ছাত্রীকে যৌন হয়রানি
আবু সুফিয়ান ইস্যুতে জরুরি সভা ডেকেছেন কমিশনার
ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ভিকারুননিসা স্কুলের বসুন্ধরা শাখার ইংরেজির শিক্ষক আবু সুফিয়ানকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত কমিটি। বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তদন্ত কর্মকর্তা দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার ভিকটিম শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত কমিটি। ভিকারুননিসা স্কুল ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিস সূত্রে জানা গেছে, আজ রাত ৯টায় জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের গর্ভনিং বডির সভাপতি ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার এ সভা ডেকেছেন। এতে স্কুলের অধ্যক্ষ, গর্ভনিং বডির সদস্যেদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। সভায় ওই শিক্ষককে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করেছেন এমন অভিযোগে গত ২৭ আগস্ট ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই ছাত্রীর বাবার। অভিযোগ আমলে নিয়ে ৩১ আগস্ট সহকারী কমিশনার আল আমিন হালদারকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। এরপর ২ সেপ্টেম্বর (শনিবার) বসুন্ধরা শাখার ১০ জন শিক্ষক, শাখা প্রধান, প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষাসহ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নেন তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর মঙ্গলবার ভিকটিম ওই ছাত্রীর বক্তব্য গ্রহণ করে কমিটি। সর্বশেষ আজ বুধবার অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সুফিয়ানের বক্তব্য গ্রহণ করেছে কমিটি। তদন্তের ফরমাল কাজ শেষ। আগামীকাল প্রতিবেদন লেখার কাজ শুরু করবেন কর্মকর্তা। এরপর তা আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশনারের কাছে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন : শিক্ষকের এসএমএসের ভাষা দেখে বোবা হয়ে যাই : ভিকারুননিসা ছাত্রীর মা
এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষককে বরখাস্ত না করা ও তদন্তে ধীরগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষক-অভিভাবকরা। তারা বলেন, তাকে শাস্তি হিসেবে বসুন্ধরা শাখা থেকে মূল ক্যাম্পাসে বদলি করে আরও পুরস্কৃত করা হয়েছে। তিনি ওইখানে বসে নানা ধরনের প্রভাব বিস্তার করছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামার জন্য এসএমএস করছেন। বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে ওই ছাত্রীর বাবা মাকে হুমকি দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার আল আমিন হালদার কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সুফিয়ানের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) কেকা রায় চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এখনও তদন্ত প্রতিবেদন পাইনি এতটুকু জানি। কমিটি কী কাজ করছে, কাকে কখন জিজ্ঞাসাবাদ করছে তা আমি জানি না।
নিরাপত্তাহীনতা শিক্ষার্থীর পরিবার
বিভাগীয় কমিশনারের কাছে অভিযোগ দায়ের করার ৯ দিন পার হয়ে গেলেও অভিযুক্তকে শাস্তির আওতায় না আনায় নিরাপত্তাহীনতা ভুগছেন ওই ছাত্রীর পরিবার। ইতোমধ্যে ওই ছাত্রীর বাবাকে দুই দফা হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি থানায় সাধারণ ডায়রি করার জন্য অনুমতি চাইলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তার অনুমতি না দিয়ে বলছে আপনার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সব বিষয়ে কমিশনার স্যার অবগত।
আরও পড়ুন : ভিকারুননিসার ছাত্রীকে শিক্ষকের যৌন হয়রানি
এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক তার পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মোবাইলে এসএমএস পাঠাচ্ছেন। এসএমএসে আগের মতো তার পক্ষে আন্দোলন করতে শিক্ষার্থী অভিভাবকদের আহ্বান জানাচ্ছেন। এর আগে ২০২২ সালেও তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর তাকে অন্য শাখায় বদলি করা হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের দিয়ে আন্দোলন করিয়ে তার বদলির আদেশ বাতিল করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, তাকে মূল ক্যাম্পাসে সংযুক্ত করা হয়েছে। এটাও এ ধরনের ধরনের শাস্তি। তিনি কাকে এসএমএস পাঠাচ্ছেন সেটা তার ব্যাপার। তিনি কাউকে এসএমএস পাঠালেই তারা রেন্সপন্স (সাড়া) দিতে হবে কেন?
অভিযুক্তকে দ্রুত বহিষ্কার দাবি
বসুন্ধরা শাখার শিক্ষকরা জানান, এর আগে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি অভিযোগ ওঠার পর তাকে অন্য শাখায় বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে আন্দোলনে নামান এবং স্কুল কর্তৃপক্ষকে জিম্মি করে তার বদলি আদেশ প্রত্যাহার করান। এবারও তার বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করার লিখিত অভিযোগ ও তদন্ত কমিটি হওয়ার পরও তাকে বরখাস্ত না করে মূল শাখায় নিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
দিবা শাখার ইংরেজি বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন, আমরা ৩০ জনের বেশি শিক্ষক অধ্যক্ষ ও তদন্ত কমিটির কাছে স্পষ্ট করে বলে এসেছি আবু সুফিয়ানের সঙ্গে আমরা কাজ করব না। তাকে শাস্তির আওতায় আনা না হলেও অন্য শিক্ষকরাও এ ধরনের ঘটনা ঘটাবে। তাকে কেন বরখাস্ত করা হয়নি প্রশ্ন তুলেন তিনি।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীর বাবা ২৯ আগস্ট বিভাগীয় কমিশনারের সাথে দেখা করে অভিযোগ দেওয়ার পর এখনও নানা ভাবে শিক্ষার্থীর বাবা মাকে ভয় দেখানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীর বাবা এই বিষয় তদন্ত কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। স্কুলের অনেক শিক্ষককেও জানিয়েছেন।
এনএম/এসকেডি