‘সহানুভূতি’র মুখোশে দালালি, ধরা খেলেন বেসরকারি হাসপাতালের স্টাফ!
সহানুভূতির মুখোশ পরে ‘রোগী পাচার’ করতে এসে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাতেনাতে ধরা খেলেন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী। আটক হওয়া ওই ব্যক্তির নাম আবদুল্লাহ আল নোমান। নিজেকে ধানমন্ডি আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের স্টাফ দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে রোগী হিসেবে চিকিৎসা নিতে এসেছি।’
রোববার (১৩ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বিভিন্ন অংশে র্যাবের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় ফাঁদ পেতে আব্দুল আল নোমানকে আটক করা হয় বলে জানায় র্যাবের একটি দল।
বিজ্ঞাপন
আটকের পর কারণ জানতে চাইলে নোমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি তো নিজে চিকিৎসা নিতে এসেছিলাম। পাশে একজন রোগী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বলেছি— যদি এখানে সিট না পান, তাহলে অন্য কোথাও দেখিয়ে নেন। এটাই কি দালালি?
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, র্যাবের নজরদারিতে ধরা পড়ার সময় নোমান এক রোগীর স্বজনকে নিচু গলায় ব্যস্ত হয়ে কিছু বুঝিয়ে বলছিলেন। সন্দেহ হলে র্যাব সদস্যরা কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরিচয় জানতে পেরে নিশ্চিত হন— তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালের স্টাফ এবং সে সময় সরকারি হাসপাতালে রোগী ‘ম্যানেজ’ করতেই এসেছেন।
বিজ্ঞাপন
একটি সূত্র জানায়, নোমানের মতো কিছু কর্মকর্তা নিয়মিত সরকারি হাসপাতালে এসে অসহায় রোগীদের প্রলুব্ধ করে বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার কাজ করেন। চিকিৎসা, অ্যাম্বুলেন্স বা সিটের অভাবে বিপাকে পড়া রোগীদের নানা কৌশলে নিজেদের দিকে নিয়ে যান তারা।
আরও পড়ুন
এসব প্রসঙ্গে নোমান বলেন, আমার সামনে হঠাৎ করে একজন অসুস্থ হয়ে পড়ে, তারপর আমি তাদের স্বজনদের বলেছি দেখেন এখানে সিট পান কি-না? অন্যথায় তাকে হৃদরোগে নিয়ে যেতে পারেন অথবা প্রাইভেট কোনো হাসপাতালে দেখাতে পারেন। জাস্ট এটুকু ইনফরমেশন শেয়ার করলাম। এরপরই একজন আমাকে ধরে নিয়ে আসছে। আমি তো এখানে দালালি করতে আসিনি, নিজে ডাক্তার দেখাতে আসছি।
তিনি দাবি করে বলেন, আমি আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে বিজনেস ডেভেলপমেন্টে চাকরি করি। আমার অফিসিয়াল ডিউটি। সুতরাং বাইরে আমাদের কোনো কাজ নেই। আমি শুধুমাত্র এখানে ডাক্তার দেখাতে এসেছি।
নিজে একটি হাসপাতালে কাজ করেও কেন এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলেন— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওখানে চিকিৎসা নিয়েছি। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ হইনি। ভাবলাম কোনো একটা সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে আসি। এজন্যই মূলত এই হাসপাতালে আসা।
র্যাব ২-এর অধিনায়ক অ্যাডিশনাল ডিআইজি মো. খালিদুল হক হাওলাদার জানান, সকাল ১০টা থেকে এই এলাকার চারটি প্রধান হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করি। এ সময় সরকারি হাসপাতালগুলো থেকে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে যারা সেবা নিতে আসে, একটি দালাল চক্র তাদেরকে বিভিন্নভাবে ফাঁদে ফেলে ক্লিনিকে ও বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। এভাবে অসংখ্য রোগী দালালদের কাছে সর্বস্বান্ত হয়ে আমাদের কাছে বিভিন্ন সময় অভিযোগ জানায়। এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই আমরা হাসপাতালগুলোতে নিয়মিত দালালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করি।
তিনি আরও বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা যেন দালাল চক্রের হাতে প্রতারিত না হয়, এজন্য আমরা আমাদের অভিযান অব্যাহত রাখব।
টিআই/এমজে