করোনায় আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা আশাব্যঞ্জক: গবেষণা
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আইভারমেকটিনের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিন ব্যবহারে আশাব্যঞ্জক কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সোমবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
গবেষণার নেতৃত্ব দেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর, বি) অ্যান্টারিক অ্যান্ড রেসপারেটরি ডিজিজের সিনিয়র ফিজিশিয়ান সায়েন্টিস্ট ড. ওয়াসিফ আলী খান। এতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একাধিক প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেন।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকার তিনটি হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৬৮ জন কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে ২২ জনকে শুধুমাত্র মুখে খাওয়ার আইভারমেকটিন (১২ মিলি গ্রাম দিনে একবার ৫দিন), ২৩ জনকে এক ডোজের আইভারমেকটিনের (১২ মিলি গ্রাম) সঙ্গে ডক্সিসাইক্লিন (২০০ মিগ্রা. ডক্সিসাইক্লিন প্রথম দিন এবং পরবর্তী সময়ে ১০০ মিগ্রা. দিনে দু'বার ৪ দিন) এবং ২৩ জনকে পস্নাসিবো (ওষুধ সদৃশ বস্তু) দিয়ে চিকিৎসা নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা তুলনা করে দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
এতে আরও বলা হয়, গবেষণার আওতায় যেসব রোগী অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক ওষুধ আইভারমেকটিনের পাঁচ দিনের কোর্স পেয়েছেন, তাদের ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স এবং রক্তের বিভিন্ন বায়োমার্কারের উন্নতি দেখা গেছে।
গবেষণায় দেখা যায়, ১৪ দিনের মাথায় ৫দিন ধরে শুধুমাত্র আইভারমেকটিন পাওয়া রোগীদের ৭৭ শতাংশ রোগীর সার্স-কোভ-২ এর ক্লিয়ারেন্স হয়েছে অর্থাৎ আরটি-পিসিয়ার টেস্টে তারা কোভিড-১৯ মুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে।
অন্যদিকে, আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন পাওয়া ৬১ শতাংশ এবং পস্নাসিবো পাওয়া ৩৯ শতাংশ রোগীর ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স দেখা যায়। এছাড়াও দেখা যায় যে, ৩য় দিনে শুধু আইভারমেকটিন পাওয়া দলে ১৮ শতাংশ রোগীর ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স হয়েছে। অন্যদিকে, আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন পাওয়া ৩ এবং পস্নাসিবো দলে ৩ শতাংশ রোগীর ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স হতে দেখা যায়, এবং ৭ম দিনে এটি ছিল যথাক্রমে ৫০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ এবং ১৩ শতাংশ। আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন এবং পস্নাসিবোর চিকিৎসার তুলনায় ৫ দিনের আইভারমেকটিন চিকিৎসায় রোগীর ক্লিনিক্যাল অবস্থার উন্নতি ও ছিল সম্ভাবনাময়, যেখানে রক্তের বিভিন্ন বায়োমার্কারের উন্নতির মাধ্যমে নির্দেশিত সংক্রমণের তীব্রতার মাত্রা কমার লক্ষণ দেখা যায়। শুরু থেকে ৭ দিনের মাথায় শুধুমাত্র ৫ দিন আইভারমেকটিন প্রাপ্ত দলে অন্য দুটি দলের তুলনায় সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিন (সিআরপি) ও ল্যাকটেইট ডিহাইড্রোজিনেস (এলডিএইচ) এবং ফেরিটিন লক্ষণীয় ভাবে কমতে দেখা যায়। মৃদু কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক এবং এর ব্যবহার নিরাপদ বলে গবেষণায় প্রতীয়মান হয়।
গবেষণা প্রসঙ্গে ড. ওয়াসিফ আলী খান বলেন, ‘যদিও কোনো সুদঢ় উপসংহারে পৌঁছানোর বিবেচনায় এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কম তবুও প্রাপ্তবয়স্ক কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসার শুরুতে আইভারমেকটিন ব্যবহারের উপকারীতা এই গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে। পরবর্তীতে আইভারমেকটিন নিয়ে বড় ধরনের ট্রায়ালের জন্য এ গবেষণালব্ধ জ্ঞান নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও এ ফলাফল কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় আইভারমেকটিনের ব্যবহার-সংক্রান্ত বিশ্বব্যাপী অন্যান্য গবেষণার ফলের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, ‘আইভারমেকটিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সহায়তা করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এটি কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যয় সাশ্রয়ী সমাধান খুঁজে বের করার একটি প্রয়াস। এ গবেষণার সম্ভাবনাময় ফলাফলে আমরা আনন্দিত। এটি সত্যিকার অর্থেই কোভিড়-১৯ এর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ে আরও শক্তি যোগাবে এবং অনেক অকালমৃত্যু এড়াতে সহায়তা করবে।’
ড. তাহমিদ আহমেদ এ গবেষণায় সহায়তা করার জন্য বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লি., স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল এবং এতে অংশগ্রহণকারী হাসপাতালগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো নিম্ন ও মাঝারি আয়ের দেশগুলোতে এ মহামারির মোকাবিলায় একটি সাশ্রয়ী এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য চিকিৎসা ব্যবস্থা খুঁজে বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে শুধু আইভারমেকটিন ব্যবহার করে আরও বড় মাপের একটি ট্রায়াল পরিচালনার জন্য আমরা সহায়তা সন্ধান করছি।’
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পর্যায়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর; ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর; বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল আইসিডিডিআর,বি; বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লি. ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। গবেষণায় ব্যবহৃত সব ওষুধ সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লি.।
টিআই/এসএম