স্বদেশ ইনভেস্টমেন্টে নানা অনিয়ম
নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১ কোটি টাকা ঋণ এনে ৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা দিয়েছে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট। দুই বছরে একটি আইপিও ফাইল জমা দেয়নি এবং ভাউচার ছাড়া লেনদেনসহ নানা অনিয়ম করে যাচ্ছে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।
এসব অনিয়ম ধরা পড়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তদন্তে। অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় বিএসইসির কমিশনার আব্দুল হালিম স্বাক্ষরিত চিঠিতে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানার পাশাপাশি কোম্পানিটির পরিচালক মামুন আহমেদ ও এএএ হোল্ডিংসকে ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ৩০ অক্টোবরের মধ্য ফেরতের দিতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। জরিমানার কপি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিএসইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
চিঠিতে বলা হয়, গত বছরের ২৮ জুন বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক কাওসার আলী ও উপ-পরিচালক মোহাম্মদ এমদাদুল হকের পরিদর্শন দল স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের হিসাব, রেকর্ড, নথি, ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও অন্যান্য বিষয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা বিভিন্ন অনিয়মের আলোকে কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পরিদর্শন দলটি জানিয়েছে, প্রতি দুই বছরে কমপক্ষে ১টি আইপিও ফাইল দাখিলের বাধ্যবাধকতা থাকলেও স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট তা করেনি। এছাড়া প্রতি বছর কমপক্ষে ৫টি নতুন পোর্টফোলিও গঠনের নির্দেশনা পরিপালন করেনি ও গ্রাহকদের জন্য পৃথক ব্যাংক হিসাব খোলেনি।
বিজ্ঞাপন
এর বাইরে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্টের পরিচালক মামুন আহমেদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে অনিয়ম পেয়েছে কমিশনের পরিদর্শন দল। তারা ব্যাংক স্টেটমেন্টে দেখতে পায়, স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট ও মামুনের মধ্যে অনেক আর্থিক লেনদেন হয়েছে। কিন্তু এর কোনো ভাউচার নেই। এছাড়া নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাবেও এর তথ্য নেই। এ লেনদেনের ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টস বুকস মেইনটেইন করার জন্য কোন অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার পায়নি পরিদর্শন দলটি।
বিএসইসির দলটি মামুন ছাড়াও এএএ হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে বিভিন্ন সময় স্বদেশ ইনভেস্টমেন্টের আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পায়। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো ভাউচার এবং বোর্ড রেজ্যুলেশন নেই।
এএএ হোল্ডিংস লিমিটেডের থেকে ১ কোটি টাকা প্রাপ্তির বিপরীতে ৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রদান করে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট। অথচ যে আন্ডার রাইটার হওয়ার জন্য এই লেনদেনের কথা দাবি করছে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্ট, সেই ন্যাশনাল পলিমারের ইস্যু ম্যানেজার এএএ হোল্ডিংস না, ছিল এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। ফলে এই আর্থিক লেনদেনে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার) বিধিমালা ১৯৯৬ এর বিধি ৩৫ এর (এ), (বি) ও (সি) লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিদর্শন দলটি।
এ বিষয়ে শুনানিতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্টকে চলতি বছরের ২৩ মে চিঠি দেয় বিএসইসি। এতে ১৯ জুন নির্ধারিত শুনানির দিন কোম্পানিটির সিইও সৈয়দ মুজাহদিুল ইসলাম বলেন, ২০২০ সালের আগে পুঁজিবাজারের পতনের কারণে কয়েক বছর আইপিওর ফাইল জমা দিতে পারিনি, অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনার কারণে নতুন পোর্টফোলিও যোগ করতে পারিনি।
মামুনের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তিনি বলেন, আইপিওতে অংশগ্রহণ, কোম্পানি পরিচালনা ইত্যাদি কারণে মামুন আহমেদের কাছ থেকে সাময়িক ঋণ নেওয়া হয়েছিল। যা নেওয়ার বছরেই পরিশোধ করা হয়। যে কারণে আর্থিক হিসাবে এই লেনদেন দেখা যায়নি।
এএএ হোল্ডিংসের সঙ্গে লেনদেনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ন্যাশনাল পলিমারের রাইট শেয়ারের আন্ডার রাইটার ছিলাম। যেটার আন্ডার সাবস্ক্রিপশনের কারণে অনেক নিয়েছিলাম। এতে অনেক টাকার দরকার হয়েছিল। যে কারণে এএএ হোল্ডিংস থেকে সাময়িক ঋণ নিয়েছিলাম। যা পরবর্তীতে সুদসহ প্রদান করা হয়।
তবে স্বদেশ ইনভেস্টমেন্টের সিইওর এই ব্যাখ্যা কমিশনের কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। কমিশন বলছে, স্বদেশ ইনভেস্টমেন্টে মার্চেন্ট ব্যাংকার নিবন্ধন সনদের শর্ত ১১(ক) এবং ১১ (খ) সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন বিধিমালা ১৯৯৬ এর বিধি ২৯(২) এবং সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন বিধিমালা ১৯৯৬ এর বিধি ৩৫ লঙ্ঘন। এ পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন, বাজারে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা রক্ষার স্বার্থে মার্চেন্ট ব্যাংকারকে জরিমানা করা প্রয়োজন এবং সমীচীন বলে কমিশন মনে করে। যা কমিশনের ১৯৯৩ এর ধারা ১৮এর অধীন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ কারণে কমিশন স্বদেশ ইনভেস্টমেন্টকে শাস্তি স্বরূপ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
একই সঙ্গে ২০১৯ সালের ৪ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে কোম্পানির পরিচালক মামুন আহমেদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত ৯২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮২ টাকা আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। এছাড়া এএএ হোল্ডিংসকে প্রদত্ত অতিরিক্ত ৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ওই সময়ের মধ্যে ফেরত দিতে বলা হয়েছে।
এমআই/এসকেডি