বিশ্বজুড়ে স্ট্রোক এখন নীরব মহামারি। প্রতি চারজনের একজন জীবনের কোনো না কোনো সময়ে স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ট্রোক হলে প্রতি মিনিটে প্রায় ১.৯ মিলিয়ন মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ নষ্ট হয়। অথচ দ্রুত চিকিৎসা—বিশেষত সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে সেবা পেলে রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা সম্ভব।

রোববার (২ নভেম্বর) বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অফিসের কনফারেন্স হলে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢামেক হাসপাতালের এন্ডোভাসকুলার ও স্ট্রোক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহেদুর রহমান শিকদার। তিনি বলেন, ‘স্ট্রোক দুই ধরনের—ইশকেমিক ও হিমোরেজিক। এর মধ্যে রক্তনালী বন্ধ হয়ে যে ইশকেমিক স্ট্রোক হয়, তা প্রায় ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, আর হিমোরেজিক স্ট্রোক ১৫ শতাংশ।’

তিনি আরও বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই মোট স্ট্রোকের ৮৯ শতাংশ ঘটে। প্রতি মিনিটে প্রায় ১.৯ মিলিয়ন নিউরন মারা যায়। তাই সময়ই এখানে জীবন। সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা গেলে রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব, আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করলে জীবন বাঁচানো যায়।

ডা. শাহেদুর রহমান মনে করেন, থেরাপি এবং সময়মতো চিকিৎসা পেলে স্ট্রোক রোগীদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো সম্ভব। তবে এর জন্য পর্যাপ্ত স্ট্রোক ইউনিট প্রতিষ্ঠা জরুরি। তিনি বলেন, স্ট্রোক ইউনিট ছাড়া সফল চিকিৎসা শতভাগ সম্ভব হয় না।

চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে সরকারি সহায়তার ওপর জোর দিয়ে তিনি আরও বলেন, রোগীদের খরচ কমানো ও চিকিৎসার মান নিশ্চিত করতে সরকারকে এখনই আরও সক্রিয় হতে হবে।

সভায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক ডা. ফজলে এলাহী মিলাদ বলেন, অসংক্রামক রোগের ওষুধ বন্ধ করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই সুশৃঙ্খল জীবনযাপন এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার বর্জনের ওপর তিনি গুরুত্ব দেন।

ঢামেকের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, সব রোগীর সার্জারি সম্ভব হয় না, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে। তাদের ফিজিক্যাল ট্রিটমেন্টই সবচেয়ে কার্যকর পথ।

এ সময় বক্তারা স্ট্রোক চিকিৎসায় বিশেষ হটলাইন চালু এবং স্ট্রোক অ্যাম্বুলেন্স সেবা শুরু করার পরামর্শ দেন।

প্রসঙ্গত, চিকিৎসা শিক্ষার বৈশ্বিক স্বীকৃতির (অ্যাক্রেডিটেশন) কার্যক্রম চলমান থাকায় নির্ধারিত সময়ে ২৯ অক্টোবর দিবসটি পালিত হয়নি। এর পরিবর্তে চার দিন পর আজ সচেতনতামূলক এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢামেকের নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আসাদুজ্জামান। সঞ্চালনা করেন নিউরোসার্জারি বিভাগের ডা. সুজন শরীফ।

টিআই/এমএন