শাকিবের সিনেমা বন্ধ, প্রতিবাদ জানালেন সিয়ামও
ঈদ উপলক্ষে দেশব্যাপী মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান ও পূজা চেরি অভিনীত সিনেমা ‘গলুই’। এটি নির্মাণ করেছেন এস এ হক অলিক। মুক্তির পর থেকে দর্শকের দারুণ সাড়া পাচ্ছে সিনেমাটি।
বিশেষ করে জামালপুরে ‘গলুই’ নিয়ে দর্শকের আগ্রহ একটু বেশিই। কেননা সিনেমাটির শুটিং হয়েছিল এই জেলার বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু এখানে কেবল একটি সিনেমা হল আছে। তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জেলার শিল্পকলা একাডেমি ও দুটি অডিটোরিয়ামে ‘গলুই’ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।
বিজ্ঞাপন
ঈদের দিন থেকেই তিনটি স্থানে ‘গলুই’ দেখার জন্য বিপুল দর্শকের সমাগম হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ ছেদ পড়ে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জামালপুর শিল্পকলা একাডেমিতে সিনেমাটির প্রদর্শনী। জেলা প্রশাসক মুর্শেদা জামানের নির্দেশেই এমনটা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই ঘটনায় সিনেমা অঙ্গনের অনেকেই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। দেশের সিনেমা শিল্পের ক্রান্তিলগ্নে প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না কেউই। নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলী থেকে শুরু করে বিনোদন জগতের অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বিজ্ঞাপন
বাদ যাননি চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদও। তার অভিনীত একটি সিনেমাও মুক্তি পেয়েছে ঈদে। সেটার নাম ‘শান। নায়ক হিসেবে পর্দায় তিনি শাকিবের প্রতিদ্বন্দ্বী বটে। তবুও শাকিবের সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধ হওয়া মেনে নিতে পারছেন না সিয়াম। তাই প্রতিবাদে সামিল হলেন।
সিয়াম তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘একজন শিল্পী হিসেবে আমরা শিল্পের চর্চা করতে চাই। পারফরমিং আর্টের অন্যতম বড় টুল হচ্ছে অডিয়েন্স। দর্শক যখন আমাদের কাজ দেখে, প্রতিক্রিয়া জানায়- আমাদের ভালো লাগে। কিন্তু দর্শকের তুমুল আগ্রহের পরও একটি সিনেমার প্রদর্শনী যখন বন্ধ করে দেয়া হয়, তা ভীষণ দুঃখজনক। চলচ্চিত্রের একজন সামান্য কর্মী হিসেবে আমি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দর্শক যা দেখতে চাইছে, তা তাদের দেখতে দেয়া হোক- সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সেই অনুরোধ রইলো।’
এদিকে শাকিব খান রয়েছেন সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে। সেখান থেকে সিনেমার খোঁজ-খবর রাখছিলেন। জামালপুরে প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয়ার ঘটনায় তিনি বিস্মিত, হতবাক হয়েছেন। ফেসবুকে ঢালিউড কিং লিখেছেন, “নানান মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি, শত বছর আগের তৈরি ‘সিনেমাটোগ্রাফ অ্যাক্টে’র দোহাই দিয়ে মিলনায়তনগুলোতে ‘গলুই’য়ের প্রদর্শনী বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যা শুধু আমাকে ব্যথিত করেনি, বরং বিস্মিত ও হতবাক করেছে। ‘গলুই’ চলচ্চিত্রটি যখন সাধারণ মানুষ সানন্দে গ্রহণ করেছেন। পরিবার নিয়ে দেখছেন; তখন এর প্রদর্শনী বন্ধের খবরে চলচ্চিত্রের প্রত্যেকটি মানুষ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষেরাও প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছেন।”
জামালপুর জেলা প্রশাসনের উদ্দেশ্যে শাকিব লেখেন, “অতীতে বিকল্প ব্যবস্থায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হয়েছে। সেই সব চলচ্চিত্র প্রদর্শনে প্রশাসন সহায়তা করেছে। তাহলে ‘গলুই’ বিকল্প ব্যবস্থায় প্রদর্শন হতে সমস্যা কোথায়?”
শাকিব আরও লিখেছেন, “কারও হয়ত অজানা নয় যে, ‘গলুই’য়ের বেশিরভাগ শ্যুটিং জামালপুর জেলায় হয়েছে। ফলে অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে ‘গলুই’ নিয়ে সেখানকার মানুষের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। অথচ এই জেলা শহরে নেই কোনো সিনেমা হল! বাধ্য হয়ে ‘গলুই’ সংশ্লিষ্টরা জেলা শিল্পকলাসহ চারটি মিলনায়তনে ঈদের দিন থেকে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন। এসব মিলনায়তনে দর্শকেরও উপস্থিতি ছিল উপচে পড়া।”
শাকিব মনে করেন, জামালপুর জেলা প্রশাসনের এমন আচরণ সিনেমাপ্রেমীদের মন ভেঙে দিয়েছে। তিনি আরও লেখেন, ‘চলচ্চিত্রের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনতে সরকারের নানামুখি পরিকল্পনার কথা শুনে আসছি। সিনেমাহল মালিকদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া। সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রের সঠিক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা। সিনেমা নির্মাণে বড় অনুদানসহ সরকারের বেশকিছু পরিকল্পনা হয়ত এখন বাস্তবায়নের পথে। একইসাথে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও চলচ্চিত্র উন্নয়নের আশ্বাস সবসময়ই দিয়ে থাকেন। আর সেই সময় যখন ব্রিটিশ আমলে তৈরি চলচ্চিত্র স্বার্থ বিরোধী আইন দিয়ে পথ রোধ করা হয়, তখন বিষয়টি হয়ে ওঠে সাংঘর্ষিক। এমন অবস্থা বিরাজমান থাকলে বাংলা চলচ্চিত্র দিয়ে বিশ্বজয় করা তো দূরে থাক, এগিয়ে যাওয়াই অসম্ভব!’
শাকিবের প্রত্যাশা, খুব দ্রুত সরকার এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সরকারি অনুদান পাওয়া ‘গলুই’ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অডিয়ামে প্রদর্শনের সুযোগ করে দেবে।
কেআই