বন্ধুসুলভ ও অনুকূল পরিবেশ পেলে অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা সমাজের বোঝা না হয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে, এমনকি তারা দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রতিটি অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশুর প্রতিভা ও সীমাবদ্ধতাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা জরুরি। তাদের একটি যথোপযোগী শিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে পারলে এরা বিশেষভাবে উপকৃত হতে পারে।

রোববার (৩ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষ্যে মুনফ্লাওয়ার অটিজম ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অটিজম রোগটির সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি। উন্নত দেশগুলোতে গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক গঠন, বৃদ্ধি বা ফাংশনের অস্বাভাবিকতার কারণে অটিজম হয়ে থাকে। জন্মের সময়, আগে বা পরে মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার ফলে অটিজম হতে পারে। জেনিটিক ফ্যাক্টরও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

মুনফ্লাওয়ার অটিজম ফাউন্ডেশনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মফিজুল ইসলাম বলেন, সন্তান লালনপালনে অভিভাবকের অবহেলা, অভিভাবকের মানসিক অবস্থা, আদর-স্নেহের অভাব থেকে অটিজম হতে পারে না। আবার পরিবারের আর্থিক অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতা বা জীবনযাপনের ধারার ওপর নির্ভর করে অটিজম হয় না। অটিজমের পেছনে পরিবেশজনিত কারণ যেমন– এমএমআর ভ্যাকসিন, খাবারের গ্লুটেন, ক্যাসিন, ক্যানডিডা এলবিকানস নামক ছত্রাক, বিষাক্ত কেমিক্যালকে (মার্কারি, কীটনাশক, শিল্পকারখানার বর্জ্য ইত্যাদিকে দায়ী করা হলেও বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় প্রমাণ করা যায়নি।

তিনি বলেন, অটিজমের কোনো যাদুকরী চিকিৎসা নেই। অটিজম ডায়াগনসিসের কোনো বায়োলজিক্যাল মার্কার বা মেডিকেল ডিটেকশন নেই। বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখে অটিজম শনাক্ত করা সম্ভব। আমেরিকান সাইকিয়্যাট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের ডিএসএম-৫ বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে অটিজম ডায়াগনসিস করা সম্ভব। অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশুর ডায়াগনসিস ও ইন্টারভেনশন যত ছোট বয়সে শুরু করা যায়, তত বেশি উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ইন্টারভেনশন বলতে শিশুর সঙ্গে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, তার উপযোগী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে বোঝায়।

মুনফ্লাওয়ার অটিজম ফাউন্ডেশনের এই কর্মকর্তা বলেন, অটিজম শিশুদের জন্য অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে পরিবার এবং সমাজে এসব শিশুদের গ্রহণযোগ্যতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সেই লক্ষ্যে মুনফ্লাওয়ার অটিজম ফাউন্ডেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ২০২২ সালে অভিভাবকদের সম্মিলিত উদ্যোগে মুনফ্লাওয়ার অটিজম ফাউন্ডেশন কার্যক্রম শুরু করলেও এই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ১৯৯৮ সাল থেকে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিদের উন্নয়নে বাংলাদেশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এর সঙ্গে আমাদের একদল দক্ষ ও দেশে-বিদেশে অটিজম বিষয়ে দীর্ঘদিনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জড়িত। অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশুদের প্রয়োজন, আগ্রহ ও দক্ষতাকে বিবেচনায় নিয়ে তারা যাতে ভবিষ্যতে আত্মনির্ভরশীল জীবনযাপন করতে পারে সে লক্ষ্যেই তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

মুনফ্লাওয়ার অটিজম ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমের বিষয়ে তিনি বলেন, মুনফ্লাওয়ার অটিজম ফাউন্ডেশন যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করছে তার মধ্যে রয়েছে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ, মূল্যায়ন এবং সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা প্রণয়ন, ঢাকার বাইরের অভিভাবকদের জন্য প্যাকেজ প্রোগ্রাম, হোম রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম, নিয়মিত অভিভাবক ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ, অকুপেশনাল ও সেনসরি প্রশিক্ষণ, ওয়ার্কশপ ও সেমিনার আয়োজন করা, জনসচেতনতা সৃষ্টি করা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কর্মরত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিদের কল্যাণে উপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, দরিদ্র ছাত্রদের জন্য যাকাত তহবিল ইত্যাদি।

সংস্থাটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে মফিজুল ইসলাম জানান, মুনফ্লাওয়ার অটিজম ফাউন্ডেশনের বেশ কিছু পরিকল্পান রয়েছে, যার মধ্যে রেসপাইট কেয়ার ও ডে-কেয়ার সার্ভিস চালু করা, ভবিষ্যৎ পুনর্বাসনের জন্য সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, অ্যাডভোকেসি, নীতি সংস্কার এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে অটিজম ও অন্যান্য বিশেষ ব্যক্তিদের অধিকার সমুন্নত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।

টিআই/এসএসএইচ