পোশাকের ব্র্যান্ড হিসেবে দেশের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে সারা লাইফস্টাইল। সারার সাব-ব্র্যান্ড হিসেবে এখন নতুন করে সাড়া ফেলছে ‘ঢেউ’। যারা কেবল ওয়েস্টার্ন পোশাক বিক্রি করছে। এরই মধ্যে নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ঢেউ ফ্যাশন। সাধ্যের মধ্যে সেরা মানের ওয়েস্টার্ন পোশাক ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে এই ব্র্যান্ডের যাত্রা বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। 

নতুন ব্র্যান্ড, ওয়েস্টার্ন ফ্যাশন, নতুন আঙ্গিকে ব্যবসা শুরুর নানা দিক নিয়ে ঢাকা পোস্ট কথা বলে ঢেউয়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সারাফ সাইয়ারার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত।

ঢাকা পোস্ট : নতুন ব্র্যান্ড ঢেউ সম্পর্কে জানতে চাই। 

সারাফ সাইয়ারা : ওয়েস্টার্ন পোশাক এখন বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয়। নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের জন্য ‘ঢেউ’ একটি আকর্ষণীয় নতুন ওয়েস্টার্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ড। তরুণরা এখন যেহেতু ট্র্যাডিশনাল পোশাকের পাশাপাশি পশ্চিমা পোশাকের দিকে ঝুঁকছে, তাই ঢেউ শুধু ওয়েস্টার্ন পোশাক নিয়ে কাজ করতে এসেছে। সাধ্যের মধ্যে সেরা মানের ওয়েস্টার্ন পোশাক ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেওয়া আমাদের লক্ষ্য।


 
ঢাকা পোস্ট : ব্র্যান্ডের নাম ‘ঢেউ’ রাখার পেছনে বিশেষ কোনো কারণ আছে?

সারাফ সাইয়ারা : বাংলা ঢেউ শব্দের ইংরেজি ওয়েভ। আর এর মানে বোল্ড, সাহসী ও শক্তিশালী। সমুদ্র যেমন এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশকে সংযুক্ত করে, তেমনি ঢেউ ওয়েস্টার্ন পোশাকের সঙ্গে আমাদের প্রজন্মকে কানেক্ট করবে।

ঢাকা পোস্ট : ঢেউ-এ ক্রেতাদের কেমন সাড়া পাচ্ছেন? কোথায় কোথায় আপনাদের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে?

সারাফ সাইয়ারা : যারা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পছন্দ করেন তারাই মূলত আমাদের ক্রেতা। আমরা তাদের কাছে আধুনিক, নতুন ডিজাইনের পোশাকগুলো পৌঁছে দিতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হলো অনেক ভালো কোয়ালিটির পণ্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া, তবে তা তুলনামূলক কম দামে। অন্য যারা ওয়েস্টার্ন ড্রেস বিক্রি করে তাদের প্রাইস অনেক বেশি হয়। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি ভালো মানের পণ্য তুলনামূলক কম দামে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে। অল্প দিনে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমরা যা প্রত্যাশা করেছিলাম, তার চেয়ে অনেক বেশি সাড়া পাচ্ছি।

বর্তমানে সারার সব আউটলেটে ঢেউয়ের আলাদা কর্নার করা হয়েছে। সেখানেই আমাদের ড্রেসগুলো পাওয়া যাচ্ছে। আগামীতে নিজস্ব আউটলেট থাকবে ঢেউয়ের। এছাড়া অনলাইনে আমরা অনেক সাড়া পাচ্ছি। আমাদের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজে আমরা সার্বক্ষণিক অ্যাকটিভ আছি। ক্রেতারা সেখান থেকেও কিনতে পারবেন আমাদের ড্রেসগুলো।

ঢাকা পোস্ট : ঢেউয়ের ক্রেতা আসলে কারা? তাদের জন্য ঢেউয়ের কী অঙ্গীকার?

সারাফ সাইয়ারা : আমাদের টার্গেটিং কাস্টমার হচ্ছে টিনেজার, অ্যাডাল্টস, মডেল। তবে যে কেউ ইচ্ছে করলে আমাদের পোশাক কিনতে পারবে। ওয়েস্টার্ন ড্রেসের বিষয়ে আমরা কিছু গবেষণা করি, তারপর পরিকল্পনা করে মাঠে নেমেছি। ক্রেতাদের মুখে হাসি দেখা, তাদের সর্বোচ্চ ভালো জিনিসটা হাতে তুলে দিতে পারাটাই আমাদের লক্ষ্য। আগে থেকে প্ল্যান ছিল ওয়েস্টার্ন ড্রেস বিষয়ক আমাদের কার্যক্রম নিয়ে। টার্গেট ছিল যে ওয়েস্টার্ন ড্রেস যদি আমরা আনতে পারি তাহলে এটা যেন তুলনামূলক কম দামে হয়। তাহলে সবাই তা কিনতে পারবে। আমাদের লক্ষ্য নিত্য নতুন সব ডিজাইন, ট্রেন্ডের সব পোশাক বাজারে আনা। সেই সঙ্গে ক্রেতাদের চাহিদা জানা, তাদের কাছে থেকে ফিডব্যাক নেওয়া। সবকিছুর সমন্বয় করে পরবর্তী প্রোডাক্টগুলো নিয়ে কাজ করা। আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে সবচেয়ে ভালো মানের ওয়েস্টার্ন ড্রেস ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে চাই, এটাই আমাদের অঙ্গীকার।

ঢাকা পোস্ট : ঢেউয়ের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আপনি। ফ্যাশন হাউজগুলোর পরিচালকদের মধ্যে বলতে গেলে সর্বকনিষ্ঠ। কীভাবে এ ব্যবসায় যুক্ত হলেন?

সারাফ সাইয়ারা : ছোট বেলা থেকে বাবা-মাকে দেখে ব্যবসার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। সারা লাইফস্টাইলে কাজ করেছি আগে। আগেও নিয়মিত অফিসে আসতাম আমি। নানান পোশাকের ডিজাইন, থিম দিতাম, ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করতাম। কাজ করতে করতেই ঢেউ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করলাম। ডিজাইন ও ফ্যাশন নিয়ে বিশেষ ভালোবাসা ছিল আগে থেকেই। এছাড়া স্কুলে পড়তে গিয়ে কমিউনিটি সার্ভিস, লিডারশিপ বিষয়ে বেশ আগ্রহ জাগে। সব মিলিয়ে ব্যবসায় নিজেকে যুক্ত করা। বারবার মনে হয়েছে আমি এটা করে হয়ত ভালো কিছু করতে পারব। আমি ভালো করতে পারব সেই বিশ্বাসেই ঢেউ শুরু করেছি। এছাড়া পরিবারের সবার একটা অনুপ্রেরণা সবসময় ছিল। পেয়েছি সব ধরনের সাপোর্ট।

এত অল্প বয়সে এটার দায়িত্ব পাওয়া এবং সারার পরিচালক হওয়ায় সব মিলিয়ে আমার দায়িত্ব বেড়ে গেছে। তবুও দায়িত্ব নিতে আলাদা রকমের ভালো লাগা কাজ করে। নতুন নতুন কী ধরনের পণ্য আনা যায়, যা ক্রেতাদের মন কাড়বে, ঢেউয়ের প্রতি ভালোলাগা, আস্থা কীভাবে আরও বাড়বে সেসব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। নতুন ভাবনা নিয়ে আমাদের সব সহকর্মীদের নিয়ে আলোচনা করি, একসঙ্গে সবাই যারা কাজ করি, তাদের সঙ্গে শেয়ার করি। কোনো সমস্যার সমাধান বের করা, নতুন নতুন ডিজাইন তৈরি করা, কাস্টমারের মনোভাব বোঝা, তাদের মুখে হাসি দেখা-  সবকিছু এনজয় করছি।

ঢাকা পোস্ট : ঢেউ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

সারাফ সাইয়ারা : অন্য ব্র্যান্ডের চেয়ে ঢেউয়ের ভিন্নতা হচ্ছে এর কাস্টমাইজড ফেব্রিক ও প্যাটার্ন। ঢেউয়ের পোশাকগুলো সিল্ক, কটন, নিট ও ডেনিম কাপড়ের সমন্বয়ে তৈরি। আমাদের পরিকল্পনা হলো, যেখানেই যাবে সেখানেই যেন ঢেউ-এর একটা পরিচিতি থাকে। এছাড়া আমরা কীভাবে আরও নতুনত্ব আনতে পারি ওয়েস্টার্ন পোশাকে এটা আমাদের টার্গেট। আমরা কীভাবে আরও ভ্যারাইটি আনতে পারি সেটা নিয়ে কাজ করছি। আমরা দেখব মানুষ কী চায়। তারা যেভাবে চায় সেই কোয়ালিটি যেন দিতে পারি। মানসম্পন্ন তবে অ্যাফোর্ডেবল পোশাক যেন পৌঁছে দিতে পারি এটাই আমাদের লক্ষ্য।

ঢাকা পোস্ট : ঢেউয়ের পাশাপাশি এবার ঈদে সারা ফ্যাশন আর কী নিয়ে কাজ করছে?

সারাফ সাইয়ারা : সারাতে সব ধরনের, সবার জন্য আমরা প্রোডাক্ট বানাই। আমরা সারাতে এবার ঈদে প্রচুর নতুন নতুন প্রোডাক্ট এনেছি। এবারের ঈদে আমাদের মূল থিম হচ্ছে ‘মুঘল ডিজাইন’। ঈদে আমরা এ ডিজাইনে অনেক ফোকাস দিয়েছি এবং আমরা ভালো ফিডব্যাকও পাচ্ছি। প্রচুর কালেকশন পাওয়া যাচ্ছে আমাদের আউটলেটে।

এএসএস/এসকেডি