প্রাক বাজেট আলোচনায় ব্যাংকাররা
ক্রেডিট কার্ডে রিটার্ন স্লিপের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ার দাবি
ঋণ ও ডিপোজিটের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ (পিএসআর) দেওয়ার নিয়ম ভালো সিদ্ধান্ত হলেও ক্ষুদ্র ঋণের ক্ষেত্রে এটি নানামুখী সমস্যা তৈরি করছে। এ অবস্থায় ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ছোট ঋণে এবং ক্রেডিট কার্ডে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পিএসআর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক বাজেট আলোচনায় ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন এ দাবি উপস্থাপন করেন।
বিজ্ঞাপন
সেলিম রেজা বলেন, ঋণ ও ডিপোজিটের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ (পিএসআর) দেওয়ার নিয়ম চালু হয়েছিল, সেটা ভালো সিদ্ধান্ত। সিএমএসএমই খাতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে পিএএসআর বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামে ছোটো বা মাঝারি আকারে ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার জন্য পিএসআর জমা নেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে তারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে ঋণে আগ্রহী হচ্ছে।
তিনি বলেন, সিএমএসএমই খাতে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ও ক্রেডিট কার্ডে ৫ লাখ পর্যন্ত ঋণ প্রদানের জন্য পিএএসআর প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া ব্যাংকে মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে পিএসআর জমা দেওয়া নিয়ম থাকায় অনেকে বাইরে টাকা রাখছে। এজন্য মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রেও পিএসআরের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। জিরো কুপন বন্ডে ট্যাক্স সুবিধা দেওয়ার ও সিএসআরকে অনুমোদিত ব্যয় হিসেবে বিবেচনা করার জন্যও প্রস্তাব দেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে প্রাক বাজেট আলোচনায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, ব্রোকারদের এক লাখ টাকার ট্রেডের বিপরীতে ৫০ টাকা ট্যাক্স নেওয়া হয়। যা আগে ছিল মাত্র ১৫ টাকা। করোনা পরবর্তী বাজার পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক অবস্থা বিবেচনায় এই ট্যাক্সের পরিমাণ কমানো উচিত।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হ্রাস ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানি করের হার বাড়ানোর দাবি জানান। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের দ্বৈত কর লাঘব ও মূলধনী লাভের উপর কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন। প্রাক বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন কর্পোরেট কর হার কমিয়ে আনা, কৃষি বিমা ও গবাদিপশুর বিমা, অনলাইন ভিত্তিক বিমার প্রিমিয়াম থেকে ভ্যাট ও কর্পোরেট করহার প্রত্যাহারের দাবি জানান।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ৬টি লক্ষ্য নিয়ে ৯টি প্রস্তাবনা দেয়। তাদের লক্ষ্যগুলো হলো: তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধি করা, স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর পণ্য বৈচিত্র্যকরণে সহায়তা, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগকারী বৃদ্ধি, একটি কার্যকরী বেসরকারি বন্ড মার্কেট প্রস্তুত, পুঁজিবাজারের জন্য কার্যকর মার্কেট ইন্টারমিডিয়ারিস তৈরি করা, বাংলাদেশের অর্থনীতি সমসাময়িক পিয়ার কান্ট্রিগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মার্কেট ক্যাপ-জিডিপি রেসিও বৃদ্ধি করা।
আর প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো লভ্যাংশ করের ওপর দ্বৈতকরের বিধান প্রত্যাহার করে লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত ঘোষণা করা।
তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের ব্যবধান কোনো শর্ত ছাড়া ১০ শতাংশ করা, নির্ধারিত বার্ষিক মোট নগদ ব্যয় ও বিনিয়োগের সীমা ৩৬ লাখ টাকার স্থলে মোট ব্যবসায়িক টার্নওভারের ১০ শতাংশ করা, এসএমই ও অল্টারনেটিং ট্রেডিং বোর্ডের (এটিবি) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির প্রথম তিন বছরের জন্য কর অব্যাহতি দেওয়া, করমুক্ত আয়ের এ সীমা ৫ লাখে উন্নীত করা।
আরএম/এসকেডি