অতিরিক্ত লবণ, চর্বি ও ট্রান্সফ্যাটসমৃদ্ধ প্রক্রিয়াজাত খাবারের সহজলভ্যতা এখন বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের বড় ঝুঁকি হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের শহরাঞ্চলে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় দ্রুতই বাড়ছে অস্বাস্থ্যকর উপাদান, যার ফলে উচ্চ রক্তচাপসহ নানা অসংক্রামক রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সচেতন খাদ্যাভ্যাসই হতে পারে এই সংকট থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত ‘খাদ্যাভ্যাস ও উচ্চ রক্তচাপ ঝুঁকি’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এই বিষয়ে সতর্ক করেন বক্তারা। আয়োজনে সহযোগিতা করে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, খাবারে অতিরিক্ত লবণ ও ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতি উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম নিয়ন্ত্রণযোগ্য ঝুঁকি। ২০১৭ সালে ফল ও শাকসবজি না খাওয়ার কারণে বিশ্বে প্রায় ৩৯ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুষম খাদ্যাভ্যাসে চিনি, চর্বি ও লবণের পরিমাণ কমিয়ে প্রতিদিনের খাবারে শাকসবজি ও ফল বাড়ালে এই মৃত্যুঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (খাদ্য শিল্প ও উৎপাদন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা বাস্তবায়নের পাশাপাশি বিএফএসএ ফ্রন্ট অব প্যাক লেবেলিং চালুর উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে ক্রেতারা খাবার কেনার আগে সহজেই বুঝতে পারেন কোন পণ্যে কতটা লবণ বা তেল রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিবিএইচসি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. গীতা রানী দেবী বলেন, উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে কমিউনিটি পর্যায় থেকেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস প্রচার শুরু করা জরুরি। এই বিষয়ে সমন্বিত নীতি ও অ্যাকশন প্ল্যান দরকার।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি এমন একটি ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যাতে প্রক্রিয়াজাত খাবারে উপাদানের মাত্রা স্পষ্টভাবে জানানো বাধ্যতামূলক হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম বলেন, শুধু খাদ্যাভ্যাস নয়, জীবনাচরণেও পরিবর্তন আনতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করলেই উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যায়।

ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে আরও ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার ও জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের এবং সঞ্চালনা করেন কোঅর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গবেষক, নীতিনির্ধারক, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ এই অনলাইন আয়োজনে অংশ নেন।

টিআই/এসএম