গত কয়েক বছরে ২০২০ সাল ছিল ঢালিউডের অন্যতম সম্ভাবনাময় বছর। ২০১৯ সালে ঢালিউডের বেশিরভাগ তারকা শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। যেই সিনেমাগুলো মুক্তির বছর ছিল ২০২০ সাল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মহামারি করোনার কারণে থমকে যায় সব। 

প্রতিবছরই সিনেমা মুক্তির সংখ্যা কমছে ঢালিউডে। অনেক মাস সিনেমা শূন্যও গিয়েছে। তবে এই বছর সবচেয়ে কম সিনেমা মুক্তির রেকর্ড গড়েছে। চলতি বছর মুক্তি পায় মাত্র ১৬টি সিনেমা। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সিনেমা নিয়ে আলোচনা করা হলো। 

এবছর ঢালিউডে মুক্তি পাওয়া প্রথম সিনেমা ‘জয় নগরের জমিদার’। ১০ জানুয়ারি মুক্তি পায় সিনেমাটি। এম শাখাওয়াৎ হোসেন পরিচালিত এ সিনেমার নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ইতালি প্রবাসী আবু সাঈদ খান। প্রযোজনাও করেছেন তিনি। তবে ব্যবসা সফল হয়নি এই সিনেমা। 

সম্ভানাময় বছরের দ্বিতীয় মাসে সিনেমার সংখ্যা ছিল ৩টি। সিনেমাগুলো গণ্ডি, বীর ও হৃদয়জুড়ে। এরমধ্যে ‘গণ্ডি’ সিনেমাটি আলোচনা তৈরি করেলেও ব্যবসা সফল হয়নি। ফাখরুল আরেফীন পরিচালিত এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন সূবর্ণা মুস্তাফা ও সব্যসাচী। দুই বাংলার গুণী দুই অভিনয়শিল্পীর জন্য সিনেমাটি আলোচনায় আসে। এই সিনেমায় আরো অভিনয় করেছেন মাজনুন মিজান ও অপর্ণা ঘোষ। 

চলতি বছর ‘বীর’কে প্রথম হিট সিনেমা বলা যায়। যদিও শাকিব খানের সিনেমা হিসেবে আশানুরূপ সফলতা আসেনি। এই সিনেমার মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর পরিচালানা করলেন কাজী হায়াৎ। এছাড়াও এই পরিচালকের সিনেমায় প্রথমবার অভিনয় করেছেন শাকিব খান। 

‘হৃদয়জুড়ে’ সিনেমাটি পরিচালনা করেন রফিক শিকদার। এই সিনেমায় জুটি বাঁধেন নিরব ও কলকাতার প্রিয়াঙ্কা সরকার। এই সিনেমা দিয়ে প্রথমবার বাংলাদেশের সিনেমা দেখা যায় প্রিয়াঙ্কাকে। ব্যবসায়িক সফলতা পেতে ব্যর্থ সিনেমাটি।

করোনার কারণে লকডাউনের জন্য আটকে যায় অনেক সিনেমা। লকডাউনের আগে ৬ মার্চ তিনটি সিনেমা মুক্তি পায়। এরমধ্যে রয়েছে চলো যাই, শাহেনশাহ ও হলুদবনি। 

‘শাহেনশাহ’

২০১৯ সাল থেকে ‘শাহেনশাহ’ মুক্তির কথা চলছিল। বিভিন্ন সময় মুক্তির তারিখ ঘোষণা দিলেও পিছিয়েছে বারবার। অবশেষে ৬ মার্চ মুক্তি পায় তারকাবহুল এই সিনেমা। শামিম আহমেদ রনি পরিচালিত এই সিনেমায় অভিনয় করেন শাকিব খান, নুসরাত ফারিয়া, রোদেলা জান্নাত, আহমেদ শরীফ, মিশা সওদাগর, অমিত হাসান প্রমুখ। 

‘শাহেনশাহ’ মুক্তির পর বেশ সাড়াও ফেলে সিনেমাটি। তবে কয়েকদিনের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘোষণা আসে। এতে আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারেনি ‘শাহেনশাহ’। লকডাউন শেষে আবারো মুক্তি দেওয়া হয় সিনেমাটি। 

করোনার প্রভাব বাড়তে থাকায় মার্চের শেষে লকডাউন ঘোষণা হয় সারাদেশে। বন্ধ হয়ে যায় সকল বিনোদন কেন্দ্র। শুধু তাই নয়, শুটিংও বন্ধ হয়ে যায়। মুক্তি প্রতিক্ষিত ২৬টি সিনেমা আটকে পড়ে। এতে আটকে যায় প্রযোজকদের লগ্নি। অন্যদিকে হল মালিকদের ব্যবসায় ধ্বস নামে। 

লকডাউন খুললেও সিনেমার শুটিং ও মুক্তির ঘোষণা আসতে আরো দেরি হয়। অবশেষে অক্টোবর থেকে সিনেমা মুক্তি দেয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। 

ঘোষণার আসার প্রথম সপ্তাহে মুক্তি পায় ‘সাহসী হিরো আলম’ সিনেমাটি। যদিও বেশিরভাগ হল মালিকরা হিরো আলমের সিনেমা মুক্তি দিতে নারাজ ছিলেনস। তাই অনেক হলে চালানো হয় পুরোনো সিনেমা। এখন পর্যন্ত অনেক হল বন্ধ রয়েছে। 

এই সমস্যা কারণ হিসেবে ‍প্রযোজকদের দায়ী করেছেন হল মালিকরা। অন্যদিকে প্রযোজকরা জানান, এমন সময় সিনেমা মুক্তি দিয়ে লোকসান গুনতে চান না তারা। 

‘ঊনপঞ্চাস বাতাস’

লকডাউনের পর আলোচিত সিনেমা ‘ঊনপঞ্চাস বাতাস’। এই সিনেমার মাধ্যমে বড়পর্দায় অভিষেক হয় শার্লিন ফারজানার। ছোটপর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী এই সিনেমার জন্য ছেড়ে দেন নাটক। ২৩ অক্টোবর মুক্তি পায় ‘ঊনপঞ্চাস বাতাস’। মুক্তির পর বেশ আলোচনা তৈরি করে সিনেমাটি। ছোটপর্দার নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের প্রথম সিনেমা এটি। প্রশংসায় ভাসলেও করোনার কারণে খুব বেশি হলে মুক্তি পায়নি এই সিনেমা। 

সিনেমা মুক্তির এমন অবস্থায় হতাশ ইন্ডাস্ট্রি। তবে বছরের শেষ মাসে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখা যায়। ডিসেম্বরে মুক্তি পায় তিনটি সিনেমা। এরমধ্যে রয়েছে ‘বিশ্বসুন্দরী’, ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ ও ‘নবাব এলএলবি’। প্রতিটি সিনেমা বেশ আলোচনা তৈরি করে। 

‘বিশ্বসুন্দরী’

জনপ্রিয় নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর প্রথম সিনেমা ‘বিশ্বসুন্দরী। এই সিনেমায় জুটি বাঁধেন সিয়াম আহমেদ ও পরীমনি। মুক্তির পর বেশ প্রসংশিত হয় এই সিনেমা। এটি মুক্তি পায় ২৫টি হলে। 

‘রূপসা নদীর বাঁকে’ সিনেমা দিয়ে দীর্ঘদিন পর পরিচালনায় এলেন তানভীর মোকাম্মেল। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়, অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন বামপন্থীরা। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে বামপন্থীদের অনেক আত্মত্যাগ করতে হয়েছে। এমনই এক গল্পে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। সিনেমা হল ছাড়াও পাবলিক লাইব্রেরিতে প্রদর্শনী হয় এই সিনেমার। 

‘রূপসা নদীর বাঁকে’

বছরের শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘নবাব এলএলবি’। শাকিব খানের বছরের তৃতীয় সিনেমা। পরিচালনা করেছেন অনন্য মামুন। মুক্তির পর সামলোচনা তৈরি করে সিনেমাটি। 

নবাব এলএলবি’ সিনেমায় পুলিশের ভূমিকাকে হেয় করার অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই অভিযোগে পর্নোগ্রাফি আইনে সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়েছে সিনেমাটির পরিচালক অনন্য মামুনকে। এছাড়াও গ্রেপ্তার হয়েছেন অভিনেতা শাহীন মৃধা।

সম্ভাবনাময় এই বছরে বড় ধাক্কা করোনার মহামারি। পুরো বিশ্বের সিনেমার ইন্ডাস্ট্রির মত ধ্বস নামে ঢালিউডে। দেশের সিনেমার বেহাল অবস্থায় এই ধাক্কা অনেকটা থামিয়ে দেয় পথচলা। এখনো হলগুলো পুরোদমে চালু হয়নি। দর্শকরাও হলে সিনেমা দেখতে আগ্রহী হচ্ছেন না। ঢাকার সিনেপ্লেক্সগুলোতে দর্শকদের ভির থাকলেও দেশের বেশিরভাগ হল এখনো দর্শকশূন্য। 

এমন অবস্থায় সকলের প্রত্যাশা নতুন বছরকে ঘিরে। সবার প্রত্যাশা নতুন বছরে ঘুরে দাঁড়াবে ইন্ডাস্ট্রি। ২০২০-এর পিছিয়ে যাওয়াকে আরো সামনে নিয়ে যাবেন সবাই।

এমআরএম