণ হয় মুকুলে। তবে একটি কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে এই সমস্যা থাকে না। ইনশাআল্লাহ, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কুয়াশা শেষ হবে। এতে মুকুলের ক্ষতির সম্ভাবনা কমবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই খুব দ্রুততার সঙ্গে সবগুলো গাছে মুকুল আসবে। তবে এ সময়ে বৃষ্টি হলে মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব (আম) গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ঢাকা পোস্টকে জানান, মুকুল ফোটার কয়েকদিন পর থেকে পোকার আক্রমণ হয়ে থাকে। এমনকি কুয়াশায় মুকুল পড়ে যায়। তাই কৃষকদের মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক ও ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক প্রয়োগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে পোকার আক্রমণ কমতে শুরু করবে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, সোমবার পর্যন্ত জেলার পাঁচ উপজেলায় প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। কয়েকদিনের মধ্যেই সব গাছে মুকুল ফুটবে। এ সময়ের বিভিন্ন পরিচর্যা নিয়ে আমচাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছে কৃষি বিভাগ। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার পাঁচ উপজেলায় এ বছর প্রায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এসব আমবাগানে প্রায় ৩ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। গত বছর জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আড়াই লাখ মেট্রিক টন এবং তার আগের বছর ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছে। 

জাহাঙ্গীর আলম/এসপি