স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অনেকটাই পিছিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, দিনদিন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা বাড়ছে, তবে স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিতে এসব স্বাস্থ্যকর্মীদের মানোন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে দেশ অনেকটাই পিছিয়ে আছে। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য সেবার প্রতি মানুষের আস্থার সংকট দূরীকরণে সরকারকে নানামুখী পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থার সংকট রয়েছে। এই অবস্থায় আমাদের চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেলিটি, এবং সর্বোপরি কোয়ালিটি আনতে হবে।

তিনি বলেন, এখনকার সময়ে আমাদের স্বাস্থ্য সেবার কোয়ালিটি কেমন, আপনারা সবাই জানেন। এটা নিয়ে এই মুহূর্তে আমি কিছু বলবো না। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে কোয়ালিটি ছাড়া শুধু কোয়ানটিটি দিয়ে আমরা আমাদের চিকিৎসা শাস্ত্রকে এগিয়ে নিতে পারবো না।

নজরুল ইসলাম বলেন, ডাক্তারি প্রফেশনটাকে বলা হয় নোবেল প্রফেশন। কিন্তু কেন? কারণ হলো, হিপোক্রেটিস নামক একজন চিকিৎসক ছিল, তার বাবা ছিলেন একজন ধর্মযাজক। তখন চিকিৎসা হতো ধর্মীয় উপাসনালয়ে, যারা যাজক তারাই চিকিৎসা করতো।

তিনি আরও বলেন, ভারতবর্ষে সনাতন ধর্মের একটি বই ছিলো, যার নাম হলো বেদ। এই ধর্মীয় গ্রন্থ বেদের সঙ্গে মিল রেখেই নামকরণ করা হয়েছিল আয়ুর্বেদের। তার মানে চিকিৎসাশাস্ত্রটাকে এতটাই উপরে রাখা হয়েছিল যে, তাদের কাছে ছিল ধর্মগ্রন্থের মত। এটাকে সনাতন ধর্মে চারটি বেদের পর পঞ্চম বেদ হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হতো। এখানেও চিকিৎসা হতো উপাসনালয়ে, মন্দিরে। সেখানেও চিকিৎসা করতেন ধর্মগুরুরা। এজন্যই এই কাজটিকে বলা হয় নোবেল প্রফেশন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন বলেন, বিএসএমএমইউতে সর্বপ্রথম ২০০০ সালে রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম শুরু হয়েছিল। এরপর একটি ব্যাচ চলার পর কোর্সটি বন্ধ হয়ে যায়, তবে পরবর্তীতে আবারো ২০১০ সালে শুরু হয়। তখন এই কোর্সের পেছনে আমাদের চিন্তা ছিলো যে, শুধুমাত্র বিএসএমএমইউতেই এটা সীমাবদ্ধ থাকবে। যে কারণে কোর্সের কারিকুলামগুলোও সেভাবেই তৈরি করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটা চিঠি আসলো, সেখানে বলা হলো- বাংলাদেশে অন্যান্য মেডিকেল কলেজগুলোতে যত পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স আছে, সবগুলোই বিএসএমএমইউর সাথে এফিলিয়েটেড (সংযুক্ত) থাকবে। কিন্তু মেডিকেল কলেজগুলোর সেই কোর্সগুলো ছিল নন রেসিডেন্সি। কিন্তু একটা ইউনিভার্সিটিতে রেসিডেন্সি এবং নন রেসিডেন্সি, দুই ধরনের কোর্সই থাকবে- এটা সে সময়ে আমাদের জন্য কঠিন ছিল। তাই পরবর্তীতে সবগুলোকেই মডিউল পরিবর্তন করে রেসিডেন্সিতে আনা হয়েছিল। এই কোর্সগুলো আনতে গিয়ে অনেক কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে।

ডা. রুহুল আমিন বলেন, সেই সময় আমাদের কোনো কারিকুলাম ছিল না। পরবর্তীতে কোর্স শুরু হয়ে যাওয়ার পর তাড়াহুড়া করে কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়। যে কারণে ওই কারিকুলামে স্বাভাবিকভাবেই অনেক ভুলভ্রান্তি ও সমস্যা আছে। এজন্য আমরা বলেছিলাম এর অধীনেই কোর্সগুলো চলতে থাকবে, তবে পর্যায়ক্রমে একটা সময়ে এটাকে আপগ্রেড করা হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এখন পর্যন্ত আমরা এই কোর্স কারিকুলামটি আপগ্রেড করতে পারিনি।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় নানা আনুষ্ঠানিকতায় বিএসএমএমইউ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম পুনর্মিলনী ২০২৩ অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে আছেন সিনিয়র সচিব এবং বিএসএমএমইউ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য জাকিয়া সুলতানা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছেন বিএসএমএমইউর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। 

টিআই/এমজে