এনগেজিং পলিসি মেকারস ফর এচিভিং ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার

বাংলাদেশে দিন দিন হৃদরোগ, কিডনিরোগ, ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দীর্ঘমেয়াদী এসব রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় নিম্নবিত্ত মানুষ পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেকে রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সহায়-সম্বল হারিয়ে দরিদ্রসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ধনী-গরীব নির্বিশেষে দেশের সব মানুষের জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বা ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর দি ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত ‘এনগেজিং পলিসি মেকারস ফর এচিভিং ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে বক্তারা একথা বলেন। 

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি, কিডনি ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ সেমিনার আয়োজন করে। সেমিনার থেকে বাংলাদেশে ইউএইচসি বাস্তবায়ন এবং অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি ফোরাম গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ ভাগের পেছনে দায়ী অসংক্রামক রোগ। এসব সমস্যার সমাধান করতে এবং সবার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বা ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার মূল কথাই হচ্ছে, সবার জন্য মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি এবং চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে কেউ যাতে দরিদ্র হয়ে না পড়ে সেটা নিশ্চিত করা।

বক্তারা একই সঙ্গে এসব রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি রোগগুলো প্রতিরোধে গুরুত্বারোপের কথা বলেন। তারা বলেন, দীর্ঘমেয়াদে রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে তা রাষ্ট্রের জন্য বেশি লাভজনক হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় আইন ও নীতিমালা, যেমন: তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে লবণ ও ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, কায়িক পরিশ্রমের বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির দিকেও নজর দিতে হবে।

সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবসকে সামনে রেখে এ ধরনের আয়োজন খুবই প্রয়োজনীয়। এ উদ্যোগ স্বাস্থ্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে এ সেমিনার থেকে যে পরামর্শ আসবে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

সেমিনার উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। অনুষ্ঠানে তার বাণী পড়ে শোনান অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের পারস্পরিক অভিজ্ঞতা এবং মতবিনিময়ের ফলে অংশগ্রহণকারীদের পেশাগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অনেকাংশে বাড়বে। আমি আশা করি, এ আয়োজন সরকারের স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচিকে এগিয়ে নিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

সেমিনারে ভার্চুয়ালি আরও যুক্ত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান, কিডনি ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশীদ, আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক আকতার হোসেন, আইসিডিডিআরবি’র নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জেষ্ঠ্য সচিব আসাদুল ইসলাম এবং ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক মিস বন্দনা শাহ।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল (রিজভী)। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. এটি নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ মূল প্রবন্ধে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বাস্তবায়নের প্রয়োজনীতা তুলে ধরেন। 

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত বলেন, সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণের ফলে বাংলাদেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে যাবে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে আরও কাজ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সেই সঙ্গে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। তিনি বলেন, বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী করতে হবে। তামাকের ওপর শুল্ক এমনভাবে বাড়াতে হবে যাতে তা তরুণদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুসারে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে একটি রোডম্যাপ তৈরি করে সারাদেশে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া দরকার।

অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যদের মধ্যে আ স ম ফিরোজ, শিরীন আখতার, বেগম মেহের আফরোজ চুমকি, নাহিম রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি, শবনম জাহান, আরমা দত্ত, নাহিদ ইজাহার খান, অপরাজিতা হক, সৈয়দা রুবিনা আক্তার মিরা এবং আদিবা আনজুম মিতা উপস্থিত ছিলেন।

টিআই/এসএম