আয়কর মেলার পরিবর্তে এবার অফিসে অফিসে চলছে মিনি কর মেলা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) উদ্যোগে দেশের ৩১ কর অঞ্চলে গত ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে কর তথ্য সেবা। চলবে ৩০ তারিখ পর্যন্ত।

এনবিআরের নির্দেশনায় কর অঞ্চল-৪ এর আওতায় সার্কেল অফিসগুলোতে চলছে মেলার পরিবেশে সেবা প্রদান। সরকারি মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোর করদাতাদের কর সার্কেলগুলো এই অঞ্চলের আওতায়। স্বাভাবিকভাবে বাড়তি নজরদারি ও দায়িত্ব রয়েছে এই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পুরাতন এনবিআর প্রধান কার্যালয়ের ভবনে ওই কর অঞ্চলের কর্মকাণ্ড চলমান। ওই অফিসের নিচে রিটার্ন দাখিল, অনলাইনে রিটার্ন দাখিল, ইটিআইএন, ডিজিটাল চালানসহ বিভিন্ন সেবা দিতে মোট ১৫টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এই অফিস ছাড়াও কেরানীগঞ্জে ওই কর অঞ্চলের সাব অফিস রয়েছে। যদিও এখনো করদাতাদের কাঙ্ক্ষিত উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে যারা এখন রিটার্ন জমা দিতে যাচ্ছেন, তারা অনেকটা নির্বিঘ্নে সেবা নিতে পারছেন।  

সরেজমিন পরিদর্শন ও কর অফিস থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, কর অঞ্চল-৪ এর আওতায় এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ করদাতা ই-টিআইএন নিবন্ধন নিয়েছেন। যার মধ্যে প্রায় ১ লাখ ব্যক্তি নিয়মিত রিটার্ন দাখিল করছেন। মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোর করদাতা এই অঞ্চলের আওতাধীন থাকার কারণে প্রধান অফিসের পাশাপাশি সরকারি দপ্তরগুলোতে মিনি কর মেলা আয়োজন করেছে কর অঞ্চল-৪। 

যেমন- ১৯ নভেম্বর থেকে ২৩ নভেম্বর পাঁচ দিন বাংলাদেশ প্লানিং কমিশনে বুথ তৈরি করে কর সেবার আয়োজন করা হবে। একইভাবে বাংলাদেশ সচিবালয়ে ১ নভেম্বর থকে ১৪ নভেম্বর, অফিসার্স ক্লাবে ১ থেকে ১৪ নভেম্বর কর সেবা দিতে বিশেষ আয়োজন রয়েছে। 

অন্যদিকে ওই কর অঞ্চলের আওতায় কেরানীগঞ্জের সার্কেল অফিসে ১ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কর তথ্য সেবা দিচ্ছে কর অঞ্চল-৪।

কর অঞ্চল-৪ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে কর অঞ্চলটির রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে কর অঞ্চলটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বেশি কর আদায় করে। এই সফলতার কারণে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে মোট ৩১টি কর অঞ্চলের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছিল কর অফিসটি। এবারও সেরা হতে চায় তারা। অক্টোবর পর্যন্ত ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ও হয়েছে। 

এই কর অঞ্চলের আওতায় মোট ২২টি কর সার্কেল রয়েছে। কর অফিস ও বুথগুলোর কর সেবার সার্বিক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ এবং করদাতাদের অভিযোগ কিংবা যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য অতিরিক্ত কর কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পৃথক টিম গঠন করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান তার রিটার্ন দাখিল করেছেন এই কর অঞ্চলে। রিটার্ন দাখিল করার পর ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আয়কর মেলা না হলেও মেলার একই পরিবেশে কর অফিসে রিটার্ন জমা দিলাম। অভিজ্ঞতা ভালোই। অবসর নিয়েছি বেশ আগে। প্রতি বছরই রিটার্ন দাখিল করি। ভিড় এড়াতে আগেই কাজ শেষ করলাম। 

রিটার্ন দাখিলে কোনো সমস্যা বা অভিযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর সেবার মান আরও উন্নত করার সুযোগ রয়েছে। হয়রানি কমলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে অহেতুক হয়রানি এখনও আছে। বিশেষ করে কর্মচারী লেভেলে। এটা কমাতে হবে। অন্যদিকে কর অফিসেরও জনবল সংকট রয়েছে। এ ছাড়া একটি অফিসের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় সার্কেল অফিস রয়েছে। এতে করদাতাদের, এমনকি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও হয়রান হতে হয় বলে মনে করছি। 

এনবিআরের পরিচালক (জনসংযোগ) সৈয়দ এ মু’মেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নভেম্বর মাসব্যাপী প্রতিটি কর অঞ্চলে মেলার পরিবেশে করদাতারা আয়কর রিটার্ন দাখিলসহ সব ধরনের সেবা নিতে পারছেন। এ ছাড়া করদাতাদের তথ্য সরবরাহ করার জন্য কর অঞ্চলগুলো ছাড়াও সচিবালয়, অফিসার্স ক্লাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে অস্থায়ীভাবে কর তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালু করা হবে। আমরা করদাতাদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে চাই। করযোগ্য সকল করদাতাদের রিটার্ন দাখিল করার অনুরোধ করছি।

অন্যদিকে সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কর অঞ্চল-৪ এর  উপ-কর কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কর অঞ্চলটি অন্যান্য কর অঞ্চলের তুলনায় বড়। সরকারি সকল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এখানকার করদাতা।

তিনি বলেন, আশা করছি করদাতারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করসেবা নেবেন।  আমাদের সকল প্রস্ত্তুতি রয়েছে। অভিযোগ বক্স রয়েছে, করদাতা চাইলে সেখানে তার মতামত প্রকাশ করতে পারেন।

যেসব সেবা মিলছে 
• প্রতিটি অফিসে উন্মুক্ত স্থান বা কার পার্কিং এরিয়ায় রিটার্ন গ্রহণ বুথ ও হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। রিটার্ন দাখিলকারী করদাতাদের তাৎক্ষণিক প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দেওয়া হচ্ছে।
• অনলাইনে কীভাবে রিটার্ন দাখিল করা যায়, সে বিষয়টি হাতে-কলমে দেখিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
• সব কর কমিশনার সেবা কেন্দ্রে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন ও রি-রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। থাকছে চালান গ্রহণ বুথ। 
• সব কর অঞ্চলের কমিশনাররা তাদের নিজ নিজ কর অঞ্চলের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
• ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের ৪টি কর অঞ্চলে কেন্দ্রীয়ভাবে এবং অন্য সব কর অঞ্চলে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মেলার পরিবেশে কর সেবা পাওয়া যাচ্ছে। 

আরএম/এনএফ