৪ ঘণ্টা দাঁড়িয়েও মিলছে না টিসিবির পণ্য
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির পণ্যের জন্য চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য পাননি অনেকে। ফলে এই করোনাকালেও চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাদের।
টিসিবির ডিলাররাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তারা বলছেন, প্রতিদিন আমাদের যে পরিমাণ পণ্য বরাদ্দ দিচ্ছে, চাহিদা তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি। তাই আমাদের ইচ্ছা থাকলেও সবাইকে পণ্য দিতে পারছি না।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর রামপুরা বাজারের সামনের রাস্তায় টিসিবির একটি ট্রাক থেকে পণ্য কেনার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম নামে এক বৃদ্ধ। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, বেলা ১১টায় লাইনে দাঁড়িয়েছেন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল পার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এখনও লাইন শেষ হচ্ছে না। মনিরুল যখন এসব কথা বলছিলেন তখনও তার সামনে ২০ জন দাঁড়িয়েছিলেন।
মনিরুল একা নন, তার মতো আরও অনেকে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে কাঙ্ক্ষিত পণ্য পাচ্ছেন না।
বিজ্ঞাপন
ওই ট্রাকটি থেকে চিনি, মশুর ডাল এবং সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছিল। এর মধ্যে চিনি ও মশুরে ডাল বিক্রি হচ্ছিল ৫৫ টাকা কেজি দরে। আর সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছিল ১০০ টাকা লিটারে।
তবে মনিরুল বলেন, এখন যারা পণ্য নিচ্ছেন তাদের ডাল দেওয়া হচ্ছে না। ডিলাররা বলছেন, ডাল শেষ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, তেল-চিনি যাই দেক, আমি নেবো।
লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন জেসমিন আক্তার নামে আরও এক নারী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার কারণে বাসা-বাড়িতে কাজে যাচ্ছি না। এখন সংসার চালাতে পারছি না। তাই এখানে ডাল-তেল কিনতে এসেছি। তিনি বলেন, ১২টায় লাইন দাঁড়িয়েছি, এখনও আমার সামনে ২০-২৫ জনের মতো আছেন। এখন বলছে ডাল শেষ, জানি না শেষ পর্যন্ত পাবো কি না।
ডাল তেল নেওয়া জন্য দুপুর ১২টায় লাইনে দাঁড়িয়েছেন মধ্যবসয়ী মোস্তাক আহমেদও। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুপুরে না খেয়ে কম দামে ডাল-তেল কেনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। এখন বলছে ডাল নেই, তেলও পাবো কি না বলতে পারছি না। শেষে খালি হাতেই বাসায় ফিরতে হবে।
গতকালও লাইনে দাঁড়িয়ে ডাল-তেল না পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে জানান মোস্তাক।
রামপুরায় টিসিবির ওই ট্রাকের দায়িত্বে থাকা মামুন হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেলা ১১টা থেকে মাল দিচ্ছি। আজকের বরাদ্দ ছিল ৪০০ কেজি ডাল, ৭০০ কেজি চিনি এবং ১০০০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল। এগুলো যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ বিক্রি করবো।
তিনি বলেন, বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২শ লোককে ডাল, তেল ও চিনি দিয়েছি। লাইনে দাঁড়ানো সবাই যাতে পণ্য পায়, সে জন্য একটি করে তেল দিচ্ছি। তারপরও যদি না পায় আর কী করতে পারি।
উল্লেখ্য, গত ৫ জুলাই থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে টিসিবির পণ্য বিক্রির কার্যক্রম চলছে। ২৯ জুলাই পর্যন্ত চলবে এ কার্যক্রম। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রামে ২০টি এবং সারা দেশে ৪০০ ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবি। এসব ট্রাকে কেজি প্রতি ৫৫ টাকা দরে চিনি ও ডাল এবং লিটারপ্রতি ১০০ টাকা দরে সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে। পাশাপাশি টিসিবির বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে সকল পণ্য। একজন ব্যক্তি দৈনিক দুই থেকে চার কেজি চিনি, দুই কেজি ডাল ও দুই থেকে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারছেন।
এমআই/এনএফ