১৯৭২ থেকে ২০২৫ : বাজেটের আয়নায় বদলে যাওয়া বাংলাদেশ
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের যাত্রা শুরু হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশটির অর্থনীতি ছিল মাত্র চার হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার। এরপর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হয়, যার পরিমাণ ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। এটাই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট।
সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশ আজ অনেক দূর এগিয়েছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বাজেটের আকার বেড়েছে হাজার গুণের বেশি। আসন্ন প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হবে দেশের প্রথম বাজেটের চেয়ে ১০০৪ গুণ বড়।
বিজ্ঞাপন
জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে এক ভিন্ন বাস্তবতা। এ পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এবার সংসদের বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট। সংসদ না থাকায় এবার বাজেট পেশ হবে টেলিভিশন এবং অন্যান্য গণমাধ্যমে। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ছাড়াও দেশের সব বেসরকারি টিভি চ্যানেল একযোগে এই বাজেট প্রচার করবে।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল সোমবার (২ জুন) বিকেল ৩টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ তার বাজেট বক্তব্য টেলিভিশনে উপস্থাপন করবেন।
এর আগেও একবার সংসদের বাইরে বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই বছরের ৯ জুন (সোমবার) তৎকালীন অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব ঘোষণা করেন। তার বাজেট বক্তব্য সেদিন বেলা ৩টায় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) এবং বাংলাদেশ বেতারে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
২০০৯ সালের পর আওয়ামী লীগ সরকার টানা চার মেয়াদে সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। এই সময়ে জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেন তিনজন অর্থমন্ত্রী। আবুল মাল আবদুল মুহিত টানা ১০ বার, আ হ ম মুস্তফা কামাল ৫ বার এবং সবশেষ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাজেট উপস্থাপন করেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট দিয়েছিলেন দেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী প্রয়াত তাজউদ্দীন আহমদ। বাংলাদেশের প্রথম বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে (১৯৭২-৭৩ অর্থবছর) ওই বাজেট দিয়েছিলেন তাজউদ্দীন। পরের দুটি বাজেটও দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন। এর আগে মুজিবনগর সরকার ১৯৭১ সালের ১৯ জুলাই দৈনন্দিন ও অপরিহার্য ব্যয় নির্বাহে একটি বাজেট পেশ করেছিল। সবমিলিয়ে ১৪ জন অর্থমন্ত্রী বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বাজেট দিয়েছেন।
এর আগে টানা ১০ বার বাজেট দিয়ে রেকর্ড করেছিলেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরও আগে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া টানা ছয়টি বাজেট দেন। তবে আবদুল মুহিত টানা ১০ বাজেট ছাড়াও এরশাদ সরকারের সময় (১৯৮২-৮৩ এবং ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছর) দুটি বাজেট দিয়েছিলেন। এ হিসেবে মুহিতের উপস্থাপিত বাজেটের সংখ্যা ১২টি। এছাড়া প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানেরও ১২টি বাজেট দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে।
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের ৫৪তম যে বাজেট দেবেন তার আকার ধরা হচ্ছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা। এ হিসাবে স্বাধীনতার পর প্রথম বাজেটের চেয়ে আসন্ন নতুন বাজেটের আকার দাঁড়াবে ১০০৪ গুণ বেশি।
এবারের বাজেট উপস্থাপনে সংসদ না থাকায় কোনো সংসদীয় আলোচনা বা বিতর্ক হবে না। তবে ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর জনমত নেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত চাইবে, আর সেই মতামতের ভিত্তিতে বাজেটের চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে। চূড়ান্তকরণের পর যেকোনো একদিন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেট অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি একটি অধ্যাদেশ জারি করে বাজেটটি কার্যকর করবেন, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি একটি অধ্যাদেশ জারি করে বাজেটটি কার্যকর করবেন, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
আরও পড়ুন
স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত যত বাজেট—
১৯৭২-৭৩ অর্থবছর : তাজউদ্দীন আহমদ— ৭৮৬ কোটি টাকা
১৯৭৩-৭৪ অর্থবছর : তাজউদ্দীন আহমদ— ৯৯৫ কোটি টাকা
১৯৭৪-৭৫ অর্থবছর : তাজউদ্দীন আহমদ— ১ হাজার ৮৪.৩৭ কোটি টাকা
১৯৭৫-৭৬ অর্থবছর : ড. আজিজুর রহমান মল্লিক (এ আর মল্লিক)— ১ হাজার ৫৪৯.১৯ কোটি টাকা
১৯৭৬-৭৭ অর্থবছর : মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান— ১ হাজার ৯৮৯.৮৭ কোটি টাকা
১৯৭৭-৭৮ অর্থবছর : লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান— ২ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা
১৯৭৮-৭৯ অর্থবছর : রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান— ২ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা
১৯৭৯-৮০ অর্থবছর : ড. এম এন হুদা— ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা
১৯৮০-৮১ অর্থবছর : এম সাইফুর রহমান— ৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা
১৯৮১-৮২ অর্থবছর : এম সাইফুর রহমান— ৪ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা
১৯৮২-৮৩ অর্থবছর : আবুল মাল আবদুল মুহিত— ৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা
১৯৮৩-৮৪ অর্থবছর : আবুল মাল আবদুল মুহিত— ৫ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা
১৯৮৪-৮৫ অর্থবছর : এম সাইদুজ্জামান— ৬ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা
১৯৮৫-৮৬ অর্থবছর : এম সাইদুজ্জামান— ৭ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা
১৯৮৬-৮৭ অর্থবছর : এম সাইদুজ্জামান— ৮ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা
১৯৮৭-৮৮ অর্থবছর : এম সাইদুজ্জামান— ৮ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা
১৯৮৮-৮৯ অর্থবছর : মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম— ১০ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা
১৯৮৯-৯০ অর্থবছর : ড. ওয়াহিদুল হক— ১২ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা
১৯৯০-৯১ অর্থবছর : মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম— ১২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা
১৯৯১-৯২ অর্থবছর : এম সাইফুর রহমান— ১৫ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা
১৯৯২-৯৩ অর্থবছর : এম সাইফুর রহমান— ১৭ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা
১৯৯৩-৯৪ অর্থবছর : এম সাইফুর রহমান— ১৯ হাজার ৫০ কোটি টাকা
১৯৯৪-৯৫ অর্থবছর : এম সাইফুর রহমান— ২০ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা
১৯৯৫-৯৬ অর্থবছর : এম সাইফুর রহমান— ২৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকা
১৯৯৬-৯৭ অর্থবছর : শাহ এ এম এস কিবরিয়া— ২৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা
১৯৯৭-৯৮ অর্থবছর : শাহ এ এম এস কিবরিয়া— ২৭ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা
১৯৯৮-৯৯ অর্থবছর : শাহ এ এম এস কিবরিয়া— ২৯ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা
১৯৯৯-২০০০ অর্থবছর : শাহ এ এম এস কিবরিয়া— ৩৪ হাজার ২৫২ কোটি টাকা
২০০০-০১ অর্থবছর : শাহ এ এম এস কিবরিয়া— ৩৮ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা
২০০১-০২ অর্থবছর : শাহ এ এম এস কিবরিয়া— ৪২ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা
২০০২-০৩ অর্থবছর : এম সাইফুর রহমান— ৪৪ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা
২০০৩-০৪ অর্থবছর : এম সাইফুর রহমান— ৫১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা
২০০৪-০৫ অর্থবছর : এম সাইফুর রহমান— ৫৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা
২০০৫-০৬ এম সাইফুর রহমান— ৬১ হাজার ৫৮ কোটি টাকা
২০০৬-০৭ অর্থবছর : এম সাইফুর রহমান— ৬৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা
২০০৭-০৮ অর্থবছর : এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম— ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা
২০০৮-০৯ অর্থবছর : এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম— ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা
২০০৯-১০ অর্থবছর : আবুল মাল আবদুল মুহিত— ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা
২০১০-১১ অর্থবছর : আবুল মাল আবদুল মুহিত— ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা
২০১১-১২ অর্থবছর : আবুল মাল আবদুল মুহিত— ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা
২০১২-১৩ অর্থবছর : আবুল মাল আবদুল মুহিত— ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা
২০১৩-১৪ অর্থবছর : আবুল মাল আবদুল মুহিত— ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা
২০১৪-১৫ অর্থবছর : আবুল মাল আবদুল মুহিত— ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা
২০১৫-১৬ অর্থবছর : আবুল মাল আবদুল মুহিত— ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা
২০১৬-১৭ অর্থবছর : আবুল মাল আবদুল মুহিত— ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা
২০১৭-১৮ অর্থবছর : আবুল মাল আবদুল মুহিত— ৪ লাখ ২৭০ কোটি টাকা
২০১৮-১৯ অর্থবছর : আবুল মাল আবদুল মুহিত— ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা
২০১৯-২০ অর্থবছর : আ হ ম মুস্তফা কামাল— ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা
২০২০-২১ অর্থবছর : আ হ ম মুস্তফা কামাল— ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা
২০২১-২২ অর্থবছর : আ হ ম মুস্তফা কামাল— ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা
২০২২-২৩ অর্থবছর : আ হ ম মুস্তফা কামাল— ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা
২০২৩-২৪ অর্থবছর : আ হ ম মুস্তফা কামাল— ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা
২০২৪-২০২৫ অর্থবছর : আবুল হাসান মাহমুদ আলী— ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা
এসআই/এমজে