হঠাৎ দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ ও সাধারণ শয্যার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। দিনের পর দিন ঘুরেও হাসপাতালে আইসিইউ তো দূরের কথা সাধারণ বেড পেতেও ঘাম ঝরাতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটে অস্থায়ী আইসোলেশন সেন্টারটিতে কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরের কাজ চলছে।

প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০টি আইসিইউ ও ২৫০টি সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি করা হবে হাসপাতালটিতে। এটিকে ১৫০০ বেডের একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কাছে আরও ২৬ কোটি টাকার জরুরি তহবিল চেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সংশোধিত বাজেট অথবা করোনা তহবিল থেকে এ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

সোমবার (১২ এপ্রিল) অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি দিয়ে এ অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সুনীর কুমার পাল চিঠিতে খরচের বিভাজন তুলে দিয়ে বলেছেন, মহাখালী ডিএনসিসির মার্কেটটিকে বর্তমান করোনা পরিস্থিতি সংকট মোকাবিলায় ১৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে রূপান্তর করে বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ বরাদ্দ প্রয়োজন।

বরাদ্দের চিঠিতে ৩২টি খাতের খরচ দেখানো হয়েছে। এ জন্য সর্বমোট ২৫ কোটি ৯৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসা যন্ত্রপাতির কেনা বাবদ ১০ কোটি টাকা, আইসসোর্সিংয়ের জন্য ৬ কোটি, অক্সিজেন সরবরাহের জন্য দুই কোটি, বিদ্যুৎ খরচ বাবদ ২ কোটি ৫০ লাখ, পানির জন্য এক কোটি ৬০ লাখ, সম্মানী ভাতা ২ লাখ, অন্যান্য ভাতা ৩ লাখ, আপ্যায়ন ব্যয় ৩ লাখ, ইন্টারনেট ও ফ্যাক্স ১ লাখ, প্রচার ও বিজ্ঞাপন ৫০ হাজার, ভ্রমণ ব্যয় ৩ লাখ, চিকিৎসা ও সরঞ্জাম সরবরাহ ৭ লাখ এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের জন্য ৩০ লাখ টাকার ব্যয় দেখানো হয়েছে।

এছাড়াও আসবাবপত্র খাতে ২৫ লাখ টাকা, কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক ৭ লাখ, মোটরযান রক্ষণাবেক্ষণ ২ লাখ, নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ৫০ লাখসহ মোট ৩২টি খাতে এ খরচ দেখানো হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ প্রস্তাব যাচাই-বাছাই চলছে। যতদূর জানা গেছে, এটি নির্মাণ করতে এর আগে একবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সে টাকা কীভাবে খরচ হয়েছে তাও জানতে হবে। এ অস্থায়ী হাসপাতালের জন্য গত বছর বসুন্ধরায় নির্মিত হাসপাতালের অব্যবহৃত যন্ত্রপাতি দেওয়া হচ্ছে। তারপরও কেন এত খরচ দেখানো হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গত সপ্তাহে অস্থায়ী হাসপাতালে পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, অল্প সময়ের মধ্যেই মহাখালীর ডিএনসিসির বাজারের হাসপাতালে দুই শতাধিক আইসিইউ বেড এবং এক হাজার নতুন বিচ্ছিন্ন শয্যা যুক্ত করা হবে। তিনি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এটি উদ্বোধন করার প্রতিশ্রুতি দেন।

আগামী ২০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালটি চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন মহাখালী করোনা হাসপাতালের নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন। তিনি সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, এটা দেশের সবচেয়ে বড় কোভিড বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানে পরিপূর্ণ ১০০ শয্যার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও প্রায় সমমানের হাই ডিপেনডেনসি ইউনিট (এইচডিইউ) শয্যা থাকছে ১২২টি। এছাড়া সাধারণ শয্যা থাকছে প্রায় এক হাজার।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) ৫০টি আইসিইউ এবং ২৫০টি সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি শুরু করা যাবে। বাকিগুলোর কাজ চলতে থাকবে। চলতি মাসের শেষ দিকে পুরো হাসপাতালটি প্রস্তুত হয়ে যাবে পূর্ণাঙ্গ কোভিড বিশেষায়িত সেবার জন্য। এই হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ।

এই হাসপাতাল ভবনটি সিটি করপোরেশনের। হাসপাতালটির যন্ত্রপাতি, জনবলসহ অন্যান্য সরঞ্জাম দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অবকাঠামোগত প্রস্তুতির কাজ বাস্তবায়ন করে দিচ্ছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। আর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় থাকছে আর্মস ফোর্সেস মেডিকেল ডিভিশন। ৭০০ চিকিৎসকের জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং ৫০ জন এর মধ্যেই নিয়োগ পেয়েছেন।

এনএম/এফআর