অতিথি আপ্যায়ন নয়, এবার অগ্রাধিকার পেলেন রোগীরা
দিনব্যাপী নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। এবারের আয়োজনে আনুষ্ঠানিকতার চেয়ে মানবিকতাকেই প্রাধান্য দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
প্রতি বছরের মতো অতিথিদের জন্য জমকালো আপ্যায়নের বদলে এবার রোগী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অতিথিদের জন্য ছিল কেবল হালকা নাশতা। ব্যতিক্রমী এই সিদ্ধান্তে প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে সাধারণত বড় পরিসরে আপ্যায়নের আয়োজন করা হয়। গত বছর এ খাতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১৫ লাখ টাকা। তবে এবারের আয়োজক কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়— এ খরচ রোগীদের জন্য উন্নতমানের খাবারে অর্থ ব্যয় করা হবে।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এবং ২৮তম দিবস উদ্যাপন কমিটির সদস্য-সচিব অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা চেয়েছি বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অর্থ যেন সরাসরি মানুষের উপকারে আসে। তাই এবারের আপ্যায়ন বাজেট উৎসর্গ করা হয়েছে ভর্তি রোগী ও আহতদের খাবার উন্নয়নে।
এদিকে আপ্যায়নের খরচ কমিয়ে রোগীদের জন্য বিশেষ আয়োজনের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল ইসলাম এলিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন উপলক্ষ্যে একটা বিশাল বাজেট বরাদ্দ থাকে খাবারের পিছনে, এই খরচটি এবার ব্যয় করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব রোগী ভর্তি রয়েছেন, তাদের উন্নত খাবার দেওয়ার পেছনে। হয়তো এ ধরনের সংবাদ এতোটা ছড়াবে না, তবুও পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে থাকলাম। এমন সিদ্ধান্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, ছোট সিদ্ধান্ত হলেও এর সামাজিক বার্তা অনেক বড়। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস মানেই শুধু আলো ঝলমলে আয়োজন নয় বরং এদিনে মানুষের জন্য কিছু করা গেলে সেটিই প্রকৃত উদযাপন। এবারের আয়োজন ছিল সেই উদাহরণ।
আরও পড়ুন
ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস নামে আরেক চিকিৎসক ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোগীদের মুখে হাসি ফোটানোই যদি আমাদের দায়িত্ব হয়, তাহলে এ সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে একটি মানবিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পথে আমরা আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলাম।
ডা. আনিসুর রহমান নামে আরেক চিকিৎসক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএমইউর এবারের সিদ্ধান্ত প্রমাণ করেছে, উৎসব মানেই বাড়তি খরচ নয়— উৎসব হতে পারে দায়িত্বশীলতার মাধ্যমেও। হাসপাতালের একেকটি ওয়ার্ডে যখন রোগীরা উন্নত খাবার পাচ্ছিলেন, তখন প্রশাসনিক ভবনে ছিল আলোর সাজ, কিন্তু ব্যয়ের সংযম। এ সমন্বয় থেকেই জন্ম নিয়েছে এক নতুন উদাহরণ। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস মানে কেবল বক্তৃতা নয় বরং নীরব মানবিকতা।
স্টাফরাই উৎসাহ দিয়েছে : অধ্যাপক শাহিনুল আলম
এবারের আয়োজনে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছিল আপ্যায়নে। এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেই অর্থে রোগীদের উন্নতমানের খাবার দেব। বিষয়টি শুধু প্রশাসনের একক সিদ্ধান্ত নয় স্টাফরাও এতে সম্মতি ও উৎসাহ দিয়েছে। এমন সংহতি আমাদের সিদ্ধান্তকে আরও সহজ করেছে।
তিনি বলেন, এই অর্থনৈতিক সংযম শুধু টাকার সাশ্রয় নয় এটি একটি মূল্যবোধের প্রকাশ। রোগীদের সম্মান জানিয়ে যে মানবিকতা আমরা দেখিয়েছি, সেটাই এই দিবসের প্রকৃত শিক্ষা।
উপাচার্য অধ্যাপক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী মানেই শুধু আনন্দ নয় এটি দায়বদ্ধতারও উপলক্ষ্য। তাই এবার আমরা রোগী ও আন্দোলনে আহতদের উন্নত খাবার দিয়ে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। অতিথিদের আপ্যায়ন সীমিত করেছি, কারণ আমাদের মূল দায়িত্ব তো মানুষকে ঘিরেই। এই সংস্কৃতি যদি স্বাস্থ্যসেবার অন্যান্য ক্ষেত্রেও ছড়িয়ে পড়ে, তবে আমরা সত্যিকারের মানবিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর হবো।
আরও পড়ুন
বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন
বুধবার (৩০ এপ্রিল) ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সকাল থেকেই নানা আয়োজনে দিবসটি পালন শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
‘ইনোভেট, এডুকেট, এলিভেট ড্রিমস টু দ্য রিয়্যালিটি’ প্রতিপাদ্যে সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এরপর বের হয় একটি বর্ণাঢ্য র্যালি, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ব্লক থেকে শুরু হয়ে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল হয়ে সি ব্লকের সামনে এসে শেষ হয়। দুপুরে এ ব্লকের মিলনায়তনে আয়োজিত হয় মূল আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। সভা পরিচালনা করেন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম।
টিআই/এমজে