দেশের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়ার কার্যক্রম ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। শিক্ষার্থীরা এখন শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্যও সরকারের কাছ থেকে উপবৃত্তি পাচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন উপবৃত্তি প্রদান ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ রাখছে বিশেষ ভূমিকা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ২০২১ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি (এপিএসসি) পরিচালনা করে, যা চলতি বছরের মার্চে প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হয়। শুমারিতে দেখা গেছে, এবার ঝরে পড়ার হার এক লাফে ৩ শতাংশ কমেছে। ঝরে পড়ার হার এখন ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ১৭ দশমিক ২০ শতাংশ।

করোনা মহামারিতে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ছিল আশঙ্কাজনক। সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের আবার বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে সরকারের উপবৃত্তি প্রদান কার্যক্রম। উপবৃত্তির কার্যক্রম একসময় জটিল ও কিছুটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার ছিল। 

এ দৃশ্যটিতে আমূল পরিবর্তন এনেছে ডাক বিভাগের নগদ। এখন যেকোনো জায়গা থেকে খুব সহজেই অভিভাবকেরা তাদের সন্তানের উপবৃত্তির টাকা তুলতে পারেন।  

উপবৃত্তির টাকা তোলার বিষয়ে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বাসিন্দা মো. সাইদুর রহমান বলেন, এখন উপবৃত্তির টাকা নগদ নম্বরে চলে আসে। চাইলেই টাকা যেকোনো জায়গা থেকে তোলা যায়। আগের মতো আর কষ্ট করতে হয় না।      

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে একটি এমএফএস কোম্পানি সরকারি উপবৃত্তির টাকা বিতরণের দায়িত্বে ছিল। বিতরণ পদ্ধতির অস্বচ্ছতা ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে প্রায় এক বছর উপবৃত্তি বিতরণ বন্ধ থাকার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় গত ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে নগদের সঙ্গে চুক্তি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তিন পর্যায়ের তথ্য মিলিয়ে সঠিক ডেটাবেইস তৈরি করার কারণে স্বচ্ছতা যেমন নিশ্চিত হয়েছে, তেমনি সরকারের খরচ এক-তৃতীয়াংশে নামিয়ে এনেছে এ প্রতিষ্ঠানটি।

প্রায় এক বছর বিতরণ বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষার উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ ভাতা নগদের মাধ্যমে পুনরায় চালু করে সাফল্য কুড়িয়েছে সরকার। তালিকাভুক্ত প্রায় দেড় কোটি শিশুর প্রত্যেকের মায়ের মোবাইলে উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার উপরে বিতরণ করেছে নগদ। এতে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের আর কোনো ভোগান্তি পোহাতে হয় না।

উপবৃত্তি বিতরণের বিষয়ে নগদের চিফ বিজনেস অফিসার শেখ আমিনুর রহমান বলেন, দেশের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থায় একটি বিপ্লবের নাম নগদ। এখন পর্যন্ত চার হাজার কোটি টাকার ওপর উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করেছে নগদ।

তিনি জানান, প্রতারণা এড়াতে অভিভাবকদের একটু সচেতন হতে হবে। কারও সঙ্গে ওয়ালেটের পিন নম্বর শেয়ার করা যাবে না। এই বিষয়ে সচেতন হলেই তারা ভোগান্তিতে পড়বেন না। আমরা দিনরাত চেষ্টা করছি কীভাবে মানুষকে আরও সহজে সেবা দেওয়া যায়।

নগদ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি উপবৃত্তি বিতরণ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত চার হাজার কোটি টাকার বেশি উপবৃত্তি বিতরণ করেছে। এর ফলে সরাসরি উপকৃত হয়েছে প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার। যার প্রভাবে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হারও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মুহিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা এখন সরাসরি মোবাইল অ্যাকাউন্টে চলে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীর অভিভাবক যে কোম্পানি পছন্দ করছে, আমরা সেখানে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি। এর ফলে কোম্পানিগুলোর মধ্যে ভালো সেবা দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছে। অর্থের অভাবে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে সরকারের এ কার্যক্রম ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের এ সেবার মান ও পরিধি আরও বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের সহযোগীতা অব্যাহত রাখবে এটাই প্রত্যাশা।

এসআই/আইএসএইচ