কোনো পদক্ষেপেই কাজ হচ্ছে না, কে থামাবে ‘বাংলার টেসলা’?
রাজধানীর রাস্তায় এখন নতুন আতঙ্কের নাম ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। মূল সড়ক, গলিপথ, স্কুলগেট, ফ্লাইওভারের ওপরে কিংবা ওভারব্রিজের নিচে— কোথায় নেই এদের দাপট! ট্রাফিক আইন এখানে যেন কেবল কাগজে লেখা গল্প; সিগন্যাল মানে না, উল্টো পথে চলতেও যেন বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই তাদের।
রাজধানী ঢাকার চিত্র যেন এমনই। যেখানে ‘বাংলার টেসলা’ বলে খ্যাত এই রিকশায় একবার উঠলে চালকেরা আর সামনে-পেছনে তাকানোর সুযোগ পান না। ফলে হঠাৎ ব্রেক কিংবা অপ্রত্যাশিত মোড় নেওয়া; যাত্রীদের জন্য যেন এক টুকরো ভয়ের অভিজ্ঞতা। প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। দ্রুতগতির গাড়ি থেকে শুরু করে সাধারণ পথচারী— সবাই পড়ছেন বিপদের মুখে। তবুও থামছে না ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য।
বিজ্ঞাপন
ট্রাফিক পুলিশ চেষ্টা করছে, কমিউনিটি পুলিশ তৎপর, সিটি কর্পোরেশন থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়— সবাই চাইছে নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু বাস্তবচিত্র একেবারেই উল্টো। যেন অদৃশ্য শক্তির ছায়ায় দিনদিন বেড়ে চলেছে এসব যান। প্রশ্ন উঠছে, ঢাকার বুকে এই নিয়ন্ত্রণহীন ‘বাংলার টেসলা’ কে থামাবে? উত্তর এখনো মিলছে না।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ১৩ জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রত্যেকে ব্যাটারিচালিত রিকশার গতি নিয়ে অসন্তুষ্ট। তারা বলছেন, এই রিকশায় চড়লেই অনিরাপদ মনে হয়। মনে হয় অতিরিক্ত গতির কারণে যেকোনো সময় উল্টে যাবে বা দুর্ঘটনা ঘটবে। বেশিরভাগ চালকই নতুন, ফলে তাদের নেই ট্রাফিক সিগন্যালের ধারণা বা নেই ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানোর কোনো প্রশিক্ষণ। গ্রাম থেকে এসে বা শহরের অন্য কাজ ছেড়ে সরাসরি রিকশা চালাতে শুরু করেছেন। তাও আবার উচ্চগতিতে।
সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই উদ্যোগের প্রথম ধাপে রিকশা ও চালক উভয়কেই লাইসেন্সের আওতায় আনা হবে। এছাড়া, স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্ত্বাবধানে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। তাদের জন্য বিমা এবং রিকশার ফিটনেস সনদ থাকা নিয়েও বাধ্যবাধকতা আসবে
এই রিকশার যাত্রী হিসেবে যেমন ভয় হয়, তেমনি সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ও তাদের গতি দেখলে ভয় লাগে— অভিযোগ করেন তারা।
জানা গেছে, এই অবস্থায় এসে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই উদ্যোগের প্রথম ধাপে রিকশা ও চালক উভয়কেই লাইসেন্সের আওতায় আনা হবে। এছাড়া, স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্ত্বাবধানে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। তাদের জন্য বিমা এবং রিকশার ফিটনেস সনদ থাকা নিয়েও বাধ্যবাধকতা আসবে।
রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা সাজেদুল ইসলাম বলেন, “পুরো রাজধানীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এটা দ্রুতগতিতে যাত্রী নিয়ে মূল সড়কে চলায় জীবনের ঝুঁকি থাকে বেশ। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার জন্য অন্য কোনো সহজ বা কম টাকার বাহন না থাকায় বাধ্য হয়ে উঠতে হয় এতে। শুধু এই গাড়িতে চড়তে ভয় লাগে এমনটি নয়, বরং রাস্তায় হেঁটে চলার সময়ও এটি যদি পাশ দিয়ে যায়, ভয় লাগে এর গতি দেখে।”
আরও পড়ুন
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আরেক বাসিন্দা রিক্তা খাতুন বলেন, “এটা একটি ভয়ের বাহন। ভয় নিয়ে, ঝুঁকি নিয়েই ব্যাটারিচালিত রিকশায় আমাদের উঠতে হয়। বাচ্চাকে নিয়ে যখন তার স্কুলে যাই বা আসি, তখন বাধ্য হয়ে এই রিকশাতে উঠতে হয়। এর চালকেরা যেন কোনো বাধা মানে না, পারলে উড়ে যায়। বেশিরভাগ চালক নতুন, চেনে না কিছুই; আবার রিকশা চালানোর অবস্থা দেখলে মনে হয় গাড়ি চালাচ্ছে আনাড়ি হাতে। তখন ভয় আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়, দোয়া-কালাম পড়তে থাকি।”
আগে সবজির ব্যবসা করলেও গেল কয়েক দিন ধরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতে শুরু করেছেন রাজধানীর বাড্ডা এলাকার লাল মিয়া। তিনি বলেন, “আগে ভ্যানে করে ঘুরে ঘুরে সবজি বিক্রি করতাম। সেখানে অনেক পরিশ্রম হলেও লাভ কম। তাই একজনের পরামর্শে ব্যাটারি রিকশা চালানো শুরু করেছি আজ আট দিন হলো। প্রতিদিন ৪৫০ টাকা জমা-খরচ দিয়ে রিকশা বের করি, সারাদিন চালালে ১২০০ টাকার মতো থাকে।”
যদিও এর আগে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করা, কিউআর কোড বসানো, লাইসেন্স দেওয়া, চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, মূল সড়কে না উঠে নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে রিকশা চালানো, ওয়ার্কশপ বা চার্জিং পয়েন্ট বন্ধ করে দেওয়া, বিভিন্ন এলাকায় নির্দিষ্ট রঙের রিকশাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি
আপনার তো রিকশা চালানোর কোনো প্রশিক্ষণ বা ধারণা ছিল না, তাহলে হঠাৎ কীভাবে রাস্তায় নেমে গেলেন রিকশা নিয়ে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “রাজধানীর বেশিরভাগ ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকেরা এমনই। এসেই রিকশা চালাতে নেমে যায়। কয়েক দিন চালানোর পর হাত ঠিক হয়ে যায়, কোনো সমস্যা হয় না। প্রথম দুই-এক দিন শুধু গলির মধ্যে চালালেই হাত পেকে যায়। তখন বড় রাস্তায় ওঠা যায়, সমস্যা হয় না।”
ব্যাটারিচালিত রিকশার বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “রিকশা বন্ধ করে দেওয়া কোনো সমাধান নয়। দরকার সঠিক পরিকল্পনা এবং এটিকে যুগোপযোগী বাহনে রূপান্তর করা। যদিও ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে প্রতিনিয়ত রাজধানীতে দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে, এই দুর্ঘটনা রোধে রিকশার আকৃতি ও গঠনের পরিবর্তন জরুরি। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে রিকশার আকৃতি কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে, একটু বড় সাইজের রিকশা বানাতে হবে। একইসঙ্গে ব্রেক, টায়ার, স্পোকগুলোও থাকতে হবে মানসম্মত।”
যদিও এর আগে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করা, কিউআর কোড বসানো, লাইসেন্স দেওয়া, চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, মূল সড়কে না উঠে নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে রিকশা চালানো, ওয়ার্কশপ বা চার্জিং পয়েন্ট বন্ধ করে দেওয়া, বিভিন্ন এলাকায় নির্দিষ্ট রঙের রিকশাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে এমন এক অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে কেউ যেন কিছুই করতে পারছে না ব্যাটারিচালিত রিকশার!
জানা গেছে, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও চালকদের ডাটাবেজ প্রস্তুত করার লক্ষ্যে ইউনিফাইড ফরম তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ‘তিন চাকার স্বল্পগতির ব্যাটারিচালিত রিকশার স্ট্যান্ডার্ড মডেলের ডিজাইন ও স্পেসিফিকেশন’ অনুমোদন করা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনসহ সব সিটি কর্পোরেশনে পাঠানো হয়েছে।
ব্যাটারিচালিত রিকশার (ই-রিকশা) টাইপ অনুমোদনের জন্য একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন একজন অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন অনুবিভাগ)। সেখানে বিআরটিএ, বুয়েট, বিএসটিআই, এমআইএসটি এবং ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তারা সদস্য হিসেবে আছেন।
তিন চাকার স্বল্পগতির ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। নিবন্ধনের এই দায়িত্ব দেওয়া হবে সিটি কর্পোরেশনকে। সিটি কর্পোরেশন এটির জন্য একটি ইউনিক রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও নম্বর প্লেটও প্রদান করবে। একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুকূলে একটির বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন করা যাবে না। নিবন্ধন নবায়নের জন্য প্রতি দুই বছর অন্তর ফিটনেস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
একটি তিন চাকার স্বল্পগতির ব্যাটারিচালিত রিকশার ক্ষেত্রে চালকের লাইসেন্স প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে লাইসেন্স পেতে চালকের অবশ্যই ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর হতে হবে এবং বাংলা লিখতে ও পড়তে জানতে হবে। তাদের সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্ধারিত সরকারি হাসপাতাল হতে দৃষ্টিশক্তিসহ স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ সংগ্রহ করতে হবে।
চালকদের লাইসেন্স নবায়নের জন্য পাঁচ বছর অন্তর ড্রাইভিং পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। চালকেরা ট্রাফিক আইন, সড়ক নিরাপত্তা, রোড মার্কিং, ট্রাফিক সাইন ও ব্যাটারি রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান হতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন। প্রতিটি তিন চাকার ব্যাটারিচালিত রিকশার সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য হবে ২৫০ সে.মি. এবং সর্বোচ্চ প্রস্থ হবে ১১০ সে.মি.।
আরও পড়ুন
সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত স্ট্যান্ডার্ড ডিজাইন গাইডলাইন অনুযায়ী, প্রতিটি মডেলের ই-রিকশার ডিজাইন সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন থেকে টাইপ-অনুমোদন নিতে হবে। শুধু সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক অনুমোদিত কারখানা বা ওয়ার্কশপ থেকে নিজ ব্র্যান্ডের নামে ই-রিকশা প্রস্তুত করা যাবে। চালক ব্যতীত একটি ই-রিকশা সর্বোচ্চ দুজন যাত্রী বহন করতে পারবে। সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার। স্কুলজোনে সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার। রিকশাগুলো নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রম করতে পারবে না এবং এজন্য গতিনিয়ন্ত্রক যন্ত্র সংযুক্ত থাকতে হবে। দুর্ঘটনার পর চালক পালিয়ে গেলে (হিট-অ্যান্ড-রান) তার লাইসেন্স স্থায়ীভাবে বাতিল করা হবে এবং ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ইতোমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন এলাকায় তিন চাকার স্বল্পগতির ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের জন্য ই-রিকশা প্রশিক্ষণ চালু হয়েছে। প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য ১৫০ জন প্রশিক্ষককে নিযুক্ত করা হয়েছে, যারা পর্যায়ক্রমে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। প্রথম পর্যায়ে মোট ৪৫০০ জন ই-রিকশাচালককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, “অনিয়ন্ত্রিত ও অনিরাপদ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের জন্য নগরজীবন অসহনীয় যানজটের কবলে পড়ে। জনজীবন স্থবির ও নাগরিকদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। সরকার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ই-রিকশা চলাচলের উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে যানজট নিরসনের পাশাপাশি অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা থেকে নগরবাসী রক্ষা পাবে। প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী রিকশাচালকেরা ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন। পর্যায়ক্রমে ই-রিকশা খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হবে।”
অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “প্রশিক্ষণের আওতায় পর্যায়ক্রমে দুই লাখ রিকশাচালককে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পরবর্তীতে প্রতিটি অঞ্চলের জন্য ভিন্ন রঙের রিকশার অনুমোদন দেওয়া হবে। তখন একটি অঞ্চলের রিকশা আর অন্য অঞ্চলে চালানো যাবে না। ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন একযোগে ই-রিকশাচালকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা ই-রিকশাচালকদের একটি আইনি কাঠামোর আওতায় আনতে চাই।”
“বর্তমানে শহরে যেসব ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে, সেগুলো ধাপে ধাপে ফেজ আউট করে বুয়েটের ডিজাইন অনুযায়ী রিকশা নামানো হবে। প্রশিক্ষণের আওতায় পর্যায়ক্রমে দুই লাখ রিকশাচালককে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পরবর্তীতে প্রতিটি অঞ্চলের জন্য ভিন্ন রঙের রিকশার অনুমোদন দেওয়া হবে। তখন একটি অঞ্চলের রিকশা অন্য অঞ্চলে চালানো যাবে না।”
জানা গেছে, বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের নকশা অনুযায়ী ব্যাটারিচালিত ই-রিকশাগুলোর সর্বোচ্চ গতি নির্ধারণ করা হয়েছে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার। তবে, নির্দিষ্ট এলাকায় এই গতিসীমা ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রণীত ‘বৈদ্যুতিক থ্রি হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা- ২০২৫ (খসড়া)’ অনুসারে, এই রিকশাগুলো শুধু পাড়া-মহল্লা ও গলিপথে চালানো যাবে, প্রধান সড়কে নয়।
যদিও কাগজে-কলমে নিষিদ্ধ, তারপরও রাজধানীর সড়কগুলো দখল করে অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল করছে প্রায় ১২ লাখ অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা। এই বাহনের কারণে সড়কে ক্রমেই বাড়ছে দুর্ঘটনার হার। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সড়কে ২০ শতাংশ দুর্ঘটনার কারণ ব্যাটারিচালিত রিকশা।
এদিকে, ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য প্রণীত খসড়া নীতিমালা বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছে রিকশা-ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ। সম্প্রতি (৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান সংগঠনের আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন ও সদস্য সচিব মনীষা চক্রবর্তী।
তারা বলেন, যেকোনো মোটরযান বা যান্ত্রিক যানের নিবন্ধন বা লাইসেন্স দেওয়ার একমাত্র কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ। কিন্তু কোনো সক্ষমতা বা প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন না থাকা সত্ত্বেও সিটি কর্পোরেশনকে এই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিআরটিএ ব্যাটারিচালিত যানবাহনকে একটি নীতিমালার আওতায় নিয়ে আসার জন্য ইতিপূর্বে ২০১৯, ২০২২, ২০২৪ সালে দুটি খসড়া নীতিমালা প্রকাশ করেছিল। এর মধ্যে একটি নীতিমালা কার্যকর হয়েছে, আর একটি অপেক্ষায় আছে।
তারা আরও বলেন, আমরা বারবার কেন্দ্রীয় ও দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করে সেগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছিলাম। সর্বশেষ ২০২৫ সালে আবার নতুন করে বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা- ২০২৫ প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি এবং এই নীতিমালার ওপর সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা গত ২০ আগস্ট অনেকগুলো সংশোধনী ও সুপারিশ বিআরটিএ চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপির মাধ্যমে পেশ করেছি।
এএসএস/এমএআর/