বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় আসছে ‘সোনার হরিণ’
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় বিমান নামবে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে দেওয়া ২০ লাখ ডোজ টিকা। পরে দুপুরে পদ্মায় আনুষ্ঠানিকভাবে এসব টিকা হস্তান্তর করা হবে।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাজ্জাদ ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ভারত সরকারের দেওয়া করোনা ভ্যাকসিন কাল (বৃহস্পতিবার) এয়ার ইন্ডিয়ার একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে করে বেলা সাড়ে ১১টায় বিমানবন্দরে ল্যান্ড করবে। তারপর সেখান থেকে ৮ নম্বর গেট দিয়ে সরাসরি ফ্রিজারের মাধ্যমে তেজগাঁও হেলথ কমপ্লেক্সের ইপিআই সেন্টারে চলে যাবে।
দুই লাখ ভায়েলে করে ২০ লাখ টিকা আসবে। প্রতিটি ভায়েলে টিকা থাকবে ১০ ডোজ করে। পরে দুপুরে পদ্মায় আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে।
ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা
বিজ্ঞাপন
বেসরকারিভাবেও টিকা আসবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি কাল বেসরকারি পর্যায়েও কিছু টিকা আসবে। ১৫ লাখ ডোজ আসাার ব্যাপারে শুনেছি। তবে ওটার দায়িত্ব আমাদের নয়। বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ সরাসরি এ টিকা গ্রহণ করবে।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে জানান, দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী টিকা হস্তান্তর করবেন।
এর আগে বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, টিকা আসার পরপরই ভ্যাকসিন কর্মসূচি শুরু করে দেওয়া হবে।
ভুটান দিয়ে ভারতের টিকা রপ্তানি শুরু
প্রতিবেশী দেশ ভুটানে বুধবার করোনা টিকার প্রথম চালান পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে মাধ্যমে ভারতের টিকা রপ্তানি তথা কথিত টিকা কূটনীতির গোড়াপত্তন হলো।
করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু করার মাধ্যমে মহামারি এ ভাইরাসের লাগাম টেনে ধরার প্রত্যাশায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকা উৎপাদক দেশ ভারতের ওপর নির্ভর করছে অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের ‘টিকাভাগ্য’।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানায়, ‘মালদ্বীপ, বাংলাদেশ, নেপাল, মিয়ানমার ও সিসেলিসে টিকা রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও মরিশাস।’
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, প্রতিবেশী সবগুলো দেশেই ভারত অক্সফোর্ডের তৈরি টিকা পাঠাচ্ছে। ভারত-বায়োটেকের টিকা শুধুমাত্র দেশেই ব্যবহার করা হচ্ছে। বুধবার ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী কিছুদিনের মধ্যেই ভারতে টিকাদান কেন্দ্রের সংখ্যা অনেক গুণ বাড়ানো হবে। এ মুহূর্তে ভারতে মোট টিকা দেওয়ার কেন্দ্র তিন হাজার ষাটটি। দিনে গড়ে একশোজন প্রতিটি সেন্টারে টিকা নিতে পারেন। এ সংখ্যাটাই কয়েকগুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২৫ জনকে দিয়ে শুরু হবে দেশে টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম
স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, সর্বপ্রথম পরীক্ষামূলকভাবে বাছাই করা স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিকসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মোট ২০ থেকে ২৫ সদস্যকে এ টিকা দেওয়া হবে। অনলাইনের মাধ্যমে রাজধানীর কুর্মিটোলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা প্রয়োগ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ২৭ বা ২৮ জানুয়ারি ২০ থেকে ২৫ জনকে দেওয়ার মাধ্যমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হবে। এরপর চারটি হাসপাতালে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে।
নির্ধারিত এ হাসপাতালগুলো হলো- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল।
স্বাস্থ্য সচিব বলেন, ২১ জানুয়ারি দুপুর দেড়টায় এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে ভারতের উপহার হিসেবে দেওয়া ২০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশে আসবে। বিমানবন্দর থেকে টিকাগুলো সরাসরি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নেওয়া হবে। টিকাগুলো রিসিভ করে কোল্ড স্টোরে রাখা হবে।
টিকা পাচ্ছে না বেসরকারি হাসপাতাল
স্বাস্থ্য সচিব বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে আমরা আপাতত টিকা দিচ্ছি না। প্রথম ধাপে শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতালে এ টিকা দেওয়া হবে। প্রতিটি ভ্যাকসিন টিমে ২ জন ভ্যাকসিনেটর এবং নার্স, স্যাকমোসহ ৪ জন স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। এ টিমগুলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখবে। তাদের এসব বিষয়ে আমরা প্রশিক্ষণ দেবো।
আবদুল মান্নান বলেন, হাসপাতালের বাইরে কোনো টিকা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে না। কারণ এটি নতুন টিকা, বাইরে প্রয়োগ করলে কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা হাসপাতাল সুবিধা দিতে পারবো না। আর সেসব কারণেই হাসপাতালের বাইরে কোনো টিকা কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে না।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে যা করা হবে
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, টিকা দেওয়ার পর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে অনাস্থা দূর করার জন্য গণমাধ্যমকে ভূমিকা রাখতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অহেতুক গুজব, ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি না করার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, টিকা নেওয়ার পরে গ্রহীতাদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করার জন্য চিকিৎসক নিয়োজিত থাকবে। তাদের টিকা দেওয়ার পর দশ থেকে পনের মিনিট পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তাদের সবাইকে টেলিমেডিসিনের আওতায় নেওয়া হবে জানিয়ে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, যেহেতু মানুষ জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে অনলাইনে অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধন করে টিকা গ্রহণ করবে, সে ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিন সেবা দিতে অসুবিধা হবে না।
টিআই/এসএম