কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন আর নেই। রবিবার (৩ জানুয়ারি) বিকেল ৫টায় তিনি ঢাকার বনানীর নিজ বাসায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সোমবার (৪ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রাবেয়া খাতুনের মরদেহ রাখা হবে। দুপুর ২টায় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। জানাযা শেষে বনানী কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হবে।  

রাবেয়া খাতুনের ছেলেরাও জনপ্রিয় গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। তার বড় ছেলে শিশুসাহিত্যিক, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ও চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। ছোট ছেলে ফরহাদুর রেজা প্রবাল এক সময়ের টেলিভিশনের জনপ্রিয় উপস্থাপক ও স্থপতি ও বর্তমানে অষ্টেলিয়া প্রবাসী। বড় মেয়ে কেকা ফেরদৌসী একজন রন্ধনবীদ। 

কথাসাহিত্যিক  হিসেবে পরিচিত হলেও রাবেয়া খাতুন এক সময় শিক্ষকতা করেছেন। সাংবাদিকতার সঙ্গেও দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন। ইত্তেফাক, সিনেমা পত্রিকা ছাড়াও তাঁর নিজস্ব সম্পাদনায় পঞ্চাশ দশকে বের হতো ‘অঙ্গনা’ নামের একটি মহিলা মাসিক পত্রিকা। তার প্রকাশিত পুস্তকের সংখ্যা একশ’রও বেশী। এর মধ্যে রয়েছে উপন্যাস, গবেষণাধর্মী রচনা, ছোটগল্প, ধর্মীয় কাহিনী, ভ্রমণ কাহিনী, কিশোর উপন্যাস, স্মৃতিকথা ইত্যাদি। 

রেডিও, টিভিতে প্রচারিত হয়েছে অসংখ্য নাটক, জীবন্তিকা ও সিরিজ নাটক। তার গল্পে নির্মিত হয়েছে একাধিক চলচ্চিত্র। রাবেয়া খাতুন উপন্যাস লিখেছেন পঞ্চাশটিরও বেশি, এখন পর্যন্ত চার খণ্ডে সংকলিত ছোটগল্প সংখ্যায় চারশরও বেশি। ছোটদের জন্য লেখা গল্প-উপন্যাসও সংখ্যায় কম নয়। রাবেয়া খাতুন বাংলাদেশের ভ্রমণসাহিত্যের অন্যতম লেখক। 

কর্মজীবনে অনেক মানুষের সান্নিধ্যে এসেছেন তিনি। উদ্বুদ্ধ হয়েছেন যাদের দ্বারা স্মৃতিমূলক রচনার মধ্য দিয়ে তাদের ব্যক্তিত্ব ও বৈচিত্র্যময় ব্যক্তিত্বকে পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন। ছোটগল্প দিয়ে শুরু হলেও লেখকপরিচয়ে প্রথমত তিনি ঔপন্যাসিক। প্রথম উপন্যাস মধুমতী (১৯৬৩) প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই শক্তিমান কথাসাহিত্যিক হিসাবে পরিচিতি পান। 

টিভি নাটকের জন্য রাবেয়া খাতুন পেয়েছেন টেনাশিনাস পুরস্কার (১৯৯৭), বাচসাস (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি) পুরস্কার, বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টাস এসোসিয়েশন মিলেনিয়াম এ্যাওয়ার্ড (২০০০), টেলিভিশন রিপোর্টাস এ্যাওয়ার্ড (২০০০)সহ তিনি এ যাবত অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। 

এমআরএম