এমডি পাচ্ছে না ৬ আর্থিক প্রতিষ্ঠান
অনিয়ম লুটপাটে ধুঁকছে দেশের নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা এনবিএফআই। চলছে নানা অব্যবস্থাপনা, চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের অযাচিত হস্তক্ষেপ। ইচ্ছে মতো হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে আমানতকারীদের টাকা। এমন পরিস্থিতিতে থাকা অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। আবার কারও মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু এখন নতুন এমডি পাচ্ছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার যোগ্য লোক খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এমডি ছাড়াই চলছে বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নেই দেশের ছয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। এর মধ্যে রয়েছে, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লি. (বিআইএফসি), এফএএস ফাইন্যান্স, ইউএই বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লি. ও জিএসপি ফাইন্যান্স। এসব প্রতিষ্ঠানে এমডি না থাকায় অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) সিইওর চলতি দায়িত্ব পালন করছেন।
বিজ্ঞাপন
আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের সীমাহীন অনিয়মের কারণে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। আবার ঋণের অর্থ আদায় করতে গিয়ে বিভিন্নজনের হুমকির মুখে পড়েন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এমডি আবদুল খালেক খান। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে তিনি পদত্যাগ করেন। এখন এমডি ছাড়াই চলছে প্রতিষ্ঠানটি। এখন চলতি দায়িত্বে আছেন মশিউর রহমান।
বিজ্ঞাপন
একই অবস্থায় আছে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি)। এমডি নিয়োগ হয়নি দীর্ঘদিন ধরে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির এমডির চলতি দায়িত্বে আছেন মো. আনোয়ার সাদেক। এফএএস ফাইন্যান্সের এমডি না থাকায় চলতি দায়িত্ব পালন করছেন ডিএমডি মো. এ এফ সাব্বির রহমান। ইউএই বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লি-এর এমডি-র চলতি দায়িত্ব পালন করছেন এম এম মোস্তফা বিলাল, জিএসপি ফাইন্যান্সের এমডি-র চলতি দায়িত্ব পালন করছেন মো. জিল্লুর রহমান এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটালের এমডি-র চলতি দায়িত্ব পালন করছেন এ এন এম গোলাম সাব্বির।
আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুরবস্থার কারণ চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের অযাচিত হস্তক্ষেপ। নানা অনিয়ম অব্যস্থাপনা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এমডি ও পরিচালকদের দুর্নীতির কারণে পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। পরিচালকদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় অনেকে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। মালিকরা নিজেদের মতো এমডি নিয়োগ দিতে চান। ফলে অনেকে যোগ্য লোক পাচ্ছেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম দুর্নামের কারণে নিরাপত্তার জন্য যোগ্য লোক দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না।
এমন অবস্থায় যোগ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক পেতে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্যানেল গঠনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রয়োজন অনুযায়ী এই প্যানেল থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নাম সুপারিশ করবে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, যোগ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি প্যানেল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের এমডি নেই সেখানে দ্রুত এমডি নিয়োগে সহায়তা করবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি প্যানেল গঠন করে এমডি নিয়োগ দিতে পারে তাহলে ভালো। এখন কোন প্রক্রিয়ায় তারা কাজটা করবে এটা দেখার বিষয়।
বর্তমানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নেই দেশের ছয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। এর মধ্যে রয়েছে, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লি. (বিআইএফসি), এফএএস ফাইন্যান্স, ইউএই বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লি. ও জিএসপি ফাইন্যান্স। এসব প্রতিষ্ঠানে এমডি না থাকায় অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) সিইওর চলতি দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খারাপ হওয়ার মূল কারণ খেলাপি ঋণ। এটা কমাতে না পারলে এগুলো ভালো হবে না। আবার খারাপ অবস্থায় মধ্যে কেউ সহজে দায়িত্ব নিতে চাইবে না। তাই খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে পরিচালকদের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ৩ মাসে এনবিএফআই গুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। ফলে জুনের শেষে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা, যা এই খাতে বিতরণ করা মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। গত মার্চ মাস শেষে এনবিএফআইয়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা, যা ছিল ওই সময়ের মোট ঋণের ২৫ শতাংশ।
এসআই/এসকেডি