ডাউনপেমেন্ট (এককালীন জমা) ছাড়াই চলমান ঋণ তিন বছর মেয়াদে পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়ার দা‌বি জানি‌য়ে‌ছে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। পাশাপা‌শি বিদ্যমান মেয়াদি ঋণ পরিশোধের বাংলা‌দেশ ব্যাংকের দেওয়া বাড়তি দুই বছর সময় বা‌ড়ি‌য়ে তিন বছর করার প্রস্তাব করেছে সংগঠন‌টি।

ব্যবসায়ীরা এখ‌নও করোনার ভয়াবহ প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বর্তমানে বে‌শিরভাগ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। রপ্তানিও কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ঋণ প‌রি‌শো‌ধের বাড়তি চাপ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি করবে। এসব বিবেচনায় বাড়তি সুবিধার প্রস্তাব ক‌রা হ‌য়ে‌ছে। গত ৪ ফেব্রুয়া‌রি এসব দা‌বি জা‌নি‌য়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের কা‌ছে চিঠি দিয়ে‌ছে বিএবি।

এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি এক সার্কুলারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপিমুক্ত থাকার সুবিধা আর বাড়ানো হবে না। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে নিয়ম অনুযায়ী খেলাপি হয়ে পড়বেন। তবে ব্যবসায়ীদের কিস্তির পরিমাণের চাপ কমাতে সুযোগ দেওয়া হবে। মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে অবশিষ্ট মেয়াদের ৫০ শতাংশ অথবা দুই বছরের মধ্যে যেটি কম, সে পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আর চলমান ঋণ ও প্রণোদনার আওতায় বিতরণ করা ঋণ পরিশোধের বিদ্যমান নীতিমালা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই সার্কুলারের সংশোধন দাবি কর হয়েছে।

বিএবির দা‌বি, মোট ঋণের ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ চলমান বা তলবি ঋণ। অথচ এ বিষয়ে গত ৩১ জানুয়ারির সার্কুলারে কিছু বলা হয়নি। ফলে করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চলমান ঋণ পরিশোধের যে অতিরিক্ত সময় পেয়েছে, তা এখন একবারে পরিশোধ করতে হবে। কেউ না করলে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি মেয়াদোত্তীর্ণ বা খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবে। বিদ্যমান অবস্থায় অধিকাংশ ব্যবসায়ীই এক বছরে জমে থাকা সুদ-মুনাফা পরিশোধে ব্যর্থ হলে তারা খেলাপি হয়ে পড়বেন। ব্যবসা চালানোর জন্য ব্যাংক ঋণের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার সক্ষমতা হারাবেন। এ পরিস্থিতিতে দেশের ব্যবসার ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। সুতরাং ওই চলমান ঋণ পরিশোধযোগ্য অংশ শূন্য ডাউনপেমেন্টের মাধ্যমে মেয়াদি ঋণ হিসেবে ন্যূনতম তিন বছর পুনঃতফসিলের মাধ্যমে পরিশোধের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। 

মেয়াদি ঋণের অবশিষ্ট সময় দুই বছরের পরিবর্তে তিন বছর পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়ে চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, যেসব ঋণের অবশিষ্ট মেয়াদ খুবই কম, তাদের ক্ষেত্রে স্বল্প সময়ে বিরাট অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করা দুষ্কর হবে। ফলে ব্যাপক অংশ অনিচ্ছাকৃত খেলাপিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ রকম অবস্থায় ন্যূনতম আরও তিন বছর পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি করা হয়েছে।

বিএবি বলছে, দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখনও করোনার ভয়াবহ প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আগের মতো না হলেও সংক্রমণ একেবারে শেষ হয়নি। বর্তমানে অধিকাংশ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়পড়তা ৫০ শতাংশ বা তারও নিচের সক্ষমতায় চলছে। করোনার নেতিবাচক প্রভাবে ভোগ্যপণ্যের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদা ব্যাপকভাবে কমেছে। এতে ট্রেডিং তথা ব্যবসা খাতের প্রতিষ্ঠানের গড় বিক্রিতে ভীষণ প্রভাব ফেলেছে। ফলে তাদের দৈনন্দিন ব্যবসায়িক খরচ মিটিয়ে মুনাফা পর্যায়ে যাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানের ক্রয়াদেশ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। ইউরোপ-আমেরিকায় করোনার প্রকোপে সব রিটেইল বিক্রয় এ মুহূর্তে নিম্নগামী থাকায় এমন হয়েছে। এ রকম অবস্থায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রেখে বিদ্যমান ঋণখেলাপি হওয়ার সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখতে এ দুটি বিষয় বিবেচনার অনুরোধ করা হয়েছে।

এসআই/ওএফ