২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শুধু ঋণের সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা, যা বাজেটের মোট ব্যয়ের ১৫.৪৪ শতাংশ। এই বিশাল অঙ্কের অর্থ সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে নেওয়া ঋণের সুদ মেটাতে খরচ করবে।

সোমবার (২ জুন) বিকেলে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট। এর আগে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরের বাজেট টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের সময় পর্যন্ত মোট ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ রেখে যায়। এ ঋণ পরিশোধে এখন ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সুদ পরিশোধে ব্যয়ও বেড়েছে। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ উৎস— সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা বেশি থাকায় সুদের বোঝাও ভারী হচ্ছে। আগামীতে রাজস্ব আদায়ের হার না বাড়লে ভবিষ্যতে সরকারের আর্থিক ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

বাজেট প্রস্তাবনা: আকার ও বরাদ্দ

অর্থ উপদেষ্টা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট প্রস্তাব করেছেন, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট পাঁচ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন।

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার, যা জিডিপির ৯ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে চার লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস হতে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার চিন্তা রয়েছে সরকারের।

বাজেট ঘাটতি ও অর্থায়ন

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে দুই লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩.৬ শতাংশ।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস হতে এবং এক লাখ এক হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস হতে পূরণ করা হবে।

বাজেট চূড়ান্তকরণ ও কার্যকারিতা

জানা গেছে, সংসদ না থাকায় এবার বাজেট উপস্থাপনে কোনো সংসদীয় আলোচনা বা বিতর্ক হবে না। তবে, ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর জনমত নেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত চাইবে। সেই মতামতের ভিত্তিতে বাজেটের চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে।

চূড়ান্তকরণের পর যেকোনো একদিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি একটি অধ্যাদেশ জারি করে বাজেটটি কার্যকর করবেন। আগামী ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর হবে।

এসআই/এমএআর/