স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতা, আত্মপরীক্ষার গুরুত্ব ও প্রাথমিক শনাক্তকরণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশেষ সেমিনার। এতে অংশ নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিয়মিত আত্মপরীক্ষা ও ভয়মুক্তভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আমিনুল ইসলাম হলে এ সেমিনারের আয়োজন করে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথ বিভাগ, ‘আমরা নারী’ এবং সহযোগী সংগঠন ‘আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’।

অনুষ্ঠানে বক্তা ছিলেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মেডিকেল অনকোলজিস্ট ডা. জাহাঙ্গীর আলম এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন অধ্যাপক ডা. ইশরাত জাহান (ইলা)।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন পাবলিক হেলথ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. এবিএম আলাউদ্দিন চৌধুরী, স্ট্র্যাটেজি ও ইনোভেশনের উপদেষ্টা প্রফেসর গিয়াস উদ্দিন আহসানসহ অনেকে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ‘আমরা নারী’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়কারী এম এম জাহিদুর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘নারীদের নিজেদের শরীর সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। নিয়মিত আত্মপরীক্ষা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ভয় না পেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া– এই পদক্ষেপগুলোই স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। আমরা চাই, স্তন ক্যান্সার মৃত্যুর প্রতীক না হয়ে সচেতনতার প্রতীক হয়ে উঠুক।’

তিনি জানান, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে ৫০টি সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও ক্যাম্পেইনের আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে, যার মাধ্যমে নারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো হবে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, স্তন ক্যান্সার মূলত স্তনের কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির ফল। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ ও যথাযথ চিকিৎসা শুরু করলে এটি শতভাগ নিরাময়যোগ্য। সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ও আধুনিক ইমিউনোথেরাপির সমন্বিত চিকিৎসা বর্তমানে অত্যন্ত কার্যকর। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সচেতনতা, সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ এবং জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন।

গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৩ হাজার নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক মৃত্যুবরণ করেন প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত না হওয়ার কারণে। দেশের মোট ক্যান্সার রোগীর প্রায় এক-ষষ্ঠাংশই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত।

বক্তারা বলেন, বয়স, পরিবারে ক্যান্সারের ইতিহাস, হরমোনজনিত পরিবর্তন, ধূমপান-মদ্যপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক অনিয়ম স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত আত্মপরীক্ষা ও ম্যামোগ্রাম করানো এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

স্তনে নতুন কোনো গুটি, ত্বকের কোঁচকানো, বোঁটা থেকে অস্বাভাবিক স্রাব বা স্তনের আকারে পরিবর্তন দেখা দিলে তা বড় সতর্কবার্তা হতে পারে বলে সতর্ক করেন চিকিৎসকরা।

অনুষ্ঠান শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সচেতনতা-বর্ধক তথ্যপত্র বিতরণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জনস্বাস্থ্য ও নারীস্বাস্থ্য বিষয়ে ভবিষ্যতেও এমন সচেতনতামূলক আয়োজন অব্যাহত থাকবে।

টিআই/এসএসএইচ