বস্ত্র খাতের কোম্পানি আনলিমা ইয়ার্ন ডায়িং লিমিটেড কয়েক বছর ধরে ব্যবসা ভালো করতে পারছে না। এতে কোম্পানিটি আর্থিকভাবে দুরবস্থায় পতিত হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে কোম্পানির বিদ্যমান মোট সম্পদের চেয়েও দায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকার বেশি। এতে কোম্পানিটি ভবিষ্যতে তার কার্যক্রম পরিচালন করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে নিরীক্ষক। তবে, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা ব্যবসা সম্প্রসারণ ও বিদ্যমান সমাস্যাগুলো সমাধান করতে উদ্যোগ নিয়েছে।

নিরীক্ষকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে আনলিমা ইয়ার্নের সংরক্ষিত মুনাফা তহবিলে (রিটেইনড আর্নিংস) ঘাটতি পরেছে ৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এ ছাড়া, এই অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির বিদ্যমান মোট সম্পদের (কারেন্ট অ্যাসেট) চেয়ে দায়ের পরিমাণ ৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বেশি দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে কোম্পানিটি তার কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যর্থ হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে নিরীক্ষক। 

কোম্পানিটি এখনও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের পূর্ণাঙ্গ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। তবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানির মোট সম্পদের পরিমাণ ৩৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিদ্যমান সম্পদের (কারেন্ট অ্যাসেট) পরিমাণ ১৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। নিরীক্ষক বলছে, কোম্পানির এই বিদ্যামান সম্পদের চেয়ে দায় ৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বেশি।

তবে, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা খুব শিগগিরই তাদের ব্যবসা পুরোদমে চালিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। কোম্পানির আর্থিক অবস্থা এবং কর্মক্ষমতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা এবং কৌশল নেওয়া হয়েছে। তারা তাদের উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য যোগাযোগ করছে। উৎপাদন খরচ কমাতেও তারা বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। 

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, তারা পণ্যের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন বৃদ্ধি এবং তাদের ইউনিটগুলোর বিক্রয়ের পরিমাণ বাড়াবে। রপ্তানি আদেশ বৃদ্ধির জন্যও কাজ করবে। এর মাধ্যমে শিগগিরই নেতিবাচক ধারা থেকে বেরিয়ে আসবে এবং দায়গুলোকে অতিক্রম করে বর্তমান সম্পদের পরিমাণ শক্তিশালী করবে।

এদিকে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে কোম্পানির সংরক্ষিত মুনাফা তহবিলে আরও ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ঘাটতি বেড়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে সংরক্ষিত মুনাফা তহবিলে মোট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা। 

যদিও আলোচ্য তিন মাসে কোম্পানির বিক্রি বাবদ আয় বেড়েছে কোটি টাকার বেশি। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে কোম্পানির বিক্রি বাবদ মোট আয় হয়েছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে কোম্পানির ৩ মাসে বিক্রি বাবদ আয় বেড়েছে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। 

আয় বাড়ায় আলোচিত ৩ মাসে কোম্পানির লোকসানের পরিমাণও কিছুটা কমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে কোম্পানির নিট লোকসান হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে এই লোকসান হয়েছিল ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে কোম্পানির ৩ মাসের লোকসান কমেছে ৩১ লাখ টাকা।

কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সর্বশেষ পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে ৩ বছরেই কোম্পানির লোকসান হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোম্পানির নিট লোকসান হয়েছে ৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আগের বছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। তারও আগের বছরে মাত্র ১৪ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে নিট লোকসান হয়েছিল ৩৩ লাখ টাকা। তার আগের বছরে মাত্র ৮ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছিল। 

১৯৯৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটি ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের আগে কোম্পানিটি ১০ থেকে ১২ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। তবে ব্যবসা খারাপ হওয়ায় ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বশেষ বিনিয়োগকারীদের ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। এরপর থেকে লোকসানের কারণে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি।

২০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের এই কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ১৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৮০০। এর মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি মালিকানা রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। অর্থাৎ কোম্পানিটি কোনো কারণে বন্ধ হয়ে গেলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

এমএমএইচ/এনএফ