শ্বাসকষ্টে মৃত্যু বাড়ছে, বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা
রাজধানীসহ সারাদেশের হাসপাতালে হঠাৎ শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। একইসঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। কর্তৃপক্ষ এ ধরনের মৃত্যুকে করোনা সংক্রমণ না বললেও আক্রান্ত ও মৃতদের বেশিরভাগেরই করোনার উপসর্গ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে টিকা আসার পর থেকে এবং কিছুদিন ধরে শনাক্তের হার কমে যাওয়াতে মানুষ অসচেতন হয়ে পড়েছে। রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, অনেকটা হঠাৎ করেই শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। সোহরাওয়ার্দীতেই প্রতিদিন অন্তত ছয়শ থেকে সাতশ রোগী শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসছে। তাদের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৭ জন মারা যাচ্ছেন। গতকাল (১৩ মার্চ) ৭ জনেরও বেশি মারা গেছেন। সবাই শ্বাসকষ্টের রোগী। এর আগের দিনও মারা গেছেন এমন। সব মিলিয়ে গত তিন দিনে ত্রিশজনের বেশি রোগী মারা গেছেন।
বিজ্ঞাপন
সোহরাওয়ার্দীতেই দিনে গড়ে ৬-৭শ’ রোগী শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসছে। দিনে গড়ে ৫ থেকে ৭ জন মারা যাচ্ছে
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক
তিনি বলেন, গতকাল (১৩ মার্চ) রাত আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার ব্যবধানে ৫টা লাশ বের হয়েছে। সবাই শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। মৃতদের বেশিরভাগেরই করোনার উপসর্গ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রোববার (১৪ মার্চ) হাসপাতালটিতে সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল আটটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত নারী টিকিট কাউন্টারে ৪৩০ জন এবং পুরুষ কাউন্টারে ৮২৯ জনসহ মোট এক হাজার ২৫৯ জন টিকিট কেটে চিকিৎসা নিয়েছেন। যাদের অধিকাংশই জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টের রোগী বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে ৫৮৪ জন রেডিওলোজি ও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েছেন।
ঢামেক, মুগদা ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ফাঁকা নেই আইসিইউ শয্যা
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হঠাৎ করে রোগী শনাক্তের হার বেড়ে যাওয়াতে করোনা ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালগুলোর সাধারণ শয্যা থেকে শুরু করে কেবিন ও আইসিইউতে রোগীর চাপ বাড়ছে। অনেক জটিল রোগীকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসিইউ ও কেবিন সাপোর্ট দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ শয্যার একটিও ফাঁকা নেই।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার ডা. নাহিদ আরেফিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত কয়েকদিনে তুলনামূলকভাবে সব ধরনের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শ্বাসকষ্টসহ সর্দিজ্বরে আক্রান্ত রোগীরা বেশি আসছেন। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা সার্বক্ষণিক তাদের সেবা দিচ্ছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) অন্যান্য রোগের সঙ্গে সর্দিজ্বর ও শ্বাসকষ্টে রোগী বেড়েছে জানিয়ে ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এখানে সব সময় রোগী বেশি থাকে। তবে অন্যান্য সময়ের চেয়ে গত কয়েকদিন রোগীর সংখ্যা একটু বেশি মনে হচ্ছে। বেশিরভাগই জ্বর, সর্দি আর শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসছেন। আজ আউটডোরে গিয়ে দেখলাম বিভিন্ন ধরনের রোগীর দীর্ঘ লাইন। শুধু আউটডোরের রোগীর চাপ সামাল দিতে ডাক্তারদের দিনে এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় বেশি দিতে হচ্ছে।
মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, মাস্ক পরছে না। এছাড়া করোনার নতুন ধরন খুব দ্রুত ছড়ায়। এসব কারণে বাড়তে পারে হঠাৎ সংক্রমণ
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক, পরিচালক, ঢামেক
হঠাৎ রোগীর চাপ বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝে যখন করোনা সংক্রমণের হার কমে গিয়েছিল, তখন হয়তো মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানতে শিথিলতা দেখিয়েছে। রোগের সংখ্যা বাড়ার এটা একটা কারণ হতে পারে। এই সময় কোনোরকম স্বাস্থ্য সচেতনতা ছাড়াই লোকজন নানা ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। মানুষ বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে, গণজমায়েত হচ্ছে। ছুটিতে কক্সবাজারে কী পরিমাণ মানুষ গিয়েছে দেখেছেন। অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না, মাস্ক পরছেন না। এছাড়া করোনার নতুন ধরন খুব দ্রুত ছড়ায় বলে শোনা গেছে। সেটা সত্যি হলে, হঠাৎ সংক্রমণ বাড়ার এটাও কারণ হতে পারে।
আইসিইউ প্রসঙ্গে ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি আইসিইউ কিছু ফাঁকা থাকত। এখন কোনো আইসিইউ ফাঁকা নেই। বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের কাছে চাহিদা আসছে। আমরা বাধ্য হয়ে তাদের ওয়েটিংয়ে রাখি, আজ না কাল, কাল না পরশু, এমনটা বলি। খালি হলে জরুরি বিবেচনায় নতুন কাউকে দেই।
এদিকে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালেও আগের তুলনায় করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, শ্বাসকষ্টসহ সব ধরনের রোগী বেড়েছে দেশে। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে আমাদের ওপর চাপ যাচ্ছে। সারাদেশে মানুষ যেভাবে ড্যামকেয়ার মুডে চলাফেরা করছে, সংক্রমণ বাড়বে না কেন? সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্যবিধির বালাই আছে?
তিনি বলেন, ১ মার্চ কুর্মিটোলা হাসপাতালে রোগী ছিল ১৪৬ জন, যা শনিবার (১৩ মার্চ) এসে দাঁড়িয়েছে ২২৭ জনে। আমাদের ১০ শয্যার আইসিইউ। কিছুদিন আগেও বেশ কয়েকটি বেড খালি ছিল, এখন নেই। রোগী এসে ঘুরে যাচ্ছে।
পরিচালনার লোক না থাকলে আইসিইউ বেড বাড়িয়ে লাভ নেই
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ, পরিচালক, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল
আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে জামিল আহমেদ বলেন, নতুন করে ৪/৫টি আইসিইউ বানানোর চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে সমস্যা হলো দক্ষ জনবল। আইসিইউ বেড বাড়িয়ে লাভ নেই, যদি পরিচালনার লোক না থাকে। যদি দক্ষ চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়, তাহলেই বেড বাড়ানো সম্ভব হবে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই
অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক
ইউজিসি অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। যেসব দেশ স্বাস্থ্যবিধি মানেনি, সেসব দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেছে। আমাদের দেশে এখন কেউ মাস্ক পরতে চায় না, স্বাস্থ্যবিধি মানতে চায় না। এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন হতে হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনা সংক্রমণ একটু বাড়ছে। আগের মতো আবারও সারাদেশে চিকিৎসা সেবার সর্বাত্মক প্রস্তুতি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও কারো কারো এন্টিবডি না-ও হতে পারে
জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী
তিনি বলেন, টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও কারো কারো এন্টিবডি না-ও হতে পারে। এ কারণে করোনা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মানে না। জনসমাগম হচ্ছে, পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে গাদাগাদি করে থাকছে। এ কারণে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। করোনা থেকে রক্ষা পেতে সবারই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
শ্বাসকষ্ট বা অন্য জটিলতা না থাকলে হাসপাতালে আসার দরকার নেই
অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদফতর
দেরিতে হাসপাতালে আসার কারণে মৃত্যুহার বাড়ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, যেসব রোগীর শ্বাসকষ্টসহ কোমরবিড ইলনেস আছে (যেমন–ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন, ক্যানসার অথবা এমন কোনও রোগ রয়েছে যেজন্য তাকে স্টেরয়েড নিতে হয়) তারা করোনা আক্রান্ত হলে বাসায় রাখা যাবে না। কারণ, এসব রোগীর এক্সট্রা সাপোর্ট দরকার হয়, যেগুলো বাড়িতে দেওয়া সম্ভব নয়। আর যদি শ্বাসকষ্ট না থাকে, অন্যান্য জটিলতা না থাকে, তাহলে হাসপাতালে আসার দরকার নেই।
নতুন ধরন দ্রুত ছড়ায়, বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা
করোনাভাইরাসের নতুন এক প্রজাতি বা ধরন ধরা পড়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে, যা অতিদ্রুত সংক্রমণ ছড়ায় বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। এমনকি শরীরে অ্যান্টিবডি থাকলেও এ প্রজাতি সংক্রমণ ছড়াতে পারে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় দেশের স্থল, নৌ এবং বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতার নির্দেশনা দিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, যেহেতু ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ভিসায় বিপুল সংখ্যক মানুষ ভারত যাচ্ছেন। সেজন্য যেকোনো সময় বাংলাদেশে এ প্রজাতির ভাইরাস আসতে পারে।
সংক্রামক ব্যাধি এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে পারে। তাই আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি জোর দিয়ে অনুসরণ করতে হবে
ড. মুশতাক হোসেন, উপদেষ্টা, আইইডিসিআর
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশেও নতুন প্রজাতি আসতে পারে, হয়তো এসেছেও। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন একটি প্রজাতি বাংলাদেশে পাওয়া গেছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে।
তিনি বলেন, যেকোনো সংক্রামক ব্যাধি এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে পারে। এজন্য আমাদের আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী পদক্ষেপগুলো জোর দিয়ে অনুসরণ করতে হবে। বিশেষ করে বন্দরগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, সংক্রমণ নিয়ে আসতে পারে এমন লোকদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা এবং স্থল, নৌ, বিমানবন্দরগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। দেশের ভেতরে যদি সংক্রমণ হয়, সেটা শনাক্তকরণের ব্যবস্থা রাখা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর জোর দিতে হবে।
নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলোর বিপক্ষে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমতে পারে
ডা. শাহরিয়ার মোহাম্মদ রোজেন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. শাহরিয়ার মোহাম্মদ রোজেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সম্প্রতি ভারতের মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে পাওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরন (স্ট্রেইন) বেশ বিপজ্জনক। এ ধরনটির সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি, অর্থাৎ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি যুক্তরাজ্য বা সাউথ আফ্রিকা থেকে আসেনি। ভারতের অমরাবতীতে দৈনিক সংক্রমণের হার হঠাৎ করে আকাশছোঁয়া হওয়ার কারণে (শতকরা শনাক্তের হার ৫৩) ধারণা করা হচ্ছে, এ ধরনটির উৎপত্তি ভারতেই।
তিনি বলেন, আশঙ্কা করা হচ্ছে নতুন এ ধরনটির মধ্যে ‘প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়ানোর কৌশল’ রয়েছে। এ মুহূর্তে সম্পূর্ণ নিশ্চিত করে কিছু বলা কঠিন হলেও, যারা আগে সংক্রমিত হয়েছেন তাদের আবার নতুন ধরনটিতে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া নতুন ধরনটি টিকার কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এ নিয়ে যুক্তরাজ্য, সাউথ আফ্রিকা, ব্রাজিল এবং ভারতে ‘অধিক সংক্রমক্ষম’ করোনার নতুন ধরন পাওয়া গেল। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলোর বিপক্ষে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার পরিমাণ কমতে পারে, তবে একেবারে অকার্যকর হবে না।
নতুন প্রজাতির সংক্রমণে টিকা কতটা কার্যকরী হবে জানতে চাইলে ডা. শাহরিয়ার মোহাম্মদ রোজেন বলেন, কিছুদিন আগে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন যুক্তরাজ্যের নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিপক্ষে কার্যকরী হলেও, সাউথ-আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে এই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা খুবই সীমিত। এ কারণে ভারত খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।
দেশে করণীয় প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের উচিত বেশি পরিমাণে জিনোম সিক্যুয়েন্সিং করা, যাতে অন্য দেশ থেকে প্রবেশ করা করোনার অধিক সংক্রমণক্ষম নতুন ধরন শনাক্ত করা সম্ভব হয়। অধিক পরিমাণ জিনোম সিক্যুয়েন্সিংয়ের সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে।
সর্বশেষ পরিস্থিতি
রোববার (১৪ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল আট হাজার ৫৪৫ জনে। মারা যাওয়াদের মধ্যে ১০ জনই ঢাকা বিভাগের। এ সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ১৫৯ জন। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৫ জনে।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিন জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এর ঠিক ১০ দিন পর দেশে ভাইরাসটিতে প্রথম মৃত্যু হয়। প্রথম মৃত্যুর তিন দিন পর করোনায় দ্বিতীয় মৃত্যু হয় ২১ মার্চ।
টিআই/এইচকে