মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছেন এক গ্রাহক

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রাহক। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। তাৎক্ষণিক টাকা লেনদেন ও পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে।

সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোট ১৫টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত আছে। ২০২০ সালের নভেম্বর মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ৯ কোটি ৭৮ লাখ ছাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে ওই মাসে লেনদেন হয়েছে ৫৩ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। যার দৈনিক গড় এক হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) নভেম্বর মাসের হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তবে এ প্রতিবেদনে ডাক বিভাগের মোবাইলে আর্থিক সেবা ‘নগদ’-এর তথ্য নেই।

এমএফএসের নিয়ম অনুযায়ী, টানা তিন মাস একবারও লেনদেন ক‌রে‌নি এমন হিসাবকে নিষ্ক্রিয় হিসাব বলে গণ্য করে থা‌কে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

তথ্য বলছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন ও গ্রাহক সংখ্যা বাড়লেও সক্রিয় গ্রাহকসংখ্যা কমেছে। আলোচিত সময়ে এ খাতে সক্রিয় গ্রাহক এক মাসের ব্যবধানে এক দশমিক ৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ১৬ লাখ ৭৪ হাজারে। এ সময় মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৪৪ হাজার ৫২১-এ।

এসব বিষয়ে এমএফএস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম ঢাকা পোস্টকে জানান, কোভিড-১৯ এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থনীতি আস্তে আস্তে চাঙা হচ্ছে। ফলে মোবাইল ফাইন্যান্সের লেনদেন বাড়ছে। এছাড়া কোভিডের ক্যাশলেস লেনদেনে অনেক মানুষ পরিচিত হয়েছে। এখন মানুষ কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা ও উত্তোলনের চেয়ে সহজে ঘরে বসে মোবাইল ফাইন্যান্সের মাধ্যমে লেনদেন করছে। এর ফলে সামনের দিনগুলোতে এমএফএস সেবার আওতা ও পরিধি বাড়বে।

সক্রিয় গ্রাহকসংখ্যা কমার কারণ হিসাবে দেশের সবচেয়ে বড় এমএফএস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘একদিকে যেমন গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে অন্যদিকে সক্রিয় গ্রাহকও কিছু কমবে এটা স্বাভাবিক। কারণ তিনমাস ব্যবহার না করলে তিনি নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। কোভিডের কারণে পোশাককর্মীর বেতন ও সরকারের বিভিন্ন সুবিধাভোগীদের অর্থ সহায়তা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রদান করেছে। যাদের মধ্যে অনেকে এখন সক্রিয় নয়। তার মানে তাদের হিসাব বন্ধ হয়েছে তা নয়। যখন লেনদেন চালু করবে তখন আবার সক্রিয় হয়ে যাবে।’

এদিকে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা দেয়া, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংক থেকে মোবাইলে ও মোবাইল থেকে ব্যাংকেও লেনদেন করারও সুবিধা পাচ্ছেন গ্রাহকরা।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে এমএফএসে রেমিট্যান্স সংগ্রহ এক দশমিক চার শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ১৬ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ হয়েছে দুই হাজার ২৩ কোটি টাকা। বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৮৩১ কোটি টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ সাত দশমিক ছয় শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮৭৯ কোটি টাকায়।

জানা গেছে, ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।

এসআই/এফআর