ফরিদপুরের তালমা-নগরকান্দা আঞ্চলিক সড়কের শশা এলাকায় সেতু সংলগ্ন বড় একটি অংশ দেবে যায় গত জুলাই মাসে। সড়ক বিভাগ ওই সময় দায়সারা সংস্কার করে সড়কটি চালু রাখে। তবে কয়েকমাসের ব্যবধানে সড়কের ওই অংশ আবার ধসে গেছে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

ফরিদপুর সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সড়কটি ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের তালমার মোড় থেকে নগরকান্দা উপজেলা সদর হয়ে জয় বাংলার মোড়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে মিশেছে। সড়কটির দৈর্ঘ ২৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮ মিটার। ফরিদপুর সড়ক বিভাগের মালিকানাধীন যোগাযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলাসহ দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় আসা-যাওয়া করা যায়।

সড়কটি ফরিদপুর জেলা শহর থেকে নগরকান্দা উপজেলা সদর হয়ে চলে গেছে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের জয় বাংলা মোড় পর্যন্ত। এ ছাড়া নগরকান্দা সদর থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কাইলার মোড় হয়ে ঢাকা ও গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুরসহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে যাওয়া যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সড়কটির নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া এলাকায় শশা সেতুর কাছে সড়কের পশ্চিম পাশে অন্তত ৭০ মিটার দৈর্ঘ্য ও তিন মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট অংশ ছয় ফুট গভীরতা নিয়ে দেবে যায়। সড়ক বিভাগ ওই দেবে যাওয়া অংশে বালিভর্তি বস্তা ফেলে, কয়েকটি বাঁশ দিয়ে এবং লাল নিশানা উড়িয়ে তাদের কাজ শেষ করে। কিন্তু সমগ্র এলাকাজুড়ে ছয় ফুট গর্ত ভরাটের কোনো উদ্যোগ নেয়নি তখন। ফলে সেতু সংলগ্ন ওই ৭০ মিটার অংশের ছয় ফুট গভীরতা বিশিষ্ট খাদ থেকেই যায়।

ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত বছর সড়ক বিভাগ যে সংস্কার কাজ করেছিল তা নামমাত্র। তাতে আসলে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ জন্য আবার ধসে পড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া সংস্কারকাজ শেষ হয়ে যাওয়ার সাত মাস পার হয়ে গেলেও, ধসে যাওয়া সড়কের স্থায়ী কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি সড়ক বিভাগ। ফলে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী, ওষুধ, কৃষিপণ্য সরবরাহকারী ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রোবাস, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন এবং রোগী বহনকারী গাড়ি ঝুঁকি নিয়ে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করছে।

ওই পথ দিয়ে চলাচলকারী নগরকান্দার বাসিন্দা রাসেল মাহমুদ (২৪) বলেন, ফরিদপুর শহর থেকে নগরকান্দা সদরে আসার এ রাস্তাটি এই অঞ্চলের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শশা ব্রিজের কাছে প্রায়ই এমন ধসের ঘটনা ঘটে। ওই সড়ক দিয়ে আসলে আতঙ্কে পড়ে যাই।

ওই পথে চলাচলকারী অটোরিকশা চালক কিবরিয়া মোল্লা (৩৪) বলেন, ওই রাস্তার ধসে যাওয়া অংশ যখন আমরা পার হই তখন একটি বাস আসলে সাইড দেওয়া কষ্ট হয়ে যায়। স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ওই অংশের বিড়ম্বনা দিন দিন বাড়ছে।

শশা ব্রিজ নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সীমানায়। ওই ইউপির চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, তালমা-নগরকান্দা সড়কের শশা সেতু সংলগ্ন সড়কের পাশে প্যালাসাইডিং (খাদযুক্ত জায়গা সংরক্ষণ করা) না থাকায় এবং দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি হওয়ার কারণে অতি সহজেই সড়কের কিছু অংশ ধসে গেছে। সড়কের ওই অংশ নিয়ে দুর্ভোগের শেষ নেই। প্রতিনিয়ত দেবে যায়। কাজ করে সড়ক বিভাগ। দুদিন পর আবার ডেবে যায়। এভাবেই চলছে। 

ফরিদপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমরান ফারহান বলেন, গত জুলাই মাসে সড়ক ধসে যাওয়ার পর ধস থামাতে তাৎক্ষণিকভাবে গর্তের মধ্যে বল্লি গেড়ে বালির বস্তা দিয়ে দেবে যাওয়া ঠেকানো হয়েছে। তবে এটি স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। আশা করছি কিছু দিনের মধ্যে সড়কের ধসে যাওয়া স্থানে স্থায়ী সংস্কারের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।

জহির হোসেন/আরআই