দেশের পুঁজিবাজারে বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো মৌলভিত্তির শক্তিশালী কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রাক্তন সভাপতি রিজওয়ান-উর-রহমান।

তিনি বলেন, ‘আইন প্রয়োগ বা বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার অতীত ও বর্তমান উভয় কমিশনই কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।’

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশ (পিআরআই) এবং অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিভাগ (ডিএফএটি) যৌথভাবে আয়োজিত মাসিক ম্যাক্রোইকোনমিক ইনসাইটস (এমএমআই) সেমিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।

রাজধানীর বনানীতে পিআরআইয়ের অফিস সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. খুরশিদ আলম। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।  

রিজওয়ান-উর-রহমান আরো বলেন, বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে মূলধন সংগ্রহে পুঁজিবাজারের কোনও ভূমিকা নেই। বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দরকার বিশ্বস্ত নেতৃত্ব ও সুশাসন।

অনুষ্ঠানে পুঁজিবাজারের এই সমস্যার জন্য ১৯৯২ সালের একটি সিদ্ধান্তকে দায়ী করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ওইসময় তফশিলি ব্যাংকগুলিকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এটি একটি ‘আত্মঘাতী’ পদক্ষেপ ছিল, যা পুঁজিবাজারের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করেছে।’

ব্যাংক নির্ভরতা হ্রাস না হওয়া পর্যন্ত দেশের উন্নয়ন অধরা থাকবে বলেও মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) তথ্যমতে, দেশের পুঁজিবাজার থেকে ব্যবসায়িক মূলধন সংগ্রহের হার বার্ষিক চাহিদার ১ শতাংশেরও কম। গত ১৬ বছরে, প্রায় ১৫০টি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে কোম্পানিগুলো মাত্র ১১ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। অথচ দেশের প্রথম সারির যেকোনো একটি তফশিলি ব্যাংক থেকেই প্রতিবছর ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে, দেশের পুঁজিবাজারের বাজার মূলধনও জিডিপির অনুপাতে ক্রমহ্রাস পাচ্ছে। বর্তমান জিডিপির অনুপাতে মাত্র ৭.২ শতাংশ, যা ২০১০ সালেও ৪০ শতাংশ ছিল। অর্থনৈতিকভাবে দুরবস্থায় পতিত হওয়া শ্রীলঙ্কাতেও জিডিপির অনুপাতে বাজার মূলধন ২২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে জিডিপির আকার ছাড়িয়ে গেছে বাজার মূলধন। দেশটিতে এখন পুঁজিবাজারকে কেন্দ্র করে কোটিপতির সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে।

এমএমএইচ/বিআরইউ