রোগীদের অনুমতি ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে নিজের প্রচার-প্রচারণার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন সেন্ট্রাল হসপিটালে নবজাতকসহ প্রসূতির মৃত্যুতে আলোচিত ও বিতর্কিত চিকিৎসক ডা. সংযুক্তা সাহা। তিনি বলেছেন, আমি কখনো রোগীকে অনুমতি ছাড়া ফেসবুক লাইভে আনিনি। বরং রোগীরাই আমার লাইভে এসে কথা বলতে বারবার রিকোয়েস্ট করতেন।

শনিবার (২৪ জুন) বেলা ১১টায় রাজধানীর পরীবাগ এলাকার নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. সংযুক্তা সাহা বলেন, ‘যেসব রোগীদের আমি লাইভে নিয়ে এসেছি তারা স্বপ্রণোদিত হয়েই এসেছেন। তারা উল্টো আমাকে রিকোয়েস্ট করতেন যে, প্লিজ প্লিজ ম্যাডাম, আমাকে আপনার লাইভে নেন। আমাকে অন্য জায়গায় বলেছিল অপারেশন করতে, কিন্তু আমি আপনার কাছে করাব বলে চলে এসেছি। কথাগুলো আমাকে লাইভে এসে বলার সুযোগ দিন। আবার কেউ কেউ এসে বলতেন, আমাকে তো আমার হাজব্যান্ড ছেড়ে দিতে চেয়েছিল, সে অবস্থায় আপনার চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করেছি। কথাগুলো মানুষকে জানানোর সুযোগ দিন। এরকম অনেক রিকোয়েস্ট আসতো আমার কাছে। আমি কখনোই কারো অনুমতি ছাড়া তাদেরকে লাইভে নিয়ে আসিনি।’

যে পেজ থেকে লাইভ হতো, সেটি মনিটাইজ করা কি-না বা এখান থেকে আলাদা অর্থ বা সুযোগ-সুবিধা পেতেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার পেজটি মনিটাইজ করা নয়। তাছাড়া এটাকে আমি কখনো বুস্ট বা প্রমোটও করিনি।

ডা. সংযুক্তা বলেন, ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে আমি জনসচেতনতামূলক কাজ করতাম। আপনারা জানেন, আমি কাজ করতে ভালবাসি। যেহেতু আমার একমাত্র মেয়ে দেশের বাইরে থাকে, আমি বেশিরভাগ সময়ই হাসপাতালে কাটাতাম।’

তিনি আরও বলেন, ফেসবুক লাইভে একটা ভালো জিনিস ছিল, কীভাবে রোগীদের বোঝানো যায় যে, আগে সিজার হলেও পরে নরমাল ডেলিভারি করা যায়। এই ইনফর্মেশনগুলো দেওয়ার জন্যই আমি প্রযুক্তিটাকে ব্যবহার করেছি। এখন যদি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভরা মনে করেন যে, এতে হিতে বিপরীত হচ্ছে বা অন্যায় করা হচ্ছে, তাহলে এটা নিয়ে আমাকে আরেকটু ভাবতে হবে। এতদিন তো আমাকে এই বিষয়টি নিয়ে কেউ কিছু বলেনি। এখন বিষয়টি নিয়ে যেহেতু কথা হচ্ছে, আমি ভেবে দেখব। যদি এতে করে রোগীদের ক্ষতি হয়, তাহলে সেটি আর করা যাবে না।

গত ৯ জুন সেন্ট্রাল হাসপাতালে সি-সেকশন সার্জারির সময় এক নবজাতকের মৃত্যু হয় এবং মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। কয়েকদিন পরে মাহবুবা রহমান আঁখি নামের ওই মা অপর একটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এই ঘটনায় আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলা ও মিথ্যাচারের অভিযোগ এনে মামলা করেছেন।

সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি হয়েছিলেন আঁখি। তবে অভিযোগ রয়েছে-  রোগী ও তার পরিবারকে সার্জারির আগে বলা হয়েছিল যে ডা. সংযুক্তা সাহা অপারেশন করবেন। হাসপাতালে তাকে ওই চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি করা হলেও ডা. সংযুক্তা সাহা দেশেই ছিলেন না। অন্য চিকিৎসকের মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা ব্যর্থ হলে তখন অস্ত্রোপচার করে বাচ্চা বের করা হয়। পরদিন মারা যায় শিশুটি।

টিআই/ওএফ