বক্স অফিসের কথা ভেবে কোনো দিনও ছবি নির্মাণ করেননি—স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন। তার মতে এমন হলে কোনো দিনই ছক ভাঙতে পারতেন না বলে মত। ওপার বাংলার জনপ্রিয় চলচিত্র নির্মাতা সৃজিত মুখার্জি তার সৃষ্টি নিয়ে কথা বলেছেন দেশটির একটি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে।

তার বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে এই পূজায় ‘দশম অবতার’ নিয়ে কি চাপে রয়েছেন জনপ্রিয় এই নির্মাতা?

এদিকে হলিউড-বলিউড রমরমা। বিশ্ব জুড়ে যে ছবিগুলো সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করছে, সেগুলো এই ছক ভেঙেই তৈরি হচ্ছে। এ বছর ওপার বাংলায় এখনও হিট ছবির সংখ্যা হাতেগোনা। 

সৃজিত বলেন, ‘মাল্টিস্টারার ছবি আমি আগেও করেছি। এটা নতুন কিছু নয় আমার জন্য। এর জন্য যা প্রয়োজন, তা হলে একটা ভাল ব্যালেন্সড স্ক্রিপ্ট। যেটা পড়ে কোনও অভিনেতা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে না। কারও যেন মনে না হয় যে তার কিছুই করার নেই। আমার এই ছবির চিত্রনাট্য পড়ে চার জনেই (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, যিশু সেনগুপ্ত এবং জয়া আহসান) কিন্তু একবারে ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছিল। কারণ চার জনেরই আলাদা জায়গা আছে। ‘রাজকাহিনী’, ‘জুলফিকর’, ‘এক যে ছিল রাজা’, ‘শাহজাহান রিজেন্সি’— আমি কিন্তু প্রথম থেকেই বার বার বহু অভিনেতাকে একসঙ্গে করেছি। এটা খুবই ভুল ধারণা যে, বাংলায় বড় অভিনেতারা একসঙ্গে কাজ করবে না। তবে তেমন চিত্রনাট্য দিতে হবে।’

চাপে রয়েছেন? প্রশ্ন শুনেই সৃজিত বলেন, ‘প্রত্যেক পরিচালকের আলাদা দর্শক আর মাপকাঠি থাকে। আমরা তো কোনও ক্লাসরুমে নেই। এই সব ‘ফার্স্ট বয়’-এর তকমা নিয়ে আমি একদমই ভাবি না। ‘এক্স= প্রেম’ বেশি মানুষ দেখেননি। পরে ওটিটি-তে দেখে অনেকে প্রশংসা করেছেন। তার আগে করোনার সময় ৫০ শতাংশ সিট নিয়েও ‘কাকাবাবু প্রত্যাবর্তন’ ভালই করেছিল। তবে আশা করছি, সব দিক দেখলে এ বারের ছবি থেকে একটু বেশি প্রত্যাশা রাখা যায়। তবে বাংলায় সব ছবিকে একসঙ্গে ভাল করতে হবে। এই পূজায় সেই জায়গাটা রয়েছে। চারটা ছবিই ভাল চললে আমাদের জোরের জায়গা তৈরি হবে।’ 

বক্স অফিসে জোরের জায়গা তৈরি করার তাগিদেই কি আরও ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ ছবি করার তাগিদ? সৃজিতের স্পষ্ট উত্তর, ‘আমি তো কোনও দিন সেফ খেলিনি। ইদানীং ফ্যামিলি ড্রামা খুব চলছে। যাকে চেম্বার্ড ড্রামাও বলা যায়। যেখানে মূল চরিত্রের বয়স হয়তো ৫০ বা ৬০-এর উপরে। তাই দেখা যাচ্ছে, বাংলা ছবির দর্শকের বয়সও সেই রকমই। কিন্তু তারা তো একা সিনেমা হল-এ যেতে পারবেন না। তাই পরিবারের বাকিরাও যাচ্ছেন। এই মডেলটা কাজ করছে। 

কিন্তু তা বলে তো আমি আমার ঘরানা থেকে সরে আসতে পারি না। আই উইল নেভার প্লে ইট সেফ এভার। আমি আমার মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাব। নিজের মতো ছবি বানিয়ে যাব। লোকে বলে কমবয়সিরাই আমার মূল দর্শক। কিন্তু সমস্যা হল, কম বয়সীরা কিন্তু প্রৌঢ় দর্শকদের মতো অতটা লয়্যাল নয়। তারা খুব শিফ্‌ট করে। কারণ, তাঁদের হাতে অনেক বিকল্প। তাই তাঁদের ধরে রাখাটাই চ্যালেঞ্জ। কিছু ছবি যদি তাঁদের ধরতে না পারে, তাতে আমি আশ্চর্য হই না। কিন্তু কিছু ফ্যামিলি ড্রামা চলছে বলেই যে আমি সেটাই শিফ্‌ট করে যাব, সেটা আমি করব না। আমি বিবিধ বিষয় নিয়ে ছবি করব। কিন্তু নিজের জোনে করব।’

সৃজিতের পূজায় জোড়া ছবি মুক্তি। ‘দশম অবতার’ ছাড়াও একই দিনে হইচই-এ মুক্তি পাচ্ছে তারা পরিচালিত ‘দুর্গ রহস্য’। তার পর দেবের সঙ্গে তার পরবর্তী ছবি এবং পরবর্তী ফেলুদা নিয়ে কাজ শুরু করবেন তিনি। আপাতত বাংলার কাজ নিয়েই বেশি ব্যস্ত সৃজিত।

সূত্র: আনন্দবাজার

এমএসএ