গোপনে ঢাকায় এসে শ্যুটিং করায় কলকাতার নির্মাতা রাহুল মুখার্জিকে শাস্তিস্বরূপ তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল টালিউড নির্মাতাদের সংগঠন ‘ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’। পরে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ডিরেক্টরস গিল্ড। কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। রাহুল মুখার্জির ওপর নিষেধাজ্ঞা তোলায় আপত্তি জানায় ফেডারেশন। ফলে ফেডারেশন পক্ষের টেকনিশিয়ানরা রাহুলের উপস্থিতিতে কাজ করতে অস্বীকার করে।

রাহুল মুখার্জির এই ঘটনায় এখন দু ভাগ হয়েছে ইন্ডাস্ট্রি। এবার ফেডারেশনের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন পরিচালকেরা। দাবি না মানলে, সঠিক সমঝোতা না হলে, আগামী সোমবার থেকে কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দেন তারা।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, ডিরেক্টর্স গিল্ড নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও ছবির শ্যুটিংয়ে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন পরিচালক রাহুল মুখার্জি। শনিবার থেকে টেকনিশিয়ান্স স্টুডিওতে নতুন ছবির শ্যুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল রাহুলের। সেই মতো সকাল সকাল হাজির হন পরিচালক রাহুল, অভিনেতা প্রসেনজিৎ, অনির্বাণসহ অন্য অভিনেতারা। কিন্তু সেখানে শ্যুটিংয়ে অনুপস্থিত থাকে টেকনিশিয়ানরা। এমতাবস্থায় টেকনিশিয়ানদের অনুপস্থিতিতে শ্যুটিংয়ে বাধা পড়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরিচালকেরা। তাই তো এদিন স্টুডিও পাড়ায় একসঙ্গে কর্মবিরতির ডাক দেন পরিচালকদের সবাই।

এসময় কাজ বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়ে পরিচালক রাজের বক্তব্য, ‘রাহুলের ছবির শ্যুটিং শুরু না হলে কোনও পরিচালক সোমবার থেকে শ্যুটিং ফ্লোরে যাবেন না।’

রাজ বলেন, ‘পরিচালক ছাড়া কি কাজ হয়? এটা অপমান। পরিচালক নিজের যোগ্যতায় কাজ নিয়ে আসেন, সবাই তাতে লাভবান হন। রাহুলকে যেভাবে অপমান করা হল, তাতে সব পরিচালকদের অপমান।’

প্রসেনজিৎ এবং অনির্বাণের সঙ্গেই শ্যুটিং শুরু করার কথা ছিল রাহুলের। সকাল থেকে তারা দাঁড়িয়ে রয়েছেন টেকনিশিয়ান্স স্টুডিওতে। তাদের পাশে থাকতে সেখানে একে একে এসে পৌঁছান দেব, সৃজিত মুখার্জি, কৌশিক গাঙ্গুলি, পরমব্রত চ্যাটার্জিরা। দেব জানান, সুস্থ পরিবেশে যাতে কাজ শুরু করা যায়, সেই চেষ্টাই করছেন। তিনি বলেন, ‘কাজ আটকানো বা কাজ বন্ধ রাখার বিরুদ্ধে আমরা। আমাদের সরকারও চায়, যত বেশি কাজ হবে, বাংলা ইন্ডাস্ট্রির ভাল হবে। কোনও কারণ ছাড়াই যে কাজটা বন্ধ করা হল, সেটা দুঃখজনক।’

এর আগে বৃহস্পতিবার ডিরেক্টরস গিল্ডের বৈঠকের পরই ‘ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া’ রাহুলের ওপর তিন মাসের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ, রাহুল ডিরেক্টরস গিল্ড এবং ফেডারেশনের নিয়ম না মেনে বাংলাদেশের ওয়েব প্ল্যাটফর্ম চরকির জন্য সিরিজ ‘লহু’র শ্যুটিং করতে গিয়েছিলেন। নিয়মভঙ্গের খবর সংগঠনের কানে পৌঁছালে পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদকরা হয়। প্রথম দিকে বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। পরে নিজের ভুল স্বীকার করেন। এরপরই তাকে ‘নিষিদ্ধ’ করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৪ অক্টোবর কলকাতায় কার্যক্রম শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির। এর মধ্যে রাহুল মুখার্জির পরিচালনায় ‘লহু’ নামের একটি সিরিজের কাজও শুরু হয়েছিল। তবে টালিউডের ফেডারেশনগুলোর অতিরিক্ত পারিশ্রমিকসহ বিভিন্ন দাবির কারণে কলকাতায় কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় চরকি। ফলে মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যায় লহুর শ্যুটিং। জানা গেছে, সেই সিনেমার বাকি অংশের শ্যুটিং শেষ করতেই কয়েকজন কলাকুশলীসহ বাংলাদেশে এসেছিলেন রাহুল।

ডিএ