১০ সমস্যায় ইস্পাত খাত, সমাধানে যে দাবি জানাল বিএসএমএ
বর্তমানে ডলার-সংকট ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ মোট ১০টি সমস্যায় ইস্পাত খাত ধুঁকছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) নেতারা। তারা বলেছেন, ইস্পাত খাতকে রক্ষা করতে হলে অবিলম্বে সুরক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। সুরক্ষার অংশ হিসেবে স্বল্পমেয়াদি ঋণের মেয়াদ ১২ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের রূপান্তর করার পাশাপাশি বিদ্যুতের নতুন দাম ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে মার্চ থেকে কার্যকর করতে হবে। এছাড়া, ইস্পাত খাতের উৎসে কর কর্তন দুই শতাংশের পরিবর্তে দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিএম সনদের ফি কোম্পানির বার্ষিক লেনদেনের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) মিলনায়তনে আয়োজিত ‘ডলার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে স্টিল শিল্পের চরম সংকট’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিএসএমএর সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ডলার-সংকটের কারণে ইস্পাতের কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্যাংকগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী ঋণপত্র খুলতে পারছে না। সেই কারণে ইস্পাতের কাঁচামালের সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। আবার ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংক থেকে কোম্পানিগুলোর ঋণপত্রের সীমা দেশীয় মুদ্রায় ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ব্যাংকে স্থানীয় মুদ্রায় আমাদের মোট ঋণসীমা একই অবস্থানে থাকলেও সেই ঋণের ক্রয়ক্ষমতা ৫০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ডলারের মূল্য যখন ৮৫ টাকা ছিল, তখন আমরা এক কোটি ২০ লাখ ডলার মূল্যের ঋণপত্র পেতাম। এখন ডলারের দাম বাড়ার কারণে ঋণপত্রের সীমা কমে ৮০ লাখ ডলার হয়েছে। ইস্পাত খাতের কাঁচামাল, রাসায়নিক ও যন্ত্রাংশের ৮৫ শতাংশই আমদানি নির্ভর। বর্তমানে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় চলতি মূলধনে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত পরিমাণে চলতি মূলধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, গত বছর তিন দফায় বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি পুনরায় দাম বাড়ানো হয়েছে, যা কি না ওই মাসের শুরু থেকে কার্যকর করতে প্রজ্ঞাপন করা হয়েছে। অথচ দাম বাড়ার আগের বিদ্যুতের মূল্যের ওপর ভিত্তি করে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হয়েছে। এখন বিদ্যুতের অতিরিক্ত দাম দিতে হলে উৎপাদনকারীদের আর্থিকভাবে লোকসান গুনতে হবে। বিদ্যুতের মূল্য ভূতাপেক্ষভাবে কার্যকর করা মৌলিক আইনের পরপন্থি।
তিনি আরও বলেন, ইস্পাত খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম গত বছরের শুরুতে মাসে গড়ে ৯০ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করত। তারপর ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এখন নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির কারণে খরচ বাড়বে ১১ থেকে ১২ কোটি টাকা। বিদ্যুতের বিল বাড়ার কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠানে খরচ বাড়বে চার কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
বাণিজ্য সংগঠনটির সাবেক সভাপতি মানোয়ার হোসেন বলেন, যখন ডলারের দাম ৮৫ টাকা ছিল, তখন রডের দাম ছিল টনপ্রতি ৯২ হাজার থেকে ৯৩ হাজার টাকা। এখন ডলারের ডলারের দাম ১২০ থেকে ১২৭ টাকা হলেও রড বিক্রি করতে হচ্ছে ৯৫ হাজার থেকে ৯৭ হাজার টাকায়। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। সে জন্য আমাদের উৎপাদন খরচের তুলনায় কম দামে রড বিক্রি করতে হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএর সাবেক সভাপতি শেখ মাসাদুল আলম, বর্তমান কমিটির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শহিদউল্লাহ, সহ-সভাপতি মারুফ মহসিন, মো. আবদুস সালাম ও মহাসচিব সুমন চৌধুরী।
এমএইচএন/কেএ