স্বাধীনতা পদক মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসর্গ করতে চাই
প্রখ্যাত অর্থোপেডিক সার্জন অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন
ভালো কাজের উৎসাহ-উদ্দীপনা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকেই পেয়েছি। যে আদর্শের ওপর ভিত্তি করে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সেই আদর্শ ছিল মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখা, বৈষম্য না রাখা, কোনো ধর্ম-বর্ণ বা গোত্রের ভেদাভেদ না করা—এগুলো থেকেই মানুষের জন্য কিছু করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি...
প্রখ্যাত অর্থোপেডিক সার্জন অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন। কাজ করছেন ল্যাবএইড হাসপাতালের অর্থোপেডিক ও আর্থোপ্লাস্টি সেন্টারের চিফ কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে। এছাড়া তিনি সার্কভুক্ত আটটি দেশের অর্থোপেডিক সার্জনদের সংগঠন অর্থোপেডিক অ্যাসোসিয়েশন অব সার্ক কান্ট্রিজের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
বিজ্ঞাপন
স্বাধীনতার যুদ্ধে উরুতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ভারতের সামরিক হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দিতে দেশে আসা আন্তর্জাতিক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জন ডা. আর জে গাস্টের অধীনে অর্থোপেডিক চিকিৎসায় হাতেখড়ি তার। তার নেতৃত্বেই দেশে কোমর ও হাঁটু প্রতিস্থাপন (হিপ অ্যান্ড নি রিপ্লেসমেন্ট) সার্জারিতে এসেছে বৈপ্লবিক সাফল্য। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি এ ধরনের সার্জারি সম্পন্ন করেছেন এ চিকিৎসক।
ওই সময় আমার এসব কার্যক্রম দেখে গ্রামের মানুষ হাসত আর বলত, কী পাগল ডাক্তার। ডাক্তারি রেখে স্কুল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে! আমি কিছুই কর্ণপাত করিনি। সেখান থেকেই আমার সামাজিক কাজের নামে পাগলামি শুরু
ডা. এম আমজাদ হোসেন
বিজ্ঞাপন
সমাজসেবায় গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘স্বাধীনতা পদক-২০২১’ এর জন্য মনোনীত হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি ঢাকা পোস্টের মুখোমুখি হন দেশের কৃতী এই চিকিৎসক। কথা বলেছেন মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাহতদের চিকিৎসা, সাধারণ মানুষের জন্য সংগ্রাম ও অবদান নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তানভীরুল ইসলাম।
ঢাকা পোস্ট : এ বছর স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন। যেকোনো মানুষের জন্য অনেক বড় পাওয়া এটি। আপনার অনুভূতি জানতে চাই…
ডা. এম আমজাদ হোসেন : এ অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি খুবই খুশি। আজ আমরা বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে পদার্পণ করতে যাচ্ছি। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী আমরা পালন করছি। সেই সময়ে এমন একটি পদক আমার জন্য বিশাল প্রাপ্তি। আমি একজন সাধারণ মানুষ, এ দেশের সাধারণ একজন নাগরিক। তারপরও স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাকে কীভাবে খুঁজে পেলেন, বিষয়টা অবাক লাগছে। আমার মতো একজন সাধারণ মানুষকে খুঁজে বের করে এমন একটা সম্মানে সম্মানিত করেছেন, এজন্য তাকে আমি ধন্যবাদ জানাব। বঙ্গবন্ধু সরকার আমাকে বৃত্তি দিয়ে মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। ডা. আর জে গাস্টের সঙ্গে কাজ করার সময় আমি সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পাই। এরপর থেকে আমি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
ঢাকা পোস্ট : বিশাল এই অর্জন কাদের জন্য উৎসর্গ করতে চান?
ডা. এম আমজাদ হোসেন : মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, জীবিত মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার এবং দেশের জন্য, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, এই সম্মাননা মূলত তাদের। বঙ্গবন্ধু ছাড়া যেমন বাংলাদেশ হতে পারত না, তেমনি বঙ্গবন্ধু তার পরিবার ছাড়া হতে পারতেন না। আমরা যে সম্মানটা পেয়েছি তা মূলত বঙ্গবন্ধু এবং এ দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পাওয়া উচিত। এ দেশের জন্য যারা অবদান রেখেছেন, এ সম্মাননা আসলে তাদের।
হাঁটুর চিকিৎসার জন্য অসংখ্য মানুষ দেশের বাইরে যাচ্ছেন। আমি তখন দেশের বাইরে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে সর্বপ্রথম আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের হাঁটু প্রতিস্থাপন করি। এরপর আমি প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের হাঁটু প্রতিস্থাপন করেছি। শুধু নিজে করেই থেমে থাকিনি। সারাদেশ ঘুরে ঘুরে মেডিকেল কলেজগুলোতে আমার ছাত্রদের শিখিয়েছি। এভাবেই আমি আমার কাজগুলো এখন পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছি
ডা. এম আমজাদ হোসেন
ঢাকা পোস্ট : সমাজ সেবার কোন অবদানের জন্য এ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
ডা. এম আমজাদ হোসেন : দুটি ক্ষেত্রে আমি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে চেয়েছি। প্রথমত, আমার জন্ম দিনাজপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল চিরিরবন্দর উপজেলায়। দেশের পিছিয়ে পড়া এক জনপদ। দেশকে এগিয়ে নিতে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আমি গ্রামে সাধারণ মানুষের শিক্ষার প্রসারে স্কুল-কলেজ বানিয়েছি। এছাড়া একজন চিকিৎসক হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করেছি। যত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, একেবারে বিনা বেতনে তাদের চিকিৎসায় আমি নিয়োজিত ছিলাম। সরকারি চাকরির পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করে সাধারণ মানুষের শিক্ষায় নিরলস কাজ করে গেছি। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও সারাদেশ ঘুরে ঘুরে আমি আমার ছাত্রদের চিকিৎসা শিক্ষা বিতরণের চেষ্টা করেছি। এজন্যই হয়তো প্রধানমন্ত্রী আমাকে এত বড় একটা সম্মান দিয়েছেন।
আমি দীর্ঘদিন কোমর ও হাঁটু প্রতিস্থাপন নিয়েও কাজ করছি। এর আগে এই সমস্যা নিয়ে অধিকাংশ রোগী দেশের বাইরে চলে যেতেন। আমি চেষ্টা করেছি, রোগীদের যেন বাইরে যেতে না হয়। দেশেই যেন এর চিকিৎসা করা যায়। এ লক্ষ্যে দীর্ঘদিন কাজ করেছি, দেশব্যাপী মেডিকেল কলেজগুলোতে গিয়েছি। বিশেষ করে রংপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট মেডিকেল ঘুরে ঘুরে চিকিৎসকদের ট্রেনিং দিয়েছি। এমনকি সিএমএইচে গিয়ে আমি অপারেশন করেছি। যেন আমাদের ছেলেমেয়েরা শিখতে পারে এবং দেশে এর প্রয়োগ করতে পারে। স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য এটাও বিবেচিত হতে পারে।
ঢাকা পোস্ট : একজন চিকিৎসক মানেই ব্যস্ততাপূর্ণ সময় পার করা। একজন বড় মাপের চিকিৎসক হয়েও সমাজ সেবার জন্য পদক পাচ্ছেন, বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
ডা. এম আমজাদ হোসেন : আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে আহত হয়েছিলাম। আমি ৭ নম্বর সেক্টরের একজন টিম লিডার ছিলাম। অনেক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি, অনেকবার শত্রুপক্ষকে আক্রমণ করেছি। তারপর একসময় আমি প্রচণ্ডভাবে আহত হই। আমার দুই পায়ে গুলি লাগে। তারপর ভারতের সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হই। সেখান থেকে ভালো হয়ে ৫ জানুয়ারি ফিরে আসি। পরের দিনই (৬ জানুয়ারি) দিনাজপুরের মহারাজা গিরিজানাথ স্কুলে ব্লাস্ট (বিস্ফোরণ) হয় এবং আমাদের সাড়ে ৫০০ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ওইখানে গিয়ে দেখি, আমার সঙ্গীরা মারাত্মকভাবে আহত হয়ে পড়ে আছেন। সেদিনের ঘটনাগুলো খুবই কষ্টদায়ক। সেখানে আমি চিকিৎসা দিয়েছি। সেদিন মোজাফ্ফর হোসেন নামে আমার সঙ্গের এক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পরে আমি তার নামে একটি স্কুল করি, যেন আমার পরের জেনারেশন তাকে ভুলে না যায়। সেখানে দুই হাজারের বেশি ছেলেমেয়েকে আমি পড়াশোনা করানোর চেষ্টা করি। ওই সময় আমার এসব কার্যক্রম দেখে গ্রামের মানুষ হাসত আর বলত, কী পাগল ডাক্তার। ডাক্তারি রেখে স্কুল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে! আমি কিছুই কর্ণপাত করিনি। সেখান থেকেই আমার সামাজিক কাজের নামে পাগলামি শুরু।
কিছু মানুষের জন্য সামগ্রিকভাবে একটা পেশাকে দোষারোপ করা যায় না। যারা দেশের চিকিৎসকদের কসাই বলে, তারাই যখন দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে, তখন তারা সেখানে একটা কথাও বলেন না। উল্টো সেই বিদেশি চিকিৎসকরা বাংলাদেশে এসে দোকান খুলে কী পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে, তার খবর কেউ রাখে না
ডা. এম আমজাদ হোসেন
সে সময় এই কাজগুলো না করলেও পারতাম। কিন্তু আমি, গণস্বাস্থ্যের ডা. জাফরুল্লাহসহ পাঁচ-ছয়জন বন্ধু মিলে কাজ শুরু না করতাম, তাহলে হয়তো এতকিছু করা সম্ভব হতো না। এই যে আমি বেঁচে থাকলাম, আমার যদি উরুতে গুলি না লেগে আরেকটু উপরে লাগত, তাহলে হয়তো আমি বাঁচতাম না। এরপরই চিন্তা করলাম, ব্যস্ততার ফাঁকেই সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করতে হবে।
ঢাকা পোস্ট : মানবসেবায় কীভাবে উৎসাহিত হয়েছেন? পাশাপাশি তিক্ত কোনো অভিজ্ঞতা আছে কি না?
ডা. এম আমজাদ হোসেন : মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যখন আমরা ছোট আকারের স্কুল গড়ে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাসহ নানা রকম সংস্কারমূলক কাজ করে যাচ্ছি, তখন (১৯৭২ সাল) আমাদের এলাকার (সূত্রাপুর গ্রাম) একজন স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য জমি দিলেন। তিনি বললেন, তোমরা ভালো করে কিছু কর। তখন কী পরিমাণ উৎসাহ পেয়েছি, সেটা বোঝানোর ভাষা নেই! এছাড়া যখন দেখলাম গ্রামের ছেলেমেয়েরা সুযোগ-সুবিধার অভাবে পড়াশোনাই করতে পারে না, তখন মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছাত্র সংগ্রহ, পরিবার, বন্ধুবান্ধব নিয়ে একজন শহীদের নামে (শহীদ শাহজাহান প্রাথমিক বিদ্যালয়) স্কুল প্রতিষ্ঠা করলাম। ওই সময় এলাকার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে কিছু সংস্কারমূলক কাজও করেছি। এভাবেই বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছি।
মূলত, ভালো কাজের উৎসাহ-উদ্দীপনা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকেই পেয়েছি। যে আদর্শের ওপর ভিত্তি করে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সেই আদর্শ ছিল মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখা, বৈষম্য না রাখা, কোনো ধর্ম-বর্ণ বা গোত্রের ভেদাভেদ না করা—এগুলো থেকেই মানুষের জন্য কিছু করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি।
আসুন আমরা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিছু করি। আমরা কেউই পয়সাকড়ি, গাড়ি-বাড়ি নিয়ে কবরে যাব না। বিষয়টা নিয়ে সবারই ভাবা উচিত। মানুষের জন্য ভালো কিছু করলেই মানুষ আপনাকে মনে রাখবে
ডা. এম আমজাদ হোসেন
১৯৭৫ সালের পরে অনেক হতাশ হয়েছি। মনটা এমন বিষিয়ে গেছিল যে, মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয়ই দিতে পারি না, কিছু বলতেও পারি না। আমি তখন চিন্তা করলাম আমার ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মা হয়ে যাব। যাদের কথা চিন্তা করে, যাদের পেছনে শ্রম দিয়ে আমি নিজে একটা গাড়িও কিনতে পারিনি, তাদের সঙ্গেই সময় কাটাব। পাশাপাশি দেশের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে কাজ করে যাব।
আমি দেখেছি, হাঁটুর চিকিৎসার জন্য অসংখ্য মানুষ দেশের বাইরে যাচ্ছেন। আমি তখন দেশের বাইরে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে সর্বপ্রথম আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের হাঁটু প্রতিস্থাপন করি। এরপর আমি প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের হাঁটু প্রতিস্থাপন করেছি। শুধু নিজে করেই থেমে থাকিনি। সারাদেশ ঘুরে ঘুরে মেডিকেল কলেজগুলোতে আমার ছাত্রদের শিখিয়েছি। এভাবেই আমি আমার কাজগুলো এখন পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।
ঢাকা পোস্ট : চিকিৎসকদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা নেতিবাচক চিন্তা কাজ করে। তারা মনে করেন, চিকিৎসক মানেই কসাই। বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
ডা. এম আমজাদ হোসেন : সাধারণ মানুষের এমন ধারণা আসলেই ভুল। আমরা সবসময় ভুল চিন্তাটাই বেশি করি। আমরা কোনোকিছুর গভীরে ঢুকি না, বাস্তবতা খুঁজি না। কারণ শিক্ষার অভাব। আমরা যদি শিক্ষিত জাতি হতাম, তাহলে সামগ্রিকভাবে চিকিৎসকদের এভাবে দোষারোপ করতে পারতাম না। তবে হ্যাঁ, কিছু চিকিৎসক ব্যতিক্রম থাকতেই পারেন। প্রতিটি সেক্টরে এমন কিছু মানুষ থাকেন, যাদের লোভ-লালসা আছে। প্রচণ্ডভাবে তারা আমাদের ক্ষতি করছে। নয়তো দেশটা আরও এগিয়ে যেত।
কিছু মানুষের জন্য সামগ্রিকভাবে একটা পেশাকে দোষারোপ করা যায় না। যারা দেশের চিকিৎসকদের কসাই বলে, তারাই যখন দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে, তখন তারা সেখানে একটা কথাও বলেন না। উল্টো সেই বিদেশি চিকিৎসকরা বাংলাদেশে এসে দোকান খুলে কী পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে, তার খবর কেউ রাখে না।
আমাদের অনেক ভুলত্রুটি আর সমস্যা আছে। শুধু আমাদের নয়, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এ সমস্যা আছে। সমস্যাগুলো আমাদের ধরতে হবে, তাদের বুঝাতে হবে, প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঢাকা পোস্ট : চিকিৎসকদের সামাজিক কাজে আরও বেশি অংশগ্রহণের সুযোগ কেমন দেখছেন?
ডা. এম আমজাদ হোসেন : আপনারা জানেন এ পেশাটা কতটুকু ব্যস্ততার। এখান থেকে আসলে ওরকম কাজের সুযোগ খুবই কম। তবুও যদি কারও মধ্যে তীব্র ইচ্ছা থাকে, তাহলে সম্ভব। যার উদাহরণ আমি নিজেই। শুধু আমি নই, এমন আরও অনেকেই আছেন, যারা পেশার বাইরে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছেন। একজন চিকিৎসককে তার পেশার বাইরে গিয়ে তো কাজ করার দরকার নেই। তার পেশার মধ্যে থেকে গরিব-অসহায়ের জন্য কাজ করতে পারেন। সপ্তাহে এক বা দুইটা দিন বিনামূল্যে এলাকায় গিয়ে রোগী দেখতে পারেন। এটাও তো ছোট কাজ নয়। এভাবে চাইলে আরও অনেক কিছু করা সম্ভব।
ঢাকা পোস্ট : সামনের দিনগুলোতে আপনার বিশেষ কোনো পরিকল্পনা সম্পর্কে যদি বলতেন…
ডা. এম আমজাদ হোসেন : আপাতত সামনের দিনের পরিকল্পনা হলো, যে কাজটা করছি তাতে আরও বেশি গতি আনা। প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা পদকে মনোনীতের মাধ্যমে আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, যথাযথভাবে আমি সেই দায়িত্ব পালন করতে চাই। একজন অর্থোপেডিক সার্জন হিসেবে সিআরপির (পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র) মতো একটা প্রতিষ্ঠান করতে চাই। যেখানে সাধারণ মানুষকে নিয়ে কাজ করব।
দেশের চিকিৎসক সমাজসহ সবার প্রতি আমার আবেদন, আসুন আমরা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিছু করি। আমরা কেউই পয়সাকড়ি, গাড়ি-বাড়ি নিয়ে কবরে যাব না। বিষয়টা নিয়ে সবারই ভাবা উচিত। মানুষের জন্য ভালো কিছু করলেই মানুষ আপনাকে মনে রাখবে।
টিআই/এসকেডি/এমএআর/এমএমজে