‘চিত্রামহল’ সিনেমা হল

পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড়ের পাশেই চিত্রামহল সিনেমা হল। গুলিস্তান থেকে সদরঘাট যেতে ইংলিশ রোডে অবস্থিত এটি। হলটির দেয়াল জুড়ে রয়েছে স্মৃতির ছোঁয়া, যা দর্শক হৃদয়ে আলাদা স্থান করে নেবে। আনুমানিক ব্রিটিশ শাসনামল থেকে তাঁতীবাজারের ব্যবসায়ী নাগর পোদ্দারের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে হলটি। পরবর্তীতে এর মালিক হিসেবে দায়িত্ব নেন চলচ্চিত্র পরিচালক কাজী জহির।

জানা যায়, ছাত্রাবস্থায় কাজী জহিরের সিনেমার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। সে জন্যে অধ্যাপনা ছেড়ে, সিনেমা নিয়ে কাজ শুরু করেন। তিনি দাম্পত্য জীবন কাটান চলচ্চিত্র অভিনেত্রী চিত্রা সিনহার সঙ্গে। ‘অবুঝ মন’, ‘নয়ন তারা’, ‘ময়নামতি’সহ অনেক সিনেমা পরিচালনা করেছেন কাজী জহির। আর প্রযোজনায় ছিলেন চিত্রা সিনহা। পরর্বতীতে স্ত্রী নামের সঙ্গে মিল রেখে তিনি হলটির নামকরণ করেন চিত্রামহল। পরে তার প্রোডাকশন হাউসের নামও রাখেন চিত্রা ফিল্মস। অনেক কালজয়ী বাংলা সিনেমার সঙ্গে যুক্ত ছিল এই প্রতিষ্ঠান। চিত্রামহল প্রথমে নগর মহল নামে যাত্রা শুরু করে। ঢাকার প্রথম সারির সিনেমা হলগুলোর মধ্যে অন্যতম এই চিত্রামহল। হলটির বর্তমান মালিক কাজী জহিরের ছেলে কাজী আজহার।

কাজী জহির ও তার নির্মিত দুটি সিনেমা

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, সিনেমা চলছে, তবে দর্শক মাত্র ৭ জন। হলে দর্শক সংখ্যা কমছে প্রতিনিয়ত। আগে সিনেমা শুরু হওয়ার আগে থেকে হলের সামনে দর্শকদের ভিড় জমত। এখন সেই চিত্র আর নেই। এখন শোগুলোতে ২০-৩০ জন দর্শক পাওয়াও মুশকিল। হলটির দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন প্রায় ১০ জন মানুষ। আসন রয়েছে ৭০০। সময়ের চাহিদার আলোকে নেই ভালো মানের সিনেমা, প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় হাতের নাগালে সিনেমা থাকাসহ বিভিন্ন কারণে হলে আসে না দর্শক। দোতলা ভবনের হলটির দুই পাশে দুটি ছোট বারান্দাসহ রয়েছে পেঁচানো সিঁড়ি। নিচতলায় দুইপাশে টিকিট কাউন্টার। শাপলা, সাগর, ঝিনুক নামে রয়েছে ক্যাটাগরি। তিন ক্যাটাগরিতে সিনেমা প্রদর্শিত হয়। দোতলায় অপেক্ষা করার জন্য আছে পুরানো দিনের সোফা-চেয়ার। ‘মধু মিলন’, ‘অবুঝ মন’, ‘নয়ন তারা’, ‘ময়নামতি’, ‘বধূ বিদায়’, ‘ফুলের মালা’ প্রভৃতি সিনেমার পোস্টার দেয়ালে ঝোলানো। হলের ভেতরে ডিজিটাল পর্দা ও প্রক্ষেপণের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রক্ষেপণ ঘরে পুরাতন মেশিনটি এখনো রয়েছে। সিট অনুযায়ী দাম ২০, ২৫ ও ৩০ টাকা।

হলে বসে সিনেমা দেখছেন গুটি কয়েক দর্শক

হলটির দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা মেরাজ আহমেদ বলেন, “হলে দর্শক নেই তেমন, আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। বড়পর্দা থেকে সাউন্ড সিস্টেমসহ সিনেমা হলের অনেক কিছু পাল্টেছে। ‘অভিসার’সহ অনেক সিনেমা হল বন্ধ। দর্শক না থাকলে স্টাফদের খরচ কিভাবে দেবো? আর দর্শক না পেলে তো হল চালানো কষ্টকর।”

হলটির ব্যবস্থাপক ইকবাল ইউসুফ বলেন, ‘একজন টিকেট কাটলেও শো চলে। আমরা শো বন্ধ করি না। বাংলাদেশেই দর্শক নেই, ছবির মান ভালো না তাই দর্শক আসে না। সিনেমা নেই বলে ‘মধুমিতা’, ‘বলাকা’ হল তো খোলেই নাই। নতুন সিনেমার অভাবে আমাদের এখন পুরাতন সিনেমা চালাতে হয়। সরকার হলে হিন্দি সিনেমা চালানোর ব্যবস্থা করছে। সবাই হিন্দি ছবি চালালে আমরাও চালাব।’

আরআইজে