নিষিদ্ধ ফরাছত আলী চান পরিচালক পদ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘না’
ফরাছত আলী /ছবি- সংগৃহীত
অনিয়মের অভিযোগে দুই বছর জন্য নিষিদ্ধ এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ফরাছত আলীর পরিচালক পদ ফিরে পাওয়ার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২০ সালের ২১ জুন থেকে শুরু করে পরবর্তী দুই বছর কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না তিনি।
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪৪১তম পর্ষদ সভায় উত্থাপিত ফরাছত আলীর পরিচালক পদ ফিরে পাওয়ার আবেদন খারিজ করে দেয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চলচিত্র শিল্পের জন্য এক হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ২১ জুন থেকে দুই বছরের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদের জন্য ফরাছত আলীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন করেন এনআরবিসি ব্যাংকের সাবেক এই চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেওয়া শর্ত পালনে ব্যর্থ হওয়ায় তার আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, অনিয়মের অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ফরাছত আলীকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরিচালকদের স্বাক্ষর জাল করে ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে মিথ্যা তথ্য প্রদানসহ বেশ কিছু অভিযোগের দীর্ঘ শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কেন্দ্রীয় প্রায় তিন বছর সময় নেয়।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, ফরাছত আলী এনআরবিসি ব্যাংকের মূল উদ্যোক্তা হলেও বর্তমানে ব্যাংকটির পরিচালক পদে নেই। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন ফরাছত আলী। সেই সুবাদে ব্যাংকটির অনুমোদন পায় তার নেতৃত্বে কিছু ব্যবসায়ী। প্রবাসীদের উদ্যোগে গঠিত নতুন এ ব্যাংকে বড় ধরনের অনিয়ম ধরা পড়ায় ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। ফরাছত আলীর বদলে নতুন চেয়ারম্যান হন তমাল পারভেজ। ২০১৮ সালের ১২ জানুয়ারি ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান মুজিবুর রহমানকে অপসারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন না দেওয়ায় ২০১৮ সালের আগস্টে পরিচালক পদ থেকেও বাদ পড়েন ফরাছত আলী।
যাত্রা শুরুর সময় ব্যাংকটিতে ফরাছত আলীর শেয়ার ছিল দুই কোটি ১০০টি। পরিচালক পদ থেকে বাদ পড়ার পর ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান তমাল পারভেজের কাছে ৩২ লাখ ৫০ হাজার ও নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মিয়ার কাছে ৩২ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার স্থানান্তর করেছেন। এতে ব্যাংকটিতে ফরাছত আলীর শেয়ার কমে যায়, যা দিয়ে ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার সুযোগ নেই।
ফরাছত আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বাংলাদেশ ব্যাংককে মিথ্য তথ্য প্রদান করা। তার কাছে পাঠানো কারণ দর্শানোর নোটিশে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও পর্ষদ সভার কার্যবিবরণীতে গৃহীত সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে প্রতিফলন না করে অসত্য বর্ণনা প্রদান করে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে। যার দায় অনুমোদনকারী হিসেবে ফরাছত আলীর ওপর বর্তায়।
এছাড়া ফরাছত আলী মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক এক পরিচালককে বেনামে ঋণ দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এমনকি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ওই পরিচালক এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালক না হয়েও পর্ষদ সভায় অংশ নিয়েছেন। ফরাছত আলী তাকে এসব কাজে সহায়তা করেছেন। এসব কারণে ফরাছত আলীকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চলচিত্র শিল্পের জন্য এক হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম
চলচ্চিত্র শিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিদ্যমান সিনেমা হলগুলো সংস্কার, আধুনিকায়ন ও নতুন সিনেমা হল নির্মাণের উদ্দেশ্যে সিনেমা হল মালিকদের স্বল্প সুদে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক এক হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ।
এসআই/ওএফ