দেশে স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির চিকিৎসা করতে গিয়ে অসংখ্য পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, মানুষের স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ দরকার। তার জন্য গবেষণা ও সচেতনতা দরকার। সচেতনতার জন্য গণমাধ্যম সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।

শনিবার (৭ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ আয়োজিত স্পাইনাল কর্ড আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের ওপর গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল নিয়ে ‌‘পিপল উইথ স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ডিসিমিনেশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

উপাচার্য বলেন, ফেইল সুইসাইডের কারণে মানুষ স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি বেশি হচ্ছে। স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি রোধে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে হবে। এছাড়াও গ্রামাঞ্চলে গাছ থেকে পড়ে অনেকেই স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে পড়ছেন। এজন্য গ্রামে গাছে ওঠার জন্য প্রশিক্ষণ দরকার। এজন্য একটি ব্যবস্থা করা যায় কি না সে বিষয়ে নীতি নির্ধারকরা মনোবিশেষ করতে পারে। 

শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, পুরুষরা নারীদের তুলনায় বেশি স্পাইনাল কর্ডে আক্রান্ত হচ্ছে। এজন্য বলা যাবে না যে মেয়েরা কম আক্রান্ত হচ্ছে। নারীদের স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি প্রতিরোধে ওড়না পরে রাস্তা পারাপার, মোটর বাইক ও রিকশায় চলাচল করার সময় অধিক সচেতনতা প্রয়োজন। কারণ অনেক নারী রাস্তায় চলাচল করার সময় রিকশা ও মোটর বাইকে ওড়না পেঁচিয়ে স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে পড়েন।

তিনি আরও বলেন, স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে পড়া রোগীদের চিকিৎসায় বিভাগীয় পর্যায়ে আলাদা চিকিৎসা কেন্দ্রের ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসকরা যাতে এসব হাসপাতালে ঠিকমত কর্তব্য পালন করতে এজন্য তাদের আবাস স্থান সুনিশ্চিত করতে হবে। এতে করে রোগীর পাশাপাশি তার পরিবারকে অর্থনৈতিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে ১৮টি ইনস্টিটিউট এবং প্রাইভেট চেম্বার থেকে মোট ২৪৬৯ জন আঘাতজনিত এবং রোগ সম্পর্কিত স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি (এসসিআই) রোগীকে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৬৯৮ (৬৮.৮%) পুরুষ এবং ৭৭১ (৩১.২%) নারী। বেশিরভাগ রোগী, ৮৬৪ (৩৫%), ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী গ্রুপের অন্তর্গত। তাদের মধ্যে ১৪০৯ জন (৫৭.১%) আঘাতজনিত স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি রোগী, ১০১৪ (৪১.১%) রোগ সম্পর্কিত, আর ৪৬জন (১.৯%) কড়া ইকুইনা সিন্ড্রোমে আক্রান্ত। 

আরও জানানো হয়, ভর্তির সময় ১৫১৬ (৬১.৪%) জন স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি ব্যক্তিকে টেট্রাপ্লেজিক এবং ৯৫৩ (৩৮.৬%) জনকে প্যারাপ্লেজিক হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছিল। রোগ-সম্পর্কিত স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল অবক্ষয় (৪২.৫%), তারপরে টিউমার (৪০.৩%) এবং পরে যক্ষ্মা (১১.৮%) আক্রান্ত রোগী। সঙ্গে ছিল মাথার আঘাত এবং হাত পা হাড়ের ফ্র্যাকচার। 

সবচেয়ে বেশি জটিলতা ছিল অস্ত্রের মূত্রাশয় (৭.৩%) এবং চাপের আঘাতজনিত জটিলতা (১.৭%)। আঘাতজনিত স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ছিল ওপর থেকে পড়ে যাওয়া (৪৫.৪৩%), এরপরে সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত (২৯.৩৮%)। বেশিরভাগ আঘাতমূলক স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির সঙ্গে ছিল মাথার আঘাত এবং হাত পা হাড়ের ফ্রাকচার। সবচেয়ে বেশি জটিলতা অন্ত্রের- মূত্রাশয় ( ৭.৩%) এবং চাপের আঘাতজনিত জটিলতা (১.৭%) ছিল।

অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, গবেষণার ফলাফলকে সামনে রেখে জানুয়ারি ২০২৩ থেকে গবেষণার দ্বিতীয় পর্বের জন্য কমিউনিটি পর্যায়ে গবেষণা শুরু হবে। সেখান থেকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য, দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড, ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও আর্থসামাজিক জীবন বৃত্তান্ত আমাদের এই গবেষণার মাধ্যমে তুলে আনা হবে। এই ধরনের গবেষণা বাংলাদেশে এই প্রথম পরিচালনা করা হচ্ছে। এই পর্বে আমরা ইন্টারন্যাশনাল স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি সার্ভের অংশ হিসেবে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা করছে।

টিআই/এমএ