চিকিৎসা পেশায় গবেষণা অত্যাবশ্যকীয় হলেও দেশের ৮৭ দশমিক ২ শতাংশ চিকিৎসকের আন্তর্জাতিক কোনো জার্নালে গবেষণা নেই। এমনকি ৯৬ দশমিক ২ শতাংশ চিকিৎসকের গবেষণা ম্যানুস্ক্রিপ্ট (পাণ্ডুলিপি) লেখার অভিজ্ঞতা নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডিপার্টমেন্ট অফ পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের এক গবেষণায় এসব তথ্য জানা গেছে।

সোমবার (৩১ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে ‌‘চিকিৎসকদের গবেষণায় সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি: চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ-সুবিধা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডিপার্টমেন্ট অফ পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্সের চেয়ারম্যান এবং প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. আতিকুল হক। 

গবেষণায় বলা হয়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি এবং নতুন উদ্যোগ প্রণয়নের জন্য গবেষণা অপরিহার্য। বাংলাদেশের চারটি টারশিয়ারি কেয়ার হাসপাতালের মোট ৫০০ জন চিকিৎসক এই গবেষণায় অংশ নেন। যদিও চিকিৎসকদের গবেষণা সম্পর্কে কিছু ধারণা রয়েছে, তবে মাত্র ১২ দশমিক ৮ শতাংশ চিকিৎসক আন্তর্জাতিক জার্নালে কোনো ম্যানুস্ক্রিপ্ট জমা দিয়েছেন, আর বাকি ৮৭ দশমিক ২ শতাংশ কখনই দেননি। এছাড়াও মাত্র প্রায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ চিকিৎসকের গবেষণা ম্যানুস্ক্রিপ্ট লেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে, অভিজ্ঞতা নেই ৯৬ দশমিক ২ শতাংশ চিকিৎসকের।

এতে আরও বলা হয়, দেশের মাত্র ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ চিকিৎসক এসপিএসএস বা স্ট্যাটার মতো পরিসংখ্যানগত সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। আর এসব সফটওয়্যার সম্পর্কে কোনো ধারণাই রাখেন না ৮৪ দশমিক ৪ শতাংশ চিকিৎসক।

গবেষণায় প্রতিবন্ধকতা প্রসঙ্গে ড. মো. আতিকুল হক বলেন, গবেষণা করার প্রধান বাধাগুলো হলো পেশাগত কাজের অতিরিক্ত চাপ, গবেষণা সম্পর্কিত জ্ঞানের কিছুটা অভাব। এছাড়াও গবেষণার জন্য অনুদান না থাকা এবং গবেষণায় পূর্ব জ্ঞান কিছুটা কম থাকা গবেষণার পথে অন্যতম অন্তরায়।

তিনি আরও জানান, গবেষণার প্রস্তাবিত সুপারিশগুলো ছিল গবেষণা অনুদান প্রস্তাবনা লেখার বিষয়ে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ এবং একাডেমিয়ায় একটি গবেষণা সংস্কৃতির সামগ্রিক প্রতিষ্ঠা ও প্রচার নিশ্চিত করা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। এ সময় তিনি বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে গবেষণার বিষয়ে মূল বক্তব্য রাখার পাশাপাশি চিকিৎসকদের মধ্যে দক্ষতা বৃদ্ধি, তথ্য আদান-প্রদান, নিয়ম-নীতি বিষয়ক সহায়তা এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বসহ গবেষণার কাজ বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন।

উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে গবেষণা সংস্কৃতি বিকাশে কাজ করছে। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতে একটি সমৃদ্ধ গবেষণা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারে, যার ফলে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, উদ্ভাবনী রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং কার্যকরভাবে দেশের স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

তিনি বলেন, বিএসএমএমইউ একটি মানসম্মত জার্নাল প্রকাশে কঠোর পরিশ্রম করছে। জার্নালটি ইন্ডেক্সিং হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে গবেষণা ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়েছে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধেও গবেষণা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এটা সফল করতে পারলে বছরে শত কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা ভাইরাসের জেনোম সিকোয়েন্সিং, এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব, ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা নির্ণয়সহ এ বিষয়ে অনেকগুলো গবেষণা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে এবং কোনো কোনো গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

‘এছাড়াও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পাউরুটি, ডিঙ্কসসহ অনেক খাদ্যদ্রব্য নিয়ে গবেষণা হয়েছে। ভিটামিন ডি এর স্বল্পতা নিয়ে গবেষণা হয়েছে। এরকম অনেক উদাহরণ রয়েছে। তবে রোগ প্রতিরোধ যাতে করা যায় এবং রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে উপকারে আসে তা নিশ্চিত করতে গবেষণা কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে হবে’- যোগ করেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, বিইউএইচএস’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. ফরিদুল আলম, বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের কনভেনর অধ্যাপক ডা. আহমেদ মোস্তাক রাজা চৌধুরীসহ আরও অনেকে।

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা চ্যালেঞ্জ, সুযোগ, গবেষণা বৃদ্ধিতে সরকারের ভূমিকা এবং গবেষণা উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকাসহ চারটি বিষয়ের ওপর একটি উন্মুক্ত আলোচনা করেন এবং প্যানেলিস্টদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে কর্মশালাটি শেষ হয়। গবেষণা কর্মশালায় বিভিন্ন টারশিয়ারি কেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক, ইউনিভার্সিটি, এনজিও, আইএনজিও এর প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী, গবেষক এবং সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন।

টিআই/এমএ