করোনাভাইরাসের চেয়ে ভয়ংকর রোগ যক্ষ্মা। বছরে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত এক বছরে প্রায় সাড়ে আট হাজার মানুষ মারা গেছে। তবে, দুটি রোগের লক্ষণেই যথেষ্ট মিল রয়েছে। রোগ ছড়ানোর উপায়ও প্রায় একই ধরনের। দুটি রোগের ক্ষেত্রেই ফুসফুসের সংক্রমণ ঘটে থাকে।

আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত বছরব্যাপী যক্ষ্মা সচেতনতা কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যক্ষ্মাকে আমরা খুব বেশি গুরুত্ব দেই না। কিন্তু কোনো রোগই আসলে ছোট নয়। কোনো রোগকেই অবহেলা করা উচিৎ নয়। আমরা এক সময় মনে করতাম সংক্রামক রোগে বেশি মানুষণ মারা যায়, কিন্তু সেটাই এখন নিয়ন্ত্রণে। আর এদিকে অসংক্রামক রোগ ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সুতরাং আমাদের যেকোনো রোগের ক্ষেত্রেই সচেতন হতে হবে।

করোনা বুঝিয়ে দিল স্বাস্থ্য কী জিনিস
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা স্বাস্থ্য খাতকে কখনোই গুরুত্ব দেইনি। শুধু আমরা নই, সারা বিশ্বই স্বাস্থ্য নিয়ে এতোটা ভাবেনি। কিন্তু করোনা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্যখাতকে গুরুত্ব দেওয়া কতোটা প্রয়োজনীয়। করোনা আমাদের শিখিয়েছে স্বাস্থ্যকে অবহেলা করলে একটা জাতির কী অবস্থা হয়।

তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ কম। এটা বাড়াতে হবে। এই খাতে বিনিয়োগ করলে ১০ গুণ ভালো সেবা পাওয়া যায়। করোনায় পৃথিবীর ১২ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে এখন পর্যন্ত। বাংলাদেশের ১২ থেকে ৩০ লাখ ডলার ক্ষতি হয়েছে। তবে বাংলাদেশের মতো বিশ্বের যেসব দেশ করোনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে তাদের অর্থনীতি এখনও ভালো অবস্থানে রয়েছে। যারা করোনাকে অবহেলা করেছে তাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লোকসান গুণতে হয়েছে।

যেকোনো অঙ্গেই যক্ষ্মা হতে পারে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, আমরা দেশ থেকে টিবি নির্মূল করতে চাই। কিন্তু দিনে দিনে এর জটিলতা বাড়ছে। বিশেষ করে হাড়, অন্ত্র, জরায়ু এবং অস্ত্রপচারস্থলে যক্ষ্মার সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে, যা নির্ণয় করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই এটি নিয়ন্ত্রণ করতে অস্ত্রোপচার সংক্রান্ত যক্ষ্মা নির্ণয় ও প্রতিরোধে গুরুত্ব দিতে হবে।

তিনি বলেন, যক্ষ্মা শুধু নির্দিষ্ট কোনো একটি অঙ্গের রোগ নয়। যক্ষ্মা হয় না, শরীরে এমন অঙ্গ খুব কমই আছে। শতকরা ৮৫ ভাগ যক্ষ্মা ফুসফুসেই হয়ে থাকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম বলেন, একজন যক্ষ্মা রোগী থেকে কমপক্ষে ছয় জনে রোগটি ছড়াতে পারে। তাই কোথাও একজন যক্ষ্মা রোগী পাওয়া গেলে তার সম্পৃক্ত কমপক্ষে ছয়জনকেই পরীক্ষা করাতে হবে। করোনার কারণে যক্ষ্মা নির্মূল কর্মসূচিতে কিছুটা শৈথিল্য দেখা দিয়েছে। তবে দ্রুতই সেটি পুষিয়ে নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশ যক্ষ্মা নির্মূলে যথেষ্ট সফল।

তিনি বলেন, যক্ষ্মা শনাক্তকরণই আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। যক্ষ্মায় চিকিৎসার ক্ষেত্রে  ৯৬ শতাংশ সাফল্য এসেছে। জটিল যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে একশ উপজেলায় ডিজিটাল এক্সরে স্থাপন করা হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, অধ্যাপক ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী প্রমুখ।

টিআই/এনএফ