সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম /ছবি-ঢাকা পোস্ট

আস্থার সংকটে অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) সনদধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে না। আমদানিকারকরা আস্থার জায়গা তৈরি করলে ওই সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান (এনবিআর) আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

সোমবার (২৫ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে আছে ৩০ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ৪১ হাজার ২২৫ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আদায় করতে সক্ষম হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা।

আমরা চাই সবাই এ ধারার ভেতরে আসুক। কিন্তু সেই আস্থার জায়গাটা অর্জিত হচ্ছে না বলে এইও সনদধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে না। আমদানিকারকরা আমাদের সেই আস্থার জায়গা তৈরি করে দেন, আমরা এইও’র সংখ্যা আরও বাড়াব

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম

এইও সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন আমদানিকারক র্দীঘদিন ধরে পণ্য আমদানি করেন। কখনও রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন না। তার আমদানি করা পণ্য পরীক্ষা ছাড়াই সরল বিশ্বাসে জাহাজ থেকে সরাসরি তার গোডাউনে নিয়ে যাবে। তদারকি করতে হবে না— এটাই আমরা চাই।

‘আমরা চাই সবাই এ ধারার ভেতরে আসুক। কিন্তু সেই আস্থার জায়গাটা অর্জিত হচ্ছে না বলে এইও সনদধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে না। আমদানিকারকরা আমাদের সেই আস্থার জায়গা তৈরি করে দেন, আমরা এইও’র সংখ্যা আরও বাড়াব।’

প্রসঙ্গত, আমদানি করা পণ্য দ্রুত খালাস করতে এইও ব্যবস্থা কার্যকর করেছে এনবিআর। এর মাধ্যমে আমদানি করা পণ্য পরীক্ষা ছাড়াই জাহাজ থেকে সরাসরি গোডাউনে চলে আসবে। সেই গোডাউনে শুল্কায়ন সম্পন্ন হবে। এতে আমদানিকারকদের একদিকে সময় সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে ব্যবসার খরচ কমে আসবে। এখন পর্যন্ত প্রথম সারির তিনটি ওষুধ কোম্পানিকে এ সনদপত্র দেওয়া হয়েছে।

আমদানি নীতি বা কোনো সংস্থার ক্লিয়ারেন্সের প্রয়োজন না হলে দিনের পণ্য দিনেই খালাস হয়ে যায় গড়ে প্রায় ৬০ শতাংশ

এনবিআর সদস্য সৈয়দ গোলাম কিবরীয়া

আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে এখন কত সময় লাগে— এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমদানি-রপ্তানিতে কাস্টমসের দীর্ঘসূত্রতা শুধু কাস্টমসের কারণে হয় না। আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত থাকে অন্যান্য অর্গানাইজেশন। তাদের ক্লিয়ারের পর কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স দেয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিএসটিআই, অ্যাটমিক এনার্জি, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, পরিবেশ, পশুসম্পদ অধিদপ্তর, এগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্ট ইত্যাদির ক্লিয়ারেন্স লাগে। এ ক্লিয়ারেন্সগুলো অনলাইনে নিয়ে নিতে পারলে সময় অনেক সাশ্রয় হবে। আমদানি-রপ্তানিতে বিলম্বজনিত দোষ শুধু এনবিআরের কাঁধে না দেওয়ার অনুরোধ।’

এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য (কাস্টমস নীতি) সৈয়দ গোলাম কিবরীয়া বলেন, ‘আমদানি নীতি বা কোনো সংস্থার ক্লিয়ারেন্সের প্রয়োজন না হলে দিনের পণ্য দিনেই খালাস হয়ে যায় গড়ে প্রায় ৬০ শতাংশ। অন্য কোনো সংস্থার ক্লিয়ারেন্সের প্রয়োজন হলে তা ক্লিয়ারেন্স নেওয়ার ওপর নির্ভর করে। আর দুদিনে খালাস হয় প্রায় ৭০ শতাংশ পণ্য। অন্য চালান খালাসে দেরি হয় রাসায়নিক পরীক্ষা বা অন্য কোনো কারণে।’

এনবিআর সদস্য (কাস্টমস : নিরীক্ষা, আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য) খন্দকার মুহাম্মদ আমিনুর রহমান বলেন, আমদানিকারকরা প্রায় ৪০ শতাংশ বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে পণ্য আমদানির ১০ দিন পর। দ্রুত বিল অব এন্ট্রি দাখিল করার জন্য আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

আরএম/এমএআর/