৩ দফা দাবিতে আল্টিমেটাম
৩০ নভেম্বর থেকে ফের কর্মবিরতির ডাক প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের
৩০ নভেম্বর থেকে আবারও পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। তিন দফা দাবি নিয়ে গত ১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তের প্রজ্ঞাপন বা দৃশ্যমান অগ্রগতি ২৯ নভেম্বরের মধ্যে না এলে এ কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের নেতারা।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ঢাকার শাহবাগে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের শান্তিপূর্ণ কলম সমর্পণ কর্মসূচিতে পুলিশের অতর্কিত সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার সেল, জলকামান, রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জে শতাধিক শিক্ষক গুরুতর আহত হয়েছেন। এই হামলায় অনেক শিক্ষকের হাত-পা ভেঙে যায়, কারও চোখ নষ্ট হয়, অনেকে রাবার বুলেট বা স্প্লিন্টারে বিদ্ধ হন এবং অনেকের শরীরের অংশ পুড়ে যায়। এই ঘটনায় আহতদের যথাযথ চিকিৎসা এবং নিহত শিক্ষিকার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংগঠনের নেতারা বলেন, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক হিসেবে স্নাতক/সমমান যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা ১৩তম গ্রেডে চাকরি করছেন। যেখানে কম যোগ্যতার অনেক পদে ১০ম গ্রেড রয়েছে। তারা জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাব–ইন্সপেক্টর, কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদ সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নার্সসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের স্নাতক বা সমমান পদগুলোতে ১০ম গ্রেড রয়েছে। কিন্তু প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা এখনও পিছিয়ে।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জাতীয় বেতন স্কেল–২০১৫ অনুযায়ী একই পদে ১০ বছর পূর্তিতে চাকরি সন্তোষজনক হলে ১১তম বছর থেকে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার কথা। তবে লাখ লাখ সহকারী শিক্ষক এই সুবিধা পাচ্ছেন না। ২০১৪ ও ২০২০ সালে সহকারী শিক্ষকের বেতনস্কেল ১৩তম গ্রেডে উন্নীত হওয়ায় এই মূল গ্রেডকে উচ্চতর গ্রেড হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে—ফলে ১০ বছর ও ১৬ বছরের উচ্চতর গ্রেড দেওয়া বন্ধ রয়েছে। সংগঠনটি এই জটিলতা অবিলম্বে নিরসনের দাবি জানায়।
প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার কাঠামো তুলে ধরে সংগঠনটি জানায়, দেশে প্রধান শিক্ষক পদ রয়েছে ৬৫ হাজার ৫৫৬টি, আর সহকারী শিক্ষক পদ তিন লাখ ৮৭ হাজারের বেশি। প্রধান শিক্ষক পদে ৮০ শতাংশ পদোন্নতি ও ২০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের বিধান থাকলে লাখ লাখ সহকারী শিক্ষক পদোন্নতির সুযোগ পাবেন না এমন আশঙ্কা করছি। তাই প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতির দাবি জানানো হয়।
সংগঠনের নেতারা বলেন, ১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন দফা দাবি- ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন, ১০ ও ১৬ বছরের উচ্চতর গ্রেড প্রদান এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি। এই তিন দাবির প্রজ্ঞাপন বা দৃশ্যমান অগ্রগতি ২৯ নভেম্বরের মধ্যে প্রকাশ না হলে ৩০ নভেম্বর থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে।
এছাড়া আহত শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সুচিকিৎসা ও নিহত শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তারের পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ পূর্ণ পেনশন প্রদানেরও দাবি জানানো হয়।
উল্লেখ্য, শিক্ষকদের আন্দোলনের তিনটি প্রধান দাবি হচ্ছে—
১. সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডে বেতন প্রদান,
২. উচ্চতর গ্রেডের জটিলতার স্থায়ী সমাধান,
৩. সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা প্রদান।
আরএইচটি/এমএন